আধুনিক পদ্ধতিতে আমন ধানের চাষ। Amon paddy farming :
বর্ষার শুরুতে বা প্রাককালে জুলাই মাসে ( যথা আষাঢ়ের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবনের মাঝামাঝি ) আমন ধান রোযা হয় এবং অগ্রহায়ন মাস থেকে কাটা হয়।এই ধান চাষ করতে হলে চাষ সম্পর্কে সমস্ত বিষয় জানা খুবই প্রয়োজন। কোন জমিতে কোন ধান চাষ করতে হবে এবং চাষের জমি কিভাবে তৈরি করবেন সমস্ত তথ্য আপনারা এখান থেকে পাবেন। আসুন এবার এখান থেকে আমরা চাষ সম্পর্কে সব কিছু জানি।
➤আমন ধানের বিভিন্ন জাত রয়েছে। জাত গুলি জেনেনিন।
(১) দেশী জাত :- জল, চূর্ণকাটি, বাদকলমকাটি-৬৪, বাদকলমকাটি-৭, বাঁকুড়া-৩।
(২) মাঝারি জাত :- নাগরা-৪১/১৪, ভাসমানিক, পাটনাই-২৩, কলমা-২২২, রূপসাল, সীতাসাল, বাদশাভোেগ, দুধসর, লাঠিশাল, ঝিঙাশাল, ইন্দশাল, কলমকাটি, কাটারীভােগ, মালতু, হারকুম, বােলদার, দহিজিরা, সিন্দুরমুখী, কালাদুবরাজ, আজাম-২৪৬, কালিকলমা, নােনার নশাল, বাসমতি, রাঁধুনি পাগল, গােবিন্দভোেগ।
(৩) নাবিজাত :- মানিকলমা, রঘুশাল, এস-সি-৬৭৮, এস-সি ৬৭৮, এল-সি ১২৮১, ও-সি -১৩৯৩।
➤লবণাক্ত অঞ্চলে চাষ করার জন্য উন্নত জাতের ধান :
লবণাক্ত অঞ্চলে চাষ করার জন্য উন্নত জাতের ধান গুলি হলো - পাটনাই-২৩, এস-আর-২৬ ব, সীতাশাল, চিনসূরা ১৩, ও-সি ১৩৯৩, মাতলা, হ্যামিলটন এবং মােহন।
এখানে চাষীভাইদের বলে রাখি, পাটের ফসল তােলবার পর বা বন্যার পর ভাদ্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত রােয়া যায় এমন ধানের জাতগুলি হলাে, রত্না, পলমন-৫৬৯, আই-আর ২৮, আই-আর ৩০, আই-আর ২৬, আই-ই-টি ২৮৯৫, এম-আর ১৫৫০, আই-আর ২০, এন-সি ১২৮১, ও-সি ১৩৯৩, সি-আর ১০১৪।
➤আধুনিক পদ্ধতিতে আমন ধানের চাষের সঠিক নিয়ম কানুন।
মৃত্তিকা :-এই ধান চাষের জন্য এঁটেল মাটিতে দেশী জাত এবং বেলে-দোআঁশ থেকে এঁটেল পর্যন্ত যে কোনো মাটিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করতে হবে। অবশ্য যদি জলসেচ ও জল নিকাশের সু-ব্যবস্থা থাকে তাহলে ভালো হয়। ধান জমির পি এইচ ৫-৬.৫-এর মধ্যে থাকলে ভালো হয়।
জমি তৈরির পদ্ধতি :
বৃষ্টি হলে তার সুযােগ নিয়ে মাঘ-ফাল্গুন অথবা চৈত্র-বৈশাখ মাসে জমিতে দু'একবার চাষ দিলে আশানুরূপ ফসল পাওয়া যেতে পারে। তারপর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জমিতে বৃষ্টির জল দাঁড়ালে সেচ বা গভীর নলকূপের জল পাওয়া গেলে জমিতে তিন-চারবার কর্ষন করে মই দিয়ে মাটি উঁচু-নিচু থাকলে ভালভাবে সমান করে নিতে হবে। শেষ চাষ দেবার আগে জমিতে জল দাঁড় করিয়ে ৭-৮ দিন মাটি পচতে দিতে হবে।
প্রতি একর ৯-১০ গাড়ি গোবর সার বা আবর্জনা সার দেওয়া দরকার। জমি তৈরির সময় আলের ভিত কেটে তার গায়ে কাদের প্রলেপ দিতে হবে, যাতে করে আলের মধ্য দিয়ে জল চুঁইয়ে নষ্ট না হতে পারে।
বীজ শােধন পদ্ধতি :-
চারায় রােগ ও পােকার আক্রমণ রোধ করতে বীজের বাছাই ও শােধন করা একান্ত প্রয়ােজন। বীজ বাহিত রােগ প্রতিরােধের জন্য বীজ শােধন করে বােনাই চাষীভাইদের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এবার বীজ শােধন করার পদ্ধতি নিয়ে আলােচনা করলাম। প্রথমেই ১০-১২ লিটার জলে আধ কেজি সাধারণ লবণ মিশিয়ে তাতে ২-৩ কে.জি করে বীজ ফেলতে হবে। জলে ভেসে ওঠা অপুষ্ট বীজ ফেলে দিয়ে পুষ্ট বীজগুলি ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর প্রতি বীজে তিন-চার গ্রাম এগ্রোসান জি-এন মিশিয়ে বীজ শােধন করে নিতে হবে। এরপর এক লিটার জলে এক গ্রাম করবেনডাজিম (যেমন ব্যাভিস্টান, ৫০% ডব্লু-পি প্রভৃতি) এবং এক গ্রাম এগ্রিমাইসিন মিশিয়ে এক কেজি বীজ ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে বুনতে হবে। এগ্রিমাইসিন ওষুধ পাতার ধসা রােগ দমন করে।
➤ রোয়া তোলার পদ্ধতি :- বীজ তোলার চারা জমিতে রোয়ার পূর্বে রোয়া তোলার পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অতি যত্ন সহকারে (মাটিসহ) বীজতলা থেকে এমনভাবে তুলতে হবে যাতে শিকড়ে কোনো প্রকার আঘাত না লাগে।
![]() |
Image by Zeyd Ladha from Pixabay |
➤ আমন ধানের রোয়া বপনের নিয়ম :-
আমন ধানের চারার চার-পাচটি পাতা গজালেই বপন করা দরকার। এ ধানের চারা লাগানাের উপযুক্ত সময় হলাে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস। দেশী চার-পাচ সপ্তাহের এবং অধিক ফলনশীল জাতের তিন সপ্তাহের চারা লাগাতে হবে।প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রতি গুছিতে ৩-৪ টি চারা নিয়ে লাইন থেকে লাইন ৮ ইঞ্চি এবং গুছি থেকে গুছি ৬ ইঞ্চি দূরত্বে রুইতে হবে।
দেশী জাতের আমনের চারা উর্বর জমিতে ১২x১২ ইঞ্চি (৩০x৩০ সে. মি.) এবং অনুর্বর জমিতে ৮x৬ ইঞ্চি ২০x১৫ সে.মি.) দূরত্বে দুটি করে চারা লাগাতে হবে। অধিক ফলনশীল জলধি জাত ৬x৬ ইঞ্চি (১৫x১৫ সে. মি.) দূরত্ব ব্যবধানে এবং ৬x৯ ইঞ্চি (১৫x২২.৫ সে. মি.) দূরত্বের ব্যবধানে চারা লাগাতে হবে। চারা রােপনের আট-দশদিন পরে চাষের জমিতে ঘুরে দেখতে হবে যদি কোনাে চারা মরে গিয়ে থাকে সে জায়গায় ওই একই জাতের নতুন চারা লাগিয়ে দিতে হবে। এর জন্য আগে-ভাগেই রােয়ার পর জমির এক কোণে কিছু বাড়তি চারা লাগিয়ে রাখতে হবে।
➤ সারপ্রয়োগ পদ্ধতি :
আমন ধান ও আমন ধানের ক্ষেত্রে জমি তৈরীর সময় একরে ৬ কে. জি, ফসফরাস এবং ৬ কে. জি. পটাশিয়াম প্রয়ােগ করতে হবে। রােয়ার ২৪-২৫ দিনের মাথায় প্রতি একরে ৫ কেজি, নাইট্রোজেন এবং কাঁচাহােড় পর্যায়ে ৫ কে. জি. নাইট্রোজেন চাপান হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। এতাে গেলাে দেশী জাতের আমনের ব্যাপার।
___________________________________________________
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....