Type Here to Get Search Results !

আধুনিক পদ্ধতিতে মটর গাছ চাষ করুন। Pea farming.

আধুনিক পদ্ধতিতে মটর গাছ চাষ করুন। Pea farming :

সারা পৃথিবীতে মটর অতি জনপ্রিয় ডালশস্য। পশ্চিমবঙ্গে শীতকালীন সবজি মটরশুটি একটা প্রধান উপাদেয় সবজি। মটর শুটি কাচা ও তরকারি হিসেবে এবং ডাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মটর শাকের সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।মটরের শুকানাে দানা পেষণ করে ব্যাসন তৈরী হয়, ছােলার মতাে, তা দিয়ে পাঁপড় শুকনাে মিষ্টি ইত্যাদি তৈরী হয়। মটরের চুনি ও ভূষি গবাদি পশুর খাদ্য। মটরের ঘুঘনি খুবই জনপ্রিয় সারা ভারতে। মটরের দানার শতকরা ৫৯.৬ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ১৯.৭ ভাগ প্রােটিন, ২.১ ভাগ খনিজ পদার্থ ১১ ভাগ ফ্যাট, ৪.৫ ভাগ আঁশ, ১৬.০ ভাগ জলীয় পদার্থ ও যথেষ্ট ভিটামিন আছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতের অন্য আরাে রাজ্য, যেমন উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চল, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, বিহার, ওড়িশায় মটর চাষ হয়। মটর শুঁটি -এর বিজ্ঞানসম্মত নাম -Psisum sativum .

আধুনিক পদ্ধতিতে মটর গাছ চাষ করুন। Pea farming.
Image by Steve Dietrich from Pixabay

সাধারণ মটরের দু'টি প্রজাতি আছে। যেমন - 

(১) মাঠের মটর বা দেশী মটর বা ডালমটর । 

 এই প্রজাতির মটর সাধারণত কাঠের জমিতে বােনা হয় এবং প্রধানত ডালশস্য, আবার কখনও বা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর গাছ বেশ শক্ত হয়, শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটে। মাঠের মটরের ফুল নানান রঙের হয়। শুটিগুলাে অপেক্ষাকৃত ছােট ও হাল্কা সবুজ রঙের হয়, মটরের দানা গােল ও হলুদ রঙের এবং আকারে অপেক্ষাকৃত বাগানের মটরের চেয়ে ছােট হয়।

(২) বাগানের মটর বা সব্জি মটর। 

এই প্রজাতির মটর প্রধানত বাগানেই চাষ হয় এবং চা শুটি সক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গাছগুলাে লম্বা এবং ঘন সবুজ হয়। দানা একটু  বড়, নরম ও মিষ্টি হয়। শুকনাে বীজের বীজত্বক কুঁচকে যায়।

মটর চাষে জলবায়ু :

মটর শীতকালের ফসল। ১০°-১৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাল জন্মায়।তুষারপাত ফুল ও কচি শুটির পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। ১০.৫°-২৩.৫° সেলসিয়াস মাটির তাপমাত্রায় বীজের অঙ্কুরােদগম হয়। ফসলের চাষের মরশুমে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ফসলের পরিমাণ কমে যায়। তবে ১২.৫-১৮° সেলসিয়াস তাপমাত্রা মটর চাষের পক্ষে খুবই উপযােগী।

মটর চাষে প্রয়োজনীয় মাটি :

সব মাটিতেই মটর শুটি চাষ হয়। তবে পলি দোঁয়াশ ও এঁটেল দোঁয়াশ মাটি মটরশুটি চাষের পক্ষে বিশেষ উপযােগী। আবার এঁটেল মাটিতেও এর চাষ করা যায়।মাটির পি.এইচ ৫.৫-৬.৫ এর মধ্যে থাকলে ফলন ভাল হতে পারে।

মটর চাষে জমি তৈরীর পদ্ধতি :

খারিফ ফসল কাটার পরেই জমি তৈরীর কাজে লেগে পড়তে হবে।জমিতে ৪-৫ বার লাঙল ও মই দিয়ে মাটি তৈরী করে নিতে হবে। এ সময় ৬ গাড়ি গোবর বা আবর্জনা সার মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে গম সর্ষে, যব, তিসি ইত্যাদি ফসলের সঙ্গে মটরশুটি মিশ্ৰশস্য হিসেবে চাষ করা হয়। এক্ষেত্রে যেহেতু মটরশুটির জন্য আলাদাভাবে জমি তৈরী করার দরকার হয় না, তাই এ চাষে খরচ কিছুটা কম হয়।

মটরের বিভিন্ন প্রকার জাত :

(১) সবজি মটর :- বােননাভিলি, সিলভিয়া, নিউলাইন পারফেকসন, আর্লি ডিসেম্বর, এন-পি-২৯, আর্লি জয়েন্ট, আরকেল, আর্লি ব্রাজার, আণ্ডারম্যান, কৃষ্ণনগড়, ডােয়ার্ফ, ডি-এস-আর-১১, লক্ষৌবনিয়া ইত্যাদি।

(২) ডাল মটর :- বি-২২ (ধূসর), টি-১৬৩, টি-৩৬, টি-৬১১৩, বি-আর-১২, বি-আর-১৭৮, বি-৭৬, টি-৯, ব্লুবেনটাম, রচনা, ডি-এস-আর-১১,আর্কেল, মেটিওর, মুক্তা, আর্লি পারফেকসন, আজাদ, পি-৩, বি-এল-জি-এফ-৬৮, জে-এস-১১, পাঞ্জাব-৪৭, পাঞ্জাব-৮৮, কম্যাণ্ডো ইত্যাদি।

 মটর চাষে বীজ বপন পদ্ধতি ।

(১) বীজ বােনার সময় :  শীতের আবহাওয়া মটর চাষের পক্ষে অনুকূল, এই কারণেই আমাদের দেশে রবি ফসল হিসেবেই এর চাষ হয়ে থাকে। এর বীজ বােনার সময় আশ্বিন-কার্তিক মাস, বীজ বুনতে দেরী হলে গাছের বড় হতে দেরী হয়, এর ফলে শীত পড়ে এলে ফসলও কম হয়। এছাড়া রােগ পােকার উপদ্রব বেড়ে যায়।

(২) বীজ শােধন : ভাল ফলন পেতে হলে বীজ শােধন করে নিতে হবে। এর জন্য প্রতি কেজি বীজে তিন গ্রাম হারে ম্যানকোজেব শতকরা ৭৫ ভাগ ডব্লিউ-পি বা থাইরাস মিশিয়ে বীজ শােধন করে নিতে হবে। সেই সঙ্গে মটরের উপযুক্ত রাইজোরিয়াম কালচার’ বীজের সঙ্গে মিশিয়ে বুনতে হবে। তা সম্ভব না হলে আগে যে জমিতে মটর চাষ করা হয়েছিল, সে জমির কিছুটা মাটি বীজের সঙ্গে মিশিয়ে বুনতে হবে। এর ফলে মটর গাছের শেকড়ে নাইট্রোজেন বন্ধনকারী জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং গাছ বাতাস থেকে বেশি করে নাইট্রোজেন নিতে পারবে।


(৩) বীজের পরিমাণ : হাতে ছিটিয়ে বুনলে প্রতি একরে ৪০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ২০-২২ কেজি বীজ লাগবে। বীজ বােনার আগে এক রাত জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

(৪) বীজ বােনার পদ্ধতিঃ  বীজ তিনরকমভাবে বােনা যায়। যেমন হাতে ছিটিয়ে বীজ বােনা যন্ত্রের সাহায্যে সারিতে এবং লাঙলের পিছনের ফালিতে বােনা যায়। এছাড়া চাষের জায়গা যদি অল্প হয়, তাহলে খুপি করেও বীজ বােনা যায়। বীজ সাধারণত হাতে ছিটিয়ে বােনা হয় এবং মই দিয়ে বীজগুলােকে ঢেকে রাখতে হয়। সারিতে বুনলে দুটি সারির মধ্যে ব্যবধান হওয়া উচিত এক ফুট (৩০ সেমি.) এবং সারিতে বীজের দূরত্ব রাখতে হবে ৪ ইঞ্চি (১০ সেমি.)। বীজ এক ইঞ্চি (২.৫৪ সেমি.) গভীরে বুনতে হবে।

মটর চাষে সার প্রয়ােগ পদ্ধতি  :

মটরের ফলন ভাল পেতে হলে একর প্রতি ৪.৫-৯.০ কেজি নাইট্রোজেন, ২২.৫-৩০.৫ কেজি ফসফরাস ও ২২.৫-৩০.৫ কেজি পটাশিয়াম প্রয়ােগ করতে হবে। গাছের বৃদ্ধি লাভের জন্য একটু বড় হলেই বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে শুরু করে, আর এভাবেই তারা নাইট্রোজেনের চাহিদা নিজেরাই মিটিয়ে নেয়।

মটর চাষে পরিচর্যা :

মটর শস্য চাষে জমি পরিচর্যার কোনাে প্রয়ােজন নেই তবে আগাছা দমন করতে জমিতে দু-একবার নিড়েন দিয়ে নিলে ফলন যথাযথ ভাবে হতে পারে। অবশ্য মটরগাছ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই লতিয়ে গিয়ে মাটি ঢাকা দিয়ে দেয়। এর ফলে আগাছা আর বাড়তে পারে না। তাই আগাছ দমন করার কোনাে প্রয়ােজন হয় না। তবে সাবধানের মার নেই বলে একটা কথা আছে, সেই অনুযায়ী বােনার পরে পরেই ৩০০ লিটার টক-ই-২৫, ৪০০-৫০০ লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে আগাছা অঙ্কুরােদগমের সময়ই মরে যায়। এছাড়া এট্টাজিন, প্রপাজিন ও সিমাজিন (পরিমাণ ০.৫৪ কেজি প্রতি একরে প্রয়ােগ করেও মটরের আগাছা বিনাশ করা যায়)।

মটর চাষে সেচ পদ্ধতি :

মাটিতে রসের অভাব ঘটলে বীজ বােনার আগে জলসেচ দিয়ে সরস মাটিতে বীজ বুনতে হবে। এছাড়া বীজ বােনার পরেও যদি প্রয়ােজন হয় জলসেচ দিতে হবে। গাছে ফুল ও শুটি আসার আগে মুখে দু’একবার জলসেচ দেওয়া দরকার। মটরে ৮-১০ দিন অন্তর সেচ দিতে হয়।

শস্য রক্ষার উপায় :

পােকা : মটর গাছে জাব পােকা, ঘােড়া পােকা ও লেদা পােকার খুব উপদ্রব হতে দেখা যায়। এসব পােকা গাছের পাতা খেয়ে গাছ নষ্ট করে ফেলে। এরা শুটির দানা ভেতরের দানা খেয়ে ফসল নষ্ট করে ফেলে। এদের প্রতিরােধ করার জন্য প্রতি একরে ৮-৯ কেজি কারবারিল ১০ শতাংশ গুঁড়াে ওষুধ বা প্রতি লিটার জলে দু মিলি এন্ডােসালফান ৩৫ ই-সি (যেমন থায়ােডান-৩৫ ই-সি) বা দেড় মিলি মিথাইল প্যারাথিয়ন ৫০ ই-সি (যেমন মেটাসিড-৫০ ই-সি) গুলে আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে। ওষুধ দেওয়ার পর কমপক্ষে ১৫ দিন কাঁচা মটরশুটি খাওয়ার জন্য তোলা ব্যবহার করা চলবে না।

রােগঃ টর গাছের চারায় ধসা রােগ ও ঢলে পড়া রােগ দেখা যায়। এ রােগের প্রতিকারের পদ্ধতি ছােলা চাষেরই অনুরূপপাউডারিমিলডিউ রােগে আক্রান্ত গাছের পাতায় সাদা গুড়াে ছড়ানাের মতাে ছত্রাকারে বহিঃ প্রকাশ দেখা যায়। ভয়ঙ্কর আক্রমণে সমস্ত গাছটাই আক্রান্ত হয় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। এর প্রতিকার হিসেবে রােগের শুরুতেই জলে গােলা গন্ধকের (যেমন থায়ােভিট, কোনান) ০.২ শতাংশ স্প্রে মিশ্রণ বা ম্যানকোজেবের (যেমন ডাইথেন এম-৪৫) ০.২৫ পতাংশ স্প্রে মিশ্রণ সমান ভাবে গাছে দিতে হবে। 

ফসল তোলার পদ্ধতি :   

১২০-১৩০ দিনের মধ্যে মটর শস্যের ফসল তােলা যায়। ব্যবহারের রকমভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন অবস্থায় মটর তােলা যায়। বীজ বােনার ৯৫-১০০ দিনের মধ্যে প্রথম শুটি তোলা যায়। সব্জি হিসেবে ব্যবহারের জন্য ফলের রঙ হাল্কা সবুজ ও দানা বেশ বড় হলে শুটি তুলতে হবে। ৮-১০ দিনের ব্যবধানে তিন-চার বার শুটি তােলা যায়। ডাল হিসেবে চাষ করলে শুটি পাকলে ও গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে গাছ কেটে ফেলতে হবে। গাছগুলােকে দু-চারদিন রােদে ফেলে রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর লাঠি দিয়ে পিটিয়ে শুটি থেকে দানা আলাদা করে নিতে হবে এবং কুলােয় ঝেড়ে দানাগুলােকে পরিষ্কার করে নিতে হবে।এরপর আরাে দু-চারদিন রােদে দানা শুকিয়ে নিয়ে গােলায় রেখে দিতে হবে।

আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি,বিভিন্ন ফসল ও ফুল গাছের চাষ অর্থাৎ চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।

______________________________________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.