Type Here to Get Search Results !

আধুনিক পদ্ধতিতে পটল চাষ করুন। সর্বাধিক লাভ বা অর্থ উপার্জন করুন। Pointed Gourd Farming in Bengali.

পটল চাষ পদ্ধতি। Pointed Gourd Farming :

সবজি হিসেবে পটলের ব্যবহার আমাদের দেশে প্রায় অনেক জায়গায়। পটল ভাজা, পটলের ডালনা এবং পটলের দোরমা (মাছ/মাংস বা নিরামিষ সবজি বা ডলের পুর দিয়ে) খুবই সুস্বাদু খাবার।পটল এর  বিজ্ঞানসম্মত নাম - Trichosanthes dioica Roxb. আয়ুর্বেদ মতে, পটল রক্ত পরিশুদ্ধ করে। ফলে ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়। তাই সবজির বাজারে পটল-এর  ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।এজন্য পটল চাষ সবথেকে লাভজনক। তবে এই চাষ করে সফল হতে হলে এই চাষ সম্পর্কে আগে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। পটল চাষের সমস্ত বিষয় আপনি এখান থেকে জানতে পারবেন।

আধুনিক পদ্ধতিতে পটল চাষ করুন। সর্বাধিক  লাভ বা অর্থ উপার্জন করুন। Pointed Gourd Farming in Bengali.
Image by Nandalal Sarkar from Pixabay 

পটলের বিভিন্ন জাত :

পটলের বুনোজাত সারা উত্তর-পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে রয়েছে। খুব একটা উন্নত জাতের পটল এখনও প্রচলিত হয়নি। এখন সাধারণত লতা মুম্বাই (V/1), কাজলী (V/2,), আমড়া ঝাটি (V/3), ঘুঘুট মুম্বাই (V/4), দামােদর (V/5;), দেশীগুলি সবুজ ডােরা ইত্যাদি জাতের পটল চাষ হয়।

পটল চাষে জলবায়ু :
এর চাষের জন্য আর্দ্র ও উষ্ণ আবহাওয়াই উপযােগী। গ্রীষ্মকালীন সজি হিসেবে এর চাষ হয়।

পটল চাষে প্রয়োজনীয় মাটি :
জলনিষ্কাশনী ব্যবস্থাসহ বেলে দোঁয়াশ ও পলি  দোঁয়াশ মাটির প্রয়ােজন হয়।

পটল চাষের সময় : 

আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস। নাবি জাতের পটল চাষ হয় অক্টোবর পর্যন্ত।
 

পটল গাছ বা চারা তৈরির পদ্ধতি : 

পরাগ মিলনের জন্য জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ পুরুষ গাছ থাকা উচিত। শিকড়ের টুকরাে (গেড়) বা এক বছরের পুরনাে গাঁটিশুদ্ধ লতার টুকরাে ২x২ মিটার দূরত্বের ব্যবধানে বীজ বা চারা বসাতে হবে। গর্তে খড় চাপা দিয়ে মাটিতে রস থাকলে জলের ঝাপটা দিতে হবে। মূল থেকে কচিপাতা বের হলে খড়ি সরিয়ে ফেলতে একবার ফলন দেবার পর শীতকালে লতাপাতা শুকিয়ে গেলে জমিতে গোড়া রেখে দিয়ে শুকনাে লতাপাতা কেটে ফেলতে হবে। বসন্তকালে কালবৈশাখী বা কোনাে কারণে বর্ষা নামলেই গতবারের গােড়া থেকে নতুন লতাপাতা গজায়। পুরনাে লতা কেটে বীজতলায় বসিয়ে দু-দিন মাস রেখে চারা বের করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জমিতে লাগানাে যায়।আবার বীজ থেকে চারা তৈরী করা যায়। অবশ্য তার জন্য নতুন জাতের বীজ বসাতে হয়। জমা জল বীজ তৈরী পক্ষে একটা বড় বাধা। তাই লক্ষ্য রাখতে হবে, এ সময় জমিতে জল যেন না জমে। চারা বসানাের দেড়মাসে ফলন শুরু হয়।

পটল বীজের পরিমাণ : 
এর জন্য প্রতি একরে বীজ লাগবে ২০-২২ কেজি, গেড় বা দেড় ফুট লম্বা সাড়ে-চার হাজার এক বছর বয়সের গাটশুদ্ধ লতার টুকরােও লাগবে।

পটল চাষে সার প্রয়ােগ পদ্ধতি : 

মাটিতে শেষ চাষের সময় প্রতি একরে ২০-২৫ গাড়ি গােবর সার বা আবর্জনা সার প্রয়ােগ করতে হবে। গে দোঁয়াশ ড়ন বা লতা লাগানাের ৫-৬ দিন আগে মাটিতে একর প্রতি ৩৫ কেজি ইউরিয়া, ৪০ কেজি. সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং ৪০ কেজি, মিউরেট অব পটাস প্রয়ােগ করতে হবে।

চাপান সার : চারা লাগানাের এক মাস পরে ২০ কেজি, এবং দুই মাস পরে আরও ২০ কেজি, ইউরিয়া সার প্রয়ােগ করতে হবে প্রতি একরে।

পটল চাষে পরিচর্যা : 

জমা দল চাষের ক্ষেতের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর, তাই জমা জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে যতাে তাড়াতাড়ি সম্ভব। অনুরূপ ভাবে জমির মাটি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে রসের অভাব ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে। পটলের লতা মাটিতেই ভাল হয় আর ফলনও বেশি হয়। তবে মাচা বা পান বরােজের ওপর লতা তুলে দিয়েও পটল চাষ করা যায়। সেক্ষেত্রে ফলন কিছু কম হলেও এর দাম বেশি পাওয়া যায়।

পটলের রোগ ও পোকা এবং তার প্রতিকার :

এক ধরনের পােকা আছে যা কিনা ব্যাকটেরিয়াঘটিত রােগ ছড়ায়। এ রােগের লক্ষণ হলাে, গাছ নুইয়ে পড়া, পাতা ঝরে পড়া। এ রােগ প্রতিরােধ করার কোনাে উপায় নেই বললেই চলে। তবে বােনার আগে বীজ শােধন করে নিলে এ রােগের হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়াও আলু, বেগুন, লঙ্কা ও টম্যাটো জাতীয় সবজি ছাড়া অন্য সবজি জমিতে ২-১ বছর চাষ করতে হবে। এ রােগের প্রতিরােধের জন্য তামা বা দস্তাঘটিত ওষুধ প্রয়ােগ করলে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে।

অন্ত্র্যাকনোজ :- এটি ছত্রাকঘটিত রােগ। পাতা প্রথমে তামাটে বর্ণের হয়ে পরে কালাে হয়ে শুকিয়ে যায়। এ রােগের প্রতিরােধ ব্যবস্থা হিসেবে বীজ শােধন করে নিতে হবে।
এর জন্য প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম ম্যানকোজের (যেমন ডাইথেন-এম ৪৫, ইন্দোফিল-এক ৪৫) বা গ্রাম ব্লাইট বা ব্লকপার মিশিয়ে আক্রান্ত গাছ স্প্রে করতে হবে ১৫ দিন অন্তর দুবার। কার্বেন্ডাজিম (যেমন ডেলজিম, কারজিম, কাবিস্টিন, ব্যাভিস্টিন), কনটাক-৫ বা ক্যাপটান পরিমাণ মতাে প্রয়ােগেও সুফল পাওয়া যায়।


ডাউন মিলডিউ :- এটিও একটি ছত্রাঘটিত রােগ। তীব্র গ্রীষ্ম ও ভেজা আবহাওয়ায় এ রােগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ রােগের লক্ষণ হলাে, এর পাতা প্রথমে হলদে ও পরে লালচে বাদামী রঙের হয়ে যায়। আর পাতার তলায় বেগুনি রঙের দাগ পড়ে বড় হয়।
এ রােগ প্রতিরােধের জন্য প্রতি লিটার জলে আড়াইগ্রাম ম্যানকোজেব বা ৪ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড (যেমন ব্লাইটক্স, ব্ল-কপার) স্প্রে করতে হবে। এ রােগ প্রতিরােধী জাত হলাে পলিমেটো। পি. আর, ২৭, শান্তি, পালােমার ইত্যাদি।


পাউডার মিলডিউ :- এটিও একটি ছত্রাকঘটিত রােগ। এ রােগের লক্ষণ হলাে, প্রথমে পাতার উপরে ও নিচে সাদা গুড়াের মতাে গােলাকার দাগ পড়ে। পরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।এর ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। শুকনাে আবহাওয়ায় আবার এ রােগ বেড়ে যায়। এর প্রতিকার হিসেবে একর প্রতি ৫-৬ কেজি ডায়নােক্যা (ক্যারা যেন) বা মােবেষ্টান ওঁড়াে ছড়িয়ে দিতে হবে। সালফেন্স, সালটেক্স, বেনলেট, বেনােসিল বা কার্বোভাজিম, কনটাফ-৫ ই.সি.-এর যে কোনাে একটি প্রয়ােগ করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।


মােজাইক বা সাহেব রােগ :-  ভাইরাসঘটিত এই রােগটি ছড়ায় জাব পােকা। এ রােগের লক্ষণ হলাে, পাতা হলদে-সবুজ-মােজাইক রঙ ধারণ করে এবং পাতা কুঁকড়ে যায়। এ রােগ প্রতিরােধের ব্যবস্থা হিসেবে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। মােজাইক রােগ প্রতিরােধী জাভের বীজ শামরক-ইলিমা, ওহিও একআর-২০০, ওহিও এক.আর-১৭ ও উইসকনসিন, এস.এম.আর-৯ লাগাতে হবে। ভাইরাস বাইক জাব পােকা (এফিডসী দমনের জন্য প্রতি লিটার জলে মেটাসিসটক্স বা সাইথিয়ন-৫০ ই. সি. ২ মিলি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

শিকড় ফোলা :-  এ রােগের লক্ষণ হলাে, গাছের গােড়ায় শিকড়গুলো গােল গােল আলুর মতাে ফুটে ওঠে। এর ফলে গাছের বৃদ্ধিলাভ ব্যাহত হয়। পাতা হলদে হয়ে শেষে গাছটা মরে যায়। এ রােগের প্রতিরােই হিসেবে জমি তৈরীর সময়ে প্রতি একরে ১০ কেজি, কার্বোফুরান (যেমন ভায়াফুরান, ফিউরাভন) প্রয়ােগ কতে হবে, এবং রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ও নিমখােল প্রয়ােগ কার্য হতে পারে।

পােকা:-  লাল কুমড়াে পােকা এটি কমলা-লাল রঙের ছােট মারাত্মক পােকা। চারা অবস্থাতেই এ পােকার দ্বারা গাছ আক্রান্ত হয়। পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ঝাঝরা করে দেয়। সকালের দিকে পাতার তলায় বসে থাকে, তাই এ সময় এ পােকা হাত দিয়ে মারাই ভাল। এছাড়া লিনডেন ওঁড়াে ছড়াতে হবে গাছের কচি পাতাগুলাে বাদ দিয়ে।

জাব পােকা :- পাতার রস চুসে খাওয়া ছােট ছােট পােকা এগুলাে। সাধারণত এ পােকা পাতার তলায় থাকে। প্রতি লিটার জলে ২ মিলি. মেটাসিসটক্স বা সাইথিয়ন ৫০ ই সি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

কাটুই পােকা :- এ পােকা দিনের আলােয় মাটির তলায় থাকে এবং রাতের অন্ধকার নামলে এরা মাটির তলা থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ চালায় গাছের ওপর। এ রােগ প্রতিরােধ করার জন্য ১.৩% বা ফেনভেলারেট ০.৪% গুড়া গাছের গােড়ায় ছড়াতে হবে।পরিমাণ জমির আয়তন অনুযায়ী।


ফল ছিদ্রকারী পােকা/ফলের মাছি : কচি অবস্থায় পটলের গা ফুটো করে তাতে এই পােকা ডিম পাড়ে। এর ফলে ফল বেঁকে যায় এবং অবশেষে পচে যায়। এ অবস্থায় ফল তুলে নষ্ট করে ফেলতে হয়। পটলের ফসল তােলবার ১০-১২ দিন আগে প্রতি লিটার জলে ২ মিলি. ম্যালানিয়ন, হিলথিয়ন বা সাইথিয়ন-৫০ ইসি, বা ডাইক্লোরভস (
নুতান) স্প্রে করতে হবে। অন্য আর এক উপায় হলো, ফাঁদ পেতে বা টোপ দিয়ে বড় পোকার বিনাশ ঘটানাে যায়।

আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি, ফসল চাষ এবং চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।


_______________________________________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.