➤ ধান চাষ। Paddy Farming :-
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রধান আহার বলতে বােঝায় ভাত, আর তা তৈরী হয় ধান অর্থাৎ চাল থেকে। অতএব ধানই প্রধান খাদ্যশস্য। সেই প্রয়ােজন মেটাতে ভারতের মােট চাষ যােগ্য জমির শতকরা ৭৫ ভাগ জমিতে ধান চাষ করা হয়। ধান মূলত পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চল, অন্ধপ্রদেশ, কেরল, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা ইত্যাদি রাজ্যে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। সারা বিশ্বে ধান উৎপাদনে ভারতের স্থান দ্বিতীয়, এবং আমাদের দেশে পশ্চিমবঙ্গে স্থান সবার আগে প্রথম। আবার পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বর্ধমানের স্থান সবার আগে। ভারতে মােট ধান উৎপাদনের ১৬.৫ শতাংশ ধান শুধুই পশ্চিমবঙ্গে হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের পর যথাক্রমে দ্বিতীয় স্থান অন্ধপ্রদেশ, বিহারের স্থান তৃতীয় এবং উত্তরপ্রদেশের স্থান চতুর্থ।গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট :
বিদেশ থেকে আনা উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ধান আমদানী করে বর্তমানে ভারতে ধান উৎপাদনে কৃষি বিপ্লবের সূচনা করা হয়েছে।পশ্চিমবঙ্গে শীতকালে দু-তিনমাস ছাড়া বাকি সময়ে ধান চাষ হচ্ছে।
খাদ্য বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখছেন, চালে শতকরা আনুমানিক ৭৯.৮ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ৬.৪ ভাগ প্রােটিন, ০.৪ ভাগ ফ্যাট, ০.৮১ ভাগ খনিজ এবং যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য প্রাণ ‘এ’ ও ‘বি’ থাকে। আর প্রতি ১০০গ্রাম চালে ৩৭০ ক্যালরি দৈহিক তাপশক্তি উৎপন্ন হয়।
ঋতুভেদে পশ্চিমবঙ্গে তিন প্রকারের ধান চাষ করা হয়। যেমন : ১। আউশ ধান, ২। আমন ধান এবং ৩। বোরো ধান চাষ।
➤ চলুন জেনে নেওয়া যাক আউশ ধান চাষ পদ্ধতি :-
আউশ ধানের চাষের মাটি কী রকম হবে :-
আউশ ধান প্রায় সব রকম মাটিতেই চাষ করা যায়। তবে এরই মধ্যে উঁচু ও মাঝারি বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটিতে আউশ ধানের ফলন ভাল হয় আর ধান চাষের জন্য উর্বর মাটির প্রয়ােজন হয়। এই কারণে নদী উপত্যকার পলি মাটিতে যে ধানের ফলন হয়, তা সর্বোৎকৃষ্ট।
জমি কী ভাবে তৈরী করতে হবে :- আউশ ধান বােনা আউশের জন্য চাষযােগ্য জমি ৩-৪ বার কর্ষণ এবং রােয়া আউশের জন্য দুবার ধূলােয় ও দুবার কাদায় চাষ এবং মই দিয়ে জমি তৈরী করতে হবে। জমি তৈরী করার সময় একর প্রতি ১০-১২ গাড়ি জৈবিক সার গােবর বা আবর্জনা সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। উইপােকা মারার জন্য শেষ চাষের আগে প্রতি একর১৫ কে. জি. ডার্সান ১০ শতাংশ প্রয়ােগ করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।
বীজ শােধন :- চারায় রােগ ও পােকার আক্রমণ বােধ করতে বীজের বাছাই ও শােধন করা একান্ত প্রয়ােজন। বীজ বাহিত রােগ প্রতিরােধের জন্য বীজ শােধন করে বােনাই চাষীভাইদের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এবার বীজ শােধন করার পদ্ধতি নিয়ে আলােচনা করা থাক। প্রথমেই ১০-১২ লিটার জলে আধ কেজি সাধারণ লবণ মিশিয়ে তাতে ২-৩ কে.জি করে বীজ ফেলতে হবে। জলে ভেসে ওঠা অপুষ্ট বীজ ফেলে দিয়ে পুষ্ট বীজগুলি ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর প্রতি বীজে তিন-চার গ্রাম এগ্রোসান জি-এন মিশিয়ে বীজ শােধন করে নিতে হবে। এরপর এক লিটার জলে এক গ্রাম করবেনডাজিম (যেমন
ব্যাভিস্টান, ৫০% ডব্লু-পি প্রভৃতি) এবং এক গ্রাম এগ্রিমাইসিন মিশিয়ে এক কেজি বীজ ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে বুনতে হবে। এগ্রিমাইসিন ওষুধ পাতার ধসা রােগ দমন করে।
সার প্রয়ােগের পদ্ধতি :- আউস ধান ও মাটি পরীক্ষার পর তার ফলাফলের অনুযায়ী সার প্রয়ােগ করতে হবে। আলুর জমিতে আউস ধান চাষ করলে জমি তৈরীর সময় সার দেওয়ার প্রয়ােজন নেই। তবে গাছের বৃদ্ধিলাভ ও অবস্থা বুঝে চাপান সার দিলেই চলবে। কৃষি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুসারে আউস ধানে নিচে বর্ণিত হারে সার প্রয়ােগ করতে হবে।
১।বোনা আউশ - নাইট্রোজেন ১৮ কেজি, ফসফরাস ১২ কেজি ও পটাশিয়াম ১০ কেজি।
২। রোয়া আউশ - নাইট্রোজেন ২৫ কেজি, ফসফরাস ১১ কেজি ও পটাশিয়াম ১২ কেজি।
ব্রি: দ্রঃ এই সার ৩ বার দিতে হবে।
১। শেষ চাষের সময়
রোয়া আউশ নাইট্রোজেন ৭ কেজি, ফসফরাস ১১ কেজি, পটাশিয়াম ১২কেজি।
২। চাপান সার :-
বোনা ধান (বোনার ২০-২২ দিন পর ) নাইট্রোজেন ১১ কেজি।
রোয়া ধান (রোয়ার ১৪-১৫ দিন পর ) নাইট্রোজেন ১২ কেজি।
৩। বোনা ধান (বোনার ৪৪-৪৫ দিন পর )নাইট্রোজেন ৬কেজি।
রোয়া ধান (রোয়ার ২৮-৩০ দিন পর ) নাইট্রোজেন ৫ কেজি।
সি, এইচ, - ২৪৫ এবং দুলার ধান চাষে একরে মােট সার গায়ে ১০ কেজি করে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। সমস্ত ফসফরাস ও পটাশিয়াম এবং ৬ কেজি নাইট্রোজেন শেষ চাষের সময়। ৪ কে, জি, নাইট্রোজেন ধান বােনা ও রােষার ৩০ দিন পরে নিড়েন দেওয়ার পর চাপান সার হিসেবে প্রয়ােগ করতে হবে। এখানে বলে রাখা দরকার, সময় মতাে চাপান সারের ব্যবস্থা করলে ধানের অনেক ফলন বাড়ে।
__________________________________________________
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....