চীনাবাদাম চাষ পদ্ধতি। Peanut Farming :
চীনাবাদামের বিজ্ঞানসম্মত নাম - Arachis hypogaea . আমাদের দেশে চীনাবাদাম সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তৈলবীজ এবং এই ফসলে প্রচুর পরিমাণে প্রােটিন আছে। চীনাবাদাম খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং এটি একটি অর্থকরী ফসল। এতে শতকরা ২৫-৩০ ভাগ প্রােটিন, ১৫-২০ কার্বোহাইড্রেট, ৪৫-৫০ ভাগ তেল, ২-৩ ভাগ আঁশ এবং ৭-৮ ভাগ জল থাকে। এছাড়াও এর দানায় ভাল পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং খাদ্যপ্রাণ-‘এ’ ও ‘বি’ আছে। বাদাম তেল, বনস্পতি বা উদ্ভিদজাত ঘি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়। চীনাবাদাম আবার কাচা ও ভেজেও খাওয়া যায়। এছাড়া চানাচুর, সিঙ্গাড়া, ভেজিটেবিল চপ, সলটেড বাদাম এবং অন্যান্য খাদ্যেও চীনাবাদাম ব্যবহৃত হয়। সাবান, সুগন্ধি দ্রব্য, মােম, ওষুধ প্রভৃতি তৈরীর জন্যও চীনাবাদামের তেল ব্যবহৃত করা হয়। আলাে জ্বালাবার কাজেও এ তেল ব্যবহার করা যায়। লুচি ও কচুড়ি ভাজার জন্যও এ তেল বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। এই বাদামের খােল গবাদি পশুর পুষ্টিকর খাদ্য এবং জমির সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর খােলে শতকরা ৭.৩ ভাগ। নাইট্রোজেন, ১.৫-১.৮ ভাগ ফসফরাস এবং ১.৫-১.৮ ভাগ পটাশিয়াম থাকে। পরিশেষে বাদামের খােসা জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এর থেকেই বােঝা যায় যে, চীনাবাদামের ব্যবহার ব্যাপক।
এ ছাড়া বাদামের খােসা থেকে বাের্ড, অ্যালকোহল, এসিটোন ইত্যাদি তৈরী করা হয়।এ গাছ গবাদিপশুকেও খাওয়ানাে হয়। শস্য হিসেবে চীনাবাদাম চাষ করলে ভূমিক্ষয় রােধ করা যায় এবং এর ফলে মাটির উর্বরতা বেড়ে যায় চীনাবাদামের আদি জন্মস্থান সম্ভবত দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে এবং সম্ভবত চীন দেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে চীনাবাদাম আমদানী করা হয়। এজন্যেই আমাদের দেশে এর নাম চীনাবাদাম দেওয়া হয়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, ভারতের প্রায় সর্বত্রই এর চাষ হয়। তবে এর সিংহভাগই অন্ধপ্রদেশ, মুম্বাই, তামিল নাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চল, এবং মহীশূরে চাষ করা হয়। আর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ইত্যাদি জেলার উঁচু লাল ও কাকুড়ে মাটিতে ধানের পরিবর্তে লাভজনক ভাবে চীনাবাদামের চাষ করা হয়।চীনাবাদামের প্রােটিন সহজেই হজম হয় এবং প্রায় দুধ, ডিম ও মাংসের মতােই পুষ্টিকর।চীনাবাদাম উৎপাদনে ভারতের স্থান প্রথম।চীনাবাদাম চাষের সম্পূর্ণ পদ্ধতি ও রোগ পোকা দমনের উপায় সমূহ আলোচনা আপনারা এখানে পাবেন। আসুন বিস্তারিত জেনেনিন।
চীনাবাদাম চাষে প্রয়োজনীয় জলবায়ু।
চীনাবাদাম ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে চাষ হয়। উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু এই ফসলের চাষের পক্ষে অনুকূল।৭০-৮০° ফারেনহাইট (২১-২৬.৬° সেলসিয়াস) তাপ মাত্রায় চীনাবাদামের উৎপাদন ভাল হয়। চীনাবাদামের অঙ্কুরােদগম ও বৃদ্ধির সময় উপযুক্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হলে গাছের বৃদ্ধিলাভ ঠিক মতাে হয় এবং ফলনও বাড়ে। চীনাবাদাম গাছ জমা জল, তুষারপাত ও অনাবৃষ্টি সহ্য করতে পারে না।
চীনাবাদাম চাষে প্রয়োজনীয় মাটি।
জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা আছে এমন দোঁয়াশ মাটিতে চীনেবাদাম চাষ করতে হবে, এরকম জমি চাষের পক্ষে খুবই উপযােগী কারণ বালি-মাটিতে চীনেবাদামের ফলন ভাল হয়। হাল্কামাটিতে এর খােসা খুবই পাতলা হয় এবং বাদামের রঙ বেশ ভাল হয়।
আবার এঁটেল মাটির ফসলের ক্ষেত্রে এর ঠিক উল্টোটা হয়। এঁটেল মাটিতে চীনাবাদামের খােসা পুরু এবং বাদামের রঙ বেশ কালচে হয়। মাটির পি. এইচ ৫.৬-৬.৭ এর মধ্যে থাকলে এর ফলন ভাল হয়।
চিনাবাদামের বিভিন্ন প্রকার জাত :
চীনাবাদাম দু'রকম জাতের হয়ে থাকে। যেমন খাড়া বা গােছা জাতীয় এবং লতানাে বা ছড়ানাে জাতীয়।(১) গােছা জাতীয় চীনাবাদাম :- বি-৩০, বি-৩১ (এই জাতদুটি বহরমপুর তৈলবীজ কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত, ১২৫ - ১৩০ দিনে এর ফসল পাকে), টি. এম-ভি-২ (জলদি জাত, ১০৫-১১০ দিনে পাকে, এর দানা অন্য জাতের তুলনায় সামান্য একটু ছােট এবং হাল্কা গােলাপী রঙের এবং দানায় শতকরা ৫০ শতাংশ তেল থাকে), টি-এম-ডি-৭ (এর দানা ১০৫-১১০ দিনে পাকে, খরা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে, দানায় ৪৯-৫০ শতাংশ তেল থাকে), এইচ-জি-৮ (এর দানা ৯৫-১০০ দিনে পেকে যায়, দানা লাল রঙের হয়, এবং এর দানায় ৭-৪৮ শতাংশ তেল থাকে) পােলাচি-১, (১০৫-১৬০ দিনে পাকে, দানা মাঝারি আকারের হয়, এর দানা থেকে ৪৫-৪৬ শতাংশ তেল থাকে এ জাতের বাদাম মাটির নিচে মূল শিকড়ের চারপাশে গােছা বা থােকা হয়ে ফলে, ফল তাড়াতাড়ি ফলে এবং সঙ্গে সঙ্গে কল বেরােয়), স্ক্যানিশ ইমপ্রুভও (১০০-১১০ দিনে পাকে), এর দানা থেকে শতকরা ৪৮-৪৯ তেল বেরােয়), জে-১১ (১০৫-১১০ দিনে পাকে, দানা মাঝারি, এর দানা থেকে ৪৯-৫০ শতাংশ তেল পাওয়া যায়), স্প্যানিশ ইমপ্রুভও, গঙ্গাপুরী, গিরননার-১, আই-ডি-এস-৪৪ ইত্যাদি জীবগুলােও চাষের উপযােগী।
(২) লতানে জাতীয় :- একোনাে হাইব্রিড (১৫০-১৬০ দিনে পাকে, এর রঙ বাদামী, দানা মাঝারি, গােটা বাদাম থেকে দানার পরিমাণ ৬৫-৭০ শতাংশ এবং দানান থেকে পাওয়া তেলের পরিমাণ ৪৯ শতাংশ (খারিফ খন্দে হাল্কা মাটির উপযােগী জাত), এ-কে-১২-২৪ (১৫০-১৬০ দিনে পাকে, মাঝারী ও হাল্কা গােলাপী রঙের দানা, গােটা বাদাম থেকে দানা।পাওয়া যায় ৭০-৭৫ শতাংশ, পাকার দেড়-দুমাস পরে অঙ্কুরােদগম ক্ষমতা লাভ করে অধিক বৃষ্টিপাতের অঞ্চলে এ জাত চাষ করা যেতে পারে), টি-এস-ডি ১ (১৩৫-১৪০ দিনে পাকে, এর দানা বেশ বড়, রঙ গােলাপী থেকে বাদামী রঙের, খারিফ ঋতুতে এটি চাষের উপযােগী জাত, এর দানায় শতকরা ৫৩ ভাগ তেল থাকে) এবং টি-এস-ভি ৩ (১৩৫-১৪০ দিনে পাকে, দানা বড় হয়, রঙ গােলাপী, গােটা বাদাম থেকে দানার পরিমাণ ৭৮ শতাংশ।এই দানায় শতকরা ৫৩ ভাগ তেল থাকে), এছাড়াও জে-এল-২৪ বীজও আছে।
চীনাবাদাম চাষে জমি তৈরীর পদ্ধতি ।
চীনাবাদাম তৈরীর জন্য মাটি খুব ঝুরঝুরে এবং অনেক নিচু পর্যন্ত মাটি খুঁড়তে হয় এই কারণে যে, ফুল মাটির ওপরে ফোটে এবং গর্ভাধানের পর বৃন্তটি লম্বা হয়ে যায় এবং গর্ভাশয়টি ছুঁচলাে আকার ধারণ করে মাটির নিচে চলে যায় এবং সেখানে পরিপুষ্ট হয়ে ফলে পরিণত হয়। চাষের জমিতে ৭-৮ বার আড়াআড়ি এবং লম্বালম্বি কৰ্ষণ ও মই দিয়ে ভালভাবে জমি তৈরী করে নিতে হবে। মাটি ঝুরঝুরে ও আলগা হলে বাদামের আকার বেশ বড় হয়, স্বভাবতই ফলনও বেশি হয়।প্রতি একরে ৮-১০ গাড়ি গােবর সার মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
চীনাবাদাম চাষে বীজ বপন প্রণালী :
১। বীজ বপনের সময় :- খারিফ, প্রাক-খারিফ ও রবি খন্দে চীনাবাদামের চাষ হয়।খরিফে বৈশাখ থেকে আষাঢ়, প্রাক-খারিফে মাঘ থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত এবং রবিতে কার্তিকের শেষ সপ্তাহ থেকে অগ্রহায়ণ, এই সময়ই বীজ বােনার উপযুক্ত সময়।২। বীজ শােধন :- বীজ লাগাবার এক সপ্তাহ আগে খােসা ছাড়ানাে বীজ শােধন করে নিতে হবে। প্রতি কিলােগ্রাম বীজে তিন গ্রাম হিসেবে থাইরাস বা ক্যাপটান বা ডাইথেন এম-৪৫ মিশিয়ে শােধন করে নিতে হবে। বীজের সঙ্গে রাইজোবিয়াম কালচার মিশিয়ে বুনলে ফলন অধিক মাত্রায় বেড়ে যায়।
৩। বীজের পরিমাণ :- চীনাবাদামের জাত দেখে সেই মতাে গাছের ব্যবধান এবং একর প্রতি বীজের পরিমাণের তারতম্য ঘটাতে হয়। যেমন :
গােছা জাতীয় চীনাবাদামের একর প্রতি বীজের পরিমাণ ৪০ কেজি।চারার সারির দূরত্ব ৩০-৪৫ সেন্টিমিটার।গাছের দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার।
গােছা জাতীয় চীনাবাদামের একর প্রতি বীজের পরিমাণ ৪০ কেজি।চারার সারির দূরত্ব ৩০-৪৫ সেন্টিমিটার।গাছের দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার।
লতানে জাতীয় চীনাবাদামের একর প্রতি বীজের পরিমাণ ৩৩-৩৫ কেজি।চারার সারির দূরত্ব ৫৫-৬০ সে মি।গাছের দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার।
৪। বীজ বােনার পদ্ধতি :- চীনাবাদাম একক শস্য হিসেবে এবং ধান, অড়হর, ভুট্টা ও জোয়ারের সঙ্গে মিশ্র ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। বীজ দুরকমভাবে বােনা যায়, হাতে পুঁতে এবং লাঙল দিয়ে তৈরী নালায় বােনা যায়। আবার বীজ বােনার যন্ত্র দিয়েও এই বীজ বােনা যায়। বীজ দু ইঞ্চি (৫ সেমি) গভীরে বুনে মাটি চাপা দিয়ে দিতে হবে।
চীনাবাদাম চাষে সার প্রয়ােগ পদ্ধতি :
সব শস্যেরই ফসল ভাল লাভের জন্য ভাল রকম সারও প্রয়ােগ করতে হয়। এক্ষেত্রেও চীনাবাদামের ভাল ফলন পাওয়ার জন্য প্রতি একরে ৬ কেজি নাইট্রোজেন, ১২ কেজি ফসফরাস এবং ১৮ কেজি পটাশিয়াম প্রয়ােগ করতে হবে। চীনাবাদামে বােরাকসের প্রয়ােজন। এর জন্য প্রতি একরে ৫ কেজি বােরাকস দিতে হবে।
চীনাবাদাম চাষে পরিচর্যা :
জমির পরিচর্যার ওপর প্রতি ফসলের কমবেশি অনেকখানি নির্ভর করে।চীনাবাদামের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় না। প্রাথমিক পরিচর্যার কাজ হলাে, জমি আগাছা মুক্ত করতে হবে, মাটি নরম ও ঝুরঝুরে রাখতে হবে। এর জন্য বীজ থেকে অঙ্কুরােদগম হওয়ার দু-সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা বিদার সাহায্যে জমির আগাছা পরিষ্কার ও মাটির রস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের ভিতরের আগাছা হাত নিড়ানীর সাহায্যে উপড়ে ফেলতে হবে। সাধারণত বীজ বপনের ৪/৫ সপ্তাহ পরে গাছে ফুল ধরতে শুরু করে, তখন গাছের গােড়ায় মাটি দিয়ে ভেড়ি বেঁধে দিতে হবে। এরপর চীনাবাদামের জমিতে আর কোনাে নিড়েন দেওয়া চলবে না। রাসায়নিক ওষুধ প্রয়ােগ করেও সহজেই আগাছা ধ্বংস করা যায়। ২০০ লিটার জলে দু লিটার ল্যাসাে বা টক-ই ২৫ গুলে বীজ লাগানাের দু'দিনের মধ্যে প্রয়ােগ করলে জমি আগাছামুক্ত করা যায়।
চীনাবাদাম চাষে জলসেচ পদ্ধতি।
কিছু ফসলের চাষে জলসেচের প্রয়ােজন হয় না, যেমন খরিফ খন্দে ঠিকমতাে বৃষ্টিপাত হলে জলসেচের দরকার হয় না। কিন্তু বৃষ্টি যদি না হয়, তাহলে ২৫-৩০ দিনের ব্যবধানে সচ দেওয়া প্রয়ােজন। সেচের সুব্যবস্থা থাকলে রবি মরসুমে মাটি বা গ্রীষ্মে লাভজনক ভাবে চীনাবাদাম চাষ করা যায়। রবি মরসুমে মাটি ও ফসলের অবস্থা অনুসারে ৭-৮ বার সেচ দেওয়া প্রয়ােজন।
পোকা ও রোগ থেকে চীনাবাদাম শস্য রক্ষার করণীয় উপায়।
চীনাবাদামে পােকার উপদ্রব হয়। উই ও লাল বিছা পােকাই বেশি। উই পােকা প্রতিরােধের জন্য জমি তৈরি করার সময় একর প্রতি ৮ কেজি কারবারিল ১০ শতাংশ বা ৪-৫ কেজি ইথাইল প্যারাথিয়ন ৪ শতাংশ, যেমন ফলিডল, একাটকস ইত্যাদি প্রয়ােগ করতে হবে।বাড়ন্ত ফসল উই দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতি লিটার জলে দেড় মিলিলিটার ক্লোরােপাইরিফস ২০ ই-সি গুলে জমিতে স্প্রে করতে হবে।
আর লাল বিছা পােকা দমনের জন্যে প্রতি লিটার জলে দু মিলিলিটার এন্ডােসালফান্ ৩৫ ই-সি, যেমন থায়ােডান বা দু মি. লি. ডাইমেথয়েড ৩০ ই-সি যেমন রােগর বা দেড় মি. লি. মিথাইল ডেমিটন-২৫ ই-সি, যেমন মেটাসিসটকস বা দেড় মি. লি. মনােক্রোটোফস-৩৬ এস-এল, যেমন মনােসিল,নুভাক্রন গুলে গাছে ছেটাতে হবে।
রােগ :- চীনাবাদামের পাতায় দানা ধরা রােগ (টিক্কা রােগ) দেখা যায়। এ রােগে গাছের পাতায় গাঢ় বাদামী থেকে কালাে দাগ দেখা যায়। এ রােগ কাণ্ডের ওপরেও বিস্তার লাভ করে। আক্রান্ত পাতাগুলাে ঝুলে পড়ে। ৩/৪ সপ্তাহের গাছে সাধারণত এ রােগ দেখা যায়।এ রােগে আক্রান্ত গাছের শস্যের খুবই ক্ষতি হয়।চীনাবাদামের শেকড় পচা রােগে যে কোনাে বয়েসের গাছ আক্রান্ত হয়। এ রােগে আক্রান্ত চারাগুলাের গােড়া পচে যায়। এর ফলে পাতাগুলাের রঙ হাল্কা সবুজ হয়ে যায়, পাতাগুলাে নেতিয়ে পড়ে এবং পরে গােটা গাছটাই নেতিয়ে পড়ে। এ রােগের হাত থেকে রেহাই পেতে বীজ শােধন করার পর বপন করতে হবে। এছাড়াও রােগ শুরুতে ধরা পড়লে প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি, যেমন ব্লাইটকম, ফাইটোলান গুলে ১৫ দিনের ব্যবধানে গাছে ছিটালে এ রােগের উপশম হতে পারে।
ফসল কাটার পদ্ধতি।
জাত ভেদে চীনাবাদাম পাকতে ৯০-১৬০ দিন সময় লেগে যায়। এদিকে লতানে জাতের গাছগুলাের নিচের পাতা হলদেটে রঙের হয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়তে শুরু করলে বাদাম তােলা উচিত। আবার গােজা জাতের পাতা অনেক দেরীতে হলদে রঙের হয়। তাই বীজ বােনার ১১০-১২০ দিনের পর জমির চার-পাঁচ জায়গা থেকে বাদাম মাটি থেকে তুলে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। বাদাম তােলার সময় বুঝতে পারা বেশ সহজ অল্প চাপে বাদামের খােসা ভেঙে গেলে খোসার ভেতরের শিরাগুলােয় কালাে রঙ ধরলে এবং বীজের ওপরের পাতলা আবরণটিতে বাদামী রঙ ধরলে বুঝে নিতে হবে যে, সময়টা ফসল তােলার উপযুক্ত। মনে রাখবেন, বাদাম ঠিক মতাে পরিপুষ্ট যতক্ষণ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফসল কোনােভাবেই তােলা উচিত নয়। কারণ এতে ফলন কম হয়, আবার এরকম বাদাম বেশিদিন মজুত করেও রাখা যায় না।
হাল্কা ঝুরঝুরে মাটি থেকে গুচ্ছ জাতের বাদাম গাছ হাত দিয়ে টেনে উপড়ে তােলা যায়। আর অন্যসব মাটিতে কোদাল বা লাঙল দিয়ে মাটি খুঁড়ে বাদাম তুলতে হয়। বাদাম তােলার দু-একদিন আগে গাছগুলােকে গোড়া থেকে কেটে জমি থেকে সরিয়ে দিতে হবে।মাটি শক্ত হলে বাদাম তােলার আগে একবার হাল্কা সেচ দিলে মাটি আলগা হয়ে যায় এবং তাতে ফসল তােলার পক্ষে সুবিধে হয়। মাটি থেকে বাদাম তােলার পর পাঁচ-ছয় দিন পর্যন্ত বাদাম ছায়ায় শুকোবার পর রােদে দিয়ে গােলায় তুলতে হয়।
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....