Type Here to Get Search Results !

আধুনিক পদ্ধতিতে মূলা চাষ করুন ।সাথে অধিক লাভ ঘরে তুলুন।Radish Farming.

মূলার চাষ করুন।  Radish Farming :


আমাদের দেশে মূলার ব্যবহার সর্বত্রই।এর বিজ্ঞানসম্মত নাম-Raphanus Sativus . সাধারণত বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে মূলা চাষ করা হয়। সারা ভারত জুড়ে মূলার চাষ হয়ে থাকে। আমাদের পশ্চিম বঙ্গে ও এর চাষ ব্যাপক পরিমানে হয়ে থাকে।মূলো শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি।মূলো লম্বায় ২০ থেকে ২৫ সে.মি হয়। এর কোনো শাখা-প্রশাখা থাকেনা। 
সাধারণতঃ মূলো দুই ধরণের হতে দেখা যায় (১) সাদা মূলো  (২) লাল মূলো।  মূলা  বাঙালির একটি সবচেয়ে  পছন্দের সবজি।এটিকে আবার বাঙালির পান্তা-ভাতের সাথী বলাহয়ে থাকে। মূলাকে কাঁচা ও রান্না দুই ভাবে খাওয়া যায়। অন্য সবজির সঙ্গে মূলা মিশিয়ে রান্না করলে তরকারি খুবই সুস্বাদু হয়। মূলা যেমন অর্থ কারি ফসল তেমন স্বাস্থ কারি ও বটে।মূলা সস্তা ও সুলভ বলেই  কিন্তু হেলাফেলার নয়।মূলোর অনেক গুন্,অনেক রোগ সারাবার ক্ষমতা রয়েছে।

আধুনিক পদ্ধতিতে মূলা চাষ করুন ।সাথে অধিক লাভ ঘরে তুলুন।Radish Farming.
Image by raspberryjam0314 from Pixabay 


মূলোর চাষ পদ্ধতি।  Radish Farming Process :

সাধারণত বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে মূলা চাষ করা হয়। খুব তাড়াতাড়ি ফলন হয় বলে অন্যান্য সজির সঙ্গেও এর চাষ করা যায়। সারা বছর ধরেই এর চাষ হতে পারে। তবে প্রধানত মূলা শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন, দুই আবহাওয়াতেই বােনা যায়। তবে জাত আলাদা হয়। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বােনা যায়। 
 
ঠাণ্ডা আবহাওয়াতে যে জাতের চাষ হয়, সেগুলাের নাম যথাক্রমে : পূসা হিবানী, মরকেট গ্লোব, রাপিড রেড, তবে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে অপেক্ষাকৃত কম শীত থাকার জন্য যেসব জাতের মূলা চাষ করা হয় সেগুলাে হলাে : জাপানী সাদা, পূসা দেশী, পূসা ব্রেশন, কল্যাণী সাদা, কুম্বই লাল, জৌনপূরী, পূসা চেতকী ইত্যাদি। আর গ্রীষ্মকালের মূলা হলে পুসা চেতকী। এ জাতের মূল চৈত্র থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত বােনা চলে।

কল্যাণী, সাদা জাত বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমােদিত। রঙ সাদা, প্রায় ৩০ সেমি লম্বা হয়, শ্রাবণ মাস থেকে বােনা যায় এবং বােনার ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফসল তােলা যায়।

 পুসা মে –এর রঙ সাদা, গােড়ার দিকে হাল্কা সবুজ এবং এর ঝাঁঝ বেশি, প্রায় ৩০-৩৫ সেমি লম্বা হয়। ভাদ্র থেকে কার্তিকের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বােনা যায় এবং ৫০-৬০ দিনের মধ্যে ফসল তােলা যায়।

পুসা রেশমী, - এর ঝাঁঝ কম, আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বােনা যায় এবং ৫০-৬০ দিনের মধ্যে ফসল তােলা যায়।
জাপানী সাদা, এর রঙ সাদা, ৩০-৩৫ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। এর বােনার সময় আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত এবং ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ফসল তােলা যায়। নাবি হিসেব পৌষ থেকে ফান্থনের মাঝামাতি পর্যন্ত বােনা যায়। এর রঙ সাদা, নরম এবং গন্ধবিহীন। ৫০-৬০ দিনের মধ্যে এর ফসল তৈরী হয়ে যায়।

পাটনাই মূলা, বর্ষাতে ফলন হয় বলে চাষীভাইরা বেশি লাভ করে থাকে। এর রঙ একটু লালচে, লম্বায় ৫০-৫৫ সেমি.। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বুনতে হয়। স্টাই লাল ও কালিম্পং লাল,—এই মূলা বেশ লম্বা হয়, নরম, রঙ লাল টকটকে বা লাল  সাদা  মেশানাে, খেতে সুস্বাদু।

মুলো চাষের জমি তৈরী ও সার প্রয়ােগ পদ্ধতি  : 


যে জমিতে জল জমে না এমন বেলে দোঁয়াশ, দোঁয়াশ ও পলি দোঁয়াশ এই ফসল মাটিতে ভাল ফলন হয়। কম করেও এক ফুট মাটির নিচে খুঁড়ে ৭-৮ বার চাষযােগ্য মাটিতে মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তুলতে হবে। প্রতি একরে  ৪৫-৬০ গাড়ি জৈবিক অর্থাৎ গােবরের সার বা আবর্জনা সার মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। এছাড়া ৪৫ কে, জি, নাইট্রোজেন, ২৪ কেজি ফসফরাস এবং ৩৫ কেজি, পটাস সার প্রয়ােগ করতে হবে। জলসেচের ব্যবস্থা না থাকলে রাসায়নিক সারের বদলে খোল প্রয়ােগ করা উচিত।

আধুনিক পদ্ধতিতে মূলা চাষ করুন ।সাথে অধিক লাভ ঘরে তুলুন।Radish Farming.

Image by Ulrike Leone from Pixabay

মুলোর বীজ বােনার পদ্ধতি :

হাত দিয়ে ছিটিয়ে এবং সারি দিয়ে লাইনে বীজ বােনা যায়। একর প্রতি ৩-৪.৫ কেজি বীজের প্রয়ােজন হয়। তবে লম্বা জাতের ক্ষেত্রে ৩ কেজি বীজই যথেষ্ট। সারিতে লাগলে ৩০-৪৫ সেমি.-এর ব্যবধানে বীজ বুনতে হবে। আর ছিটানাে বীজের গাছ হলে ৮-১০ সেমি. অন্তর অন্তর চারা রেখে বাকীগাছগুলাে তুলে ফেলতে হবে।

মুলো গাছের পরিচর্যা :

বীজ বােনার ১৪-২০ দিন পরেই নিড়েন দিয়ে জমির সব আগাছা তুলে ফেলে গাছ পাতলা করে দিলে তবেই ভাল ফসল পাওয়া যাবে। নিড়ানি বিদা চালিয়েও গাছ পাতলা করা যেতে পারে। গ্রীষ্মকালে ৫-১ দিন এবং শীতকালে ১০-১২ দিন পরপর সেচ দিতে হবে।

মুলো গাছের রােগ পােকা নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করবেন ?

 
এই ফসলে অনেক ধরনের রােগ পােকার উপদ্রব হতে দেখা যায়,  সেগুলাে হলাে : ধসা, মােজেইক এবং মরচে ধরা রােগ হয়। পৌষ মাসের শেষ দিক থেকে এই রােগ দেখা যায়। এ রােগের লক্ষণ হলাে পাতার গােলাকায় দাগ পড়া। দাগগুলাে বেশ বড় আকারের হয় অনেক সময় পরস্পরের সঙ্গে জোড়া লেগে পাতার বেশ কিছু অংশ জুড়ে অবস্থান করে। এর ফলে পাতা ঝলসে যায় এবং খসে পড়ে। আক্রমণের শুরুতেই এ রােগের প্রতিরােধ গড়ে তুলতে হবে, যেমন ০.৪% তাম্রঘটিত ওষুধ (ব্লাইটক্স, ফাইটোলান বা ব্রুকপার, প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম) বা কার্বেন্তাজিম ০.১% দ্রবণ (ব্যাভিষ্টিন, ডেরেসাল-১ লিটার জলে ১ গ্রাম পরিমাণ) বা ০.২৫% জিনেব বা ম্যানকোজেব (প্রতি লিটার জলে ২.৫ গ্রাম) স্প্রে করতে হবে।

জাবপােকার উপদ্রব রােধে সংবাহী অর গানাে ফসফরাস কীটনাশক ওষুধের দ্রবণ, যথা—ফসফাসিডন (প্রতি লিটার জলে আধ মিলি, ডিমেক্রন, সুমিডন) বা মেটাসিসটক্স (প্রতি লিটার জলে এক মিলি.) বা ডাইকিথােয়েট (প্রতি লিটার জলে দেড় মিলি.) স্প্রে করতে হবে এবং তা করতে হবে পােকায় আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।


মুলো গাছেরপাতা ছিদ্রকারী পােকা : 

ছােট গুবরে পােকাজাতীয় সাদা রঙের দাগবিশিষ্ট পােকা পাতা খেয়ে ছােট ছােট ছিদ্রের সৃষ্টি করে থাকে। ৪% কারবারিল গুড়াে বা ২% মেটাসিড গুঁড়াে একর প্রতি ১০-১২ কেজি. ছড়াতে পারলেই এই পােকা দমন করা সম্ভব হবে। ঘােড়া পােকা পৌষ থেকে ফাল্বন মাসের মধ্যে দেখা যায়। এ পােকার মুখ দেখতে ভারি সুন্দর। পাতার নিচে স্ত্রী-মুখ ৩০০-৪০০টি ডিম পাড়ে, ডিমগুলি আলাদা আলাদা ভাবে থাকে। এক সপ্তাহের মধ্যে ডিম থেকে কীড়া বের হয় এবং পাতা খেয়ে গাছের প্রভৃতি ক্ষতি করে। এ পােকা দমন করতে হলে ম্যানকোজেব প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম বা কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি, ফসল চাষ এবং চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।



+________________________________________________________________________+

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.