Type Here to Get Search Results !

আধুনিক পদ্ধতিতে মুসুর ডাল চাষ করুন।Cultivation of lentils.

মুসুর ডাল চাষ পদ্ধতি। Cultivation of lentils :

মুসুর ডালের বিজ্ঞানসম্মত নাম - Lens Culinaris  ভারতে মুসুর ডাল অতি পরিচিত এবং সবার গ্রহণযােগ্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডালশস্যের মধ্যে খাদ্যগুলের দিক থেকে মুসুর ডালে শতকরা ৬০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ২৫ ভাগ প্রােটিন, ০.৭ ভাগ ফ্যাট, ২.১ ভাগ খনিজ পদার্থ, ১২.৪ ভাগ জল আর যথেষ্ট খাদ্যপ্রাণ থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম মুসুরডাল ৩৪৬ ক্যালরি দেহের তাপশক্তি উৎপন্ন করে। এর ভূষি ও চুনি পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতের প্রায় সর্বত্রই মুসুরের চাষ হয়। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, হুগলি, মেদিনীপুর, নদীয়া, ২৪ পরগণা (উত্তর), মুর্শিদাবাদ, মালদাহ, পশ্চিম দিনাজপুর জেলায় মুসুরের চাষ হয় ব্যাপকভাবে।

আধুনিক পদ্ধতিতে মুসুর ডাল চাষ করুন।Cultivation of lentils.
Image by rottonara from Pixabay

মুসুর ডাল চাষে জলবায়ু : 

 রবি মরসুমে মুসুর চাষ করা হয়। এ ফসল ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ভাল হয়। জমা জল মুসুর সহ্য করতে পারে না। তবে বিভিন্ন জলবায়ুতে এর চাষ হতে দেখা যায়, সমতলভূমি থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব ভারতের ৩৫০০ মিটার উঁচু পার্বত্য অঞ্চলেও এর চাষ হতে দেখা যায়।

মুসুর ডাল চাষে প্রয়োজনীয় মাটি : 

সব রকম মাটিতেই মুসুরের চাষ হয়। তবে দোঁয়াশ ও বেলে দোঁয়াশ মাটিতে এর চাষ অপেক্ষাকৃতভাবে ভাল হয়। দক্ষিণ ভারতে কালােমাটি অঞ্চলে মুসুরের চাষ হয়। মুসুর জমা জল সহ্য করতে পারে না। তাই ক্ষেতে জল নিস্কাশনের সুবন্দোবস্ত থাকা দরকার।

মুসুর ডাল চাষে জমি তৈরীর পদ্ধতি : 

মুসুর একক ও মিশ্ৰশস্য হিসেবে চাষ করা হয়। তবে একক শস্য হিসেবে চাষ করলে জমিতে চার-পাঁচবার লাঙল ও মই দিয়ে মাটি বেশ ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

বীজ বপনের পদ্ধতি :

(১) বীজ বােনার সময় : কার্তিক মাসের প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বােনার উপযুক্ত সময়। তবে এর পরেও বীজ বােনা যায় বটে, কিন্তু তাতে ফলন কম হয়।

(২) বীজ শােধনঃ ছােলার মতাে বীজ শােধন করে নিয়ে বীজের সঙ্গে জীবানু সার মিশিয়ে বুনতে হবে।

(৩) বীজের পরিমাণ : একক শস্য হিসেবে চাষ করলে ১৩-১৪কেজি. বীজের প্রয়ােজন। সর্ষে, ছােলা, গম, যব ইত্যাদি শস্যের সঙ্গে মিশ্ৰশস্য হিসেবে চাষ করলে এবং আখের দু-সারির মাঝে সাথী ফল হিসেবে চাষ করলে প্রতি একরে ৮-১০ কেজি বীজ লাগবে। অনেক সময় আমন ধান কাটার দু-তিন সপ্তাহ আগে জমির মাটি ভিজে থাকা অবস্থায় আমাদের জমিতে এক বীজ বুনে দেওয়া যায়। একে “পায়রা শস্য”বলা হয়। এর জন্য প্রতি একরে ১৪-১৫ কেজি বীজ লাগে।


(৪) বীজ বােনার পদ্ধতি :

বীজ সাধারণত ছিটিয়ে বােনা হয়। এক রাতে (৮-১০ ঘন্টা)জলে ভেজানাে বীজ বােনা হয়। বীজ বােনার আর হাল্কা ভাবে মই দিয়ে সারিতে বীজ বােনা হয়। এক্ষেত্রে দুটি সারির ব্যবধান হওয়া উচিত এক ফুট (৩০ সেমি.) এবং গাছের দূরত্ব হওয়া উচিত ৪ ইঞ্চি (১০ সেমি.)। বীজ এক ইঞ্চি (২.৫৪ সেমি) গভীরে বুনতে হবে।

মুসুর ডাল চাষে সার প্রয়ােগ পদ্ধতি  : 

জমি তৈরী করার সময় প্রতি একরে ৭-৮ গাড়ি গােবর সার বা আবর্জনা সার, ৮ কেজি, নাইট্রোজেন, ১৬ কেজি, ফসফরাস এবং ৮ কেজি, পটাশিয়াম মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মুসুর শুটি জাতীয় শস্য, তাই এতে নাইট্রোজেনঘটিত সারের পরিমাণ কম লাগে।

মুসুর ডাল চাষে পরিচর্যা :

মুসুরের জমিতে সাধারণত কোনাে নিড়েন দেওয়া হয় না। তবে ভাল ফসলের জন্য বীজ বােনার তিন সপ্তাহ পর একবার এবং ছয় সপ্তাহ পরে আর একবার জমিতে নিড়েন দেওয়ার প্রয়ােজন। এ ফসলে ভেচ্ নামে আগাছা হয়। নিড়েন দিয়ে এই আগাছা কেটে ফেলতে হবে।

মুসুর ডাল চাষে সেচ পদ্ধতি  : 

মুসুর শস্যের চাষের জন্য জলসেচের বড় একটা প্রয়ােজন হয় না। তবে বীজ বােনার সময় যদি মাটিতে জল না থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সেচ দিয়ে বীজ বুনতে হবে। আর ফুল আসার সময় একবার সেচ দিতে পারলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।


মুসুর ডাল ফসল রক্ষার করণীয় উপায় :

রােগ : মুসুর শস্যের প্রধান শত্রু হলাে ঢলে পড়া রােগ। এই রােগ প্রধানত শেকড় আক্রমণ করে এবং রােগাক্রান্ত মূলকে সম্পূর্ণভাবে পচিয়ে দেয়। এর ফলে আক্রান্ত গাছটি নুইয়ে পড়ে।এর প্রতিকার ব্যবস্থা হিসেবে বীজ শােধন করে নিয়ে বুনতে হবে। বাড়ন্ত গাছে এ রােগ দেখা দিলে প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম ব্যানিকল-৭৫ বা ক্যাপটান ৫০ শতাংশ ডব্লিউ-পি গুলে রৌদ্রকরােজ্জ্বল দিনে গাছের গােড়া পর্যন্ত স্প্রে করতে হবে। মুসুর শস্যে মরচে রােগও দেখা দেয়। তাই এর প্রতিকার হিসেবে তিন গ্রাম জলে গােলা গন্ধক গুঁড়াে গুলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গাছে দিয়ে এ রােগ নিরাময় করা যেতে পারে।


পােকা : মুসুর শস্যের শুটি ফুটো করে পােকার উপদ্রব দেখা যায়। এর প্রতিকার হিসেবে প্রতি লিটার জলে দুই মিলি, এন্ডােসানফান ৩৫ ই-সি (যেমন থায়ােডান-৩৫ই-সি) বা এক মি. লি. ফেনিট্রোথিয়া-৫০ ই-সি. (যেমন সুমিথিয়ন-৫০ ই-সি, ফলিফায়ােন) বা ২.৫ গ্রাম কারআরিল (যেমন সেভিন) ১০ শতাংশ গুঁড়াে গুলে স্প্রে করতে হবে। অনেক সময় গাঢ় বাদামী জমি পােকার উপদ্রব হতে দেখা যায়। এদের ধ্বংস করার জন্য প্রতি লিটার জলে দেড় মি.লি. মিথাইল ডেমিটন ২৫ ই-সি. (যেমন মেটাসিসটকম-২৫ ই-সি.) বা এক মি. লি. মিথাইল প্যারাথিয়ন-২৫ ই-সি (যেমন মেটাসিড-৫০ ই-সি.) বা দু মি, লি, ডাইমেথয়েড-৪০ ই-সি (যেমন রােগর-৩০ ই-সি.) বা দেড় মি. লি, ফসফোসিডন-৪০ শতাংশ এস. এল. (যেমন সুমিডন) গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে।

মুসুর ডালের বিভিন্ন প্রকার জাতঃ

মসুর শস্যের অনেক জাত। যেমন, বি-৭৭, বি-৬০, বি-৬২, বি-২৫৬ (রন্ধন), সুব্রত, বি-২৩৫, লেনস-৪০৭৬, টি-৩০, টি-৩৬, সি-১৫, সি-ও ৬৩৯-২০, সি-এস-৬, পুসা-১-১, সি-৩১, মল্লিকা, বি-আর-২৫, বি-আর-৭৭, পন্থ-এ-২০৯, পন্থ-এল-৪০৬ ইত্যাদি। এদের মধ্যে বি-৭৭ এবং মি-৩১ পশ্চিমবঙ্গে চাষ করার উপযােগী। তাই এই দুই জাতের মুসুর শস্যের বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলােঃ

(১) বি-৭৭ (আশা) ঃ পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর (মুর্শিদাবাদ) ডালশস্য ও তৈলবীজ গবেষণা কেন্দ্র থেকে এটি উদ্ভাবিত। নদীয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদে চাষের পক্ষে এটি একটি উপযােগী জাত। তবে অন্য জেলাতেও এর ফলন ভাল হয়। গাছগুলি লম্বা হয়, ফুলের রঙ সাদা, দাগ ছােট এবং সহজেই সিদ্ধ হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় এর ফলন প্রতি একরে ৬-৭ কুইন্টাল।


(২) সি-৩১ ঃ এটি নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় চাষের উপযােগী। এর গাছ লম্বা ও ঝাড়ালাে হয়। ফুল সাদা রঙের এবং দানা একটু বড় হয়। একর প্রতি ছয় কুইন্টাল ফলন হয়।

ফসল তোলার পদ্ধতি : 

মুসুর শস্য ১২৫-১৩০ দিনের মধ্যে ফসল তােলার পক্ষে উপযােগী হয়ে ওঠে। গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে এবং শুটি পেকে গেলে ফসল তুলে ফেলতে হয়। ঠিক সময়ে ফসল না তুললে শুটি কেটে বীজ মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়, তাই ঠিক সময়ে মুসুর শস্য তুলে ফেলাই ভাল। এই কারণে গাছ সামান্য একটু কাচা থাকতেই সকালের দিকে গাছ কেটে বা মূলসহ উপড়ে নিতে হয়। তারপর গাছগুলােকে রােদে শুকিয়ে নিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা গরু দিয়ে মাড়িয়ে বীজ আলাদা করে ফেলতে হবে। এরপর কুলােয় নেড়ে-চেড়ে বীজ পরিষ্কার করে রােদে শুকিয়ে রাখতে হবে। বীজ এমন ভাবে রােদে শুকোতে হবে যাতে বীজে শতকরা ৮-১০ ভাগের বেশি জলীয় অংশ না থাকে। 


ফলন : জাত অনুযায়ী একর প্রতি ৭-৮ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন হয়।

আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি,বিভিন্ন ফসল ও ফুল গাছের চাষ অর্থাৎ চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।

________________________________________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.