আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্ছে চাষ। Bitter Ground cultivation:
উচ্ছের বিজ্ঞানসম্মত নাম Momordica charautia . উচ্ছের চাষ বর্তমানে ব্যাপক হরে হয়। এটি একদিকে যেমন সবজি হিসাবে তেমনি অন্যদিকে ভেষজ ঔষধি সবজি হিসাবে ব্যবহার হয়। যেমন উচ্ছের খাদ্যগুণ—
উচ্ছের রস খেলে উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)কমে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত থাকে। এটি একটি রক্ত পরিষ্কারক উপাদান।উচ্ছের রস অর্শ রােগ (Piles)-এর উপশম করে।
উচ্ছেতে প্যানটিসুলিন থাকে যা রক্তে ও মূত্রে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে বহুমূত্র রােগ (Diabetes) নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর জন্য ৪/৫ টি ফলের রস সকালে খালি পেটে খেতে হবে।উচ্ছে একটি ক্যান্সার রােগ প্রতিরােধ সবজি। সেজন্য নিয়মিত উচ্ছে খেতে হবে।

চাষবাস বারোমাস। Bengali Agriculture

এক চামচ উচ্ছের রস ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে কলেরা (Cholera) রােগ ভালাে না হওয়া পর্যন্ত খেয়ে যেতে হবে। উচ্ছে রস নিয়মিত খেলে কোষ্ঠবদ্ধতা (Constipation) দূর হয়। কারণ এটি পরিপাক ক্রিয়ার কাজকে ত্বরান্বিত করে।২৫-৩০ গ্রাম উচ্ছের রস অল্প মধু মিশিয়ে খেলে শ্বাসনালীর প্রদাহ মূল ব্যাধি (Bronchitis) রােগের উপশম হয়।উচ্ছে চোখের রােগ-এর সুস্থতা রক্ষা করে ও যে কোন প্রকার রােগ সারাতে কাজ দেয়। তাই বাজারে এই সব্জিটির প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
মাটি ও জলবায়ু :
প্রায় সব ধরনের মাটিতে শুষ্ক ও উষ্ণ আবহাওয়ায় ভালাে হয়। মাটির পি.এইচ. ৬.৫-৭ হলে ভালাে।
জাত :
উচ্ছে— উন্নত-বােল্ডার, ঝুমকা, অর্ক হরিৎ।
হাইব্রিড-মাহিকো গ্রীন লঙ, মাহিকো হােয়াইট লঙ, মিডােরি লঙ, পাঞ্চালী, এসবিটিএইচ-১০১ ও ১০২, ইউএস-৬২১৪।
বীজের পরিমাণ।
উন্নত—৬০০-৭৫০ গ্রাম/বিঘা; হাইব্রিড জাত—২৫০-৩০০ গ্রাম/বিঘা।
বীজশােধন : মিষ্টি কুমড়াের মতাে।
বীজ লাগানাের সময় : গ্রীষ্ম—অগ্রহায়ণ-পৌষ (নভেম্বর-জানুয়ারি) এবং বর্ষা-জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় (জুন-জুলাই)।
বীজ কত দূরত্ব : ৪ ফুট x ২ ফুট। প্রতি মাদাতে ৩-৪টি বীজ বসবে।
জমি তৈরি ও সার দেওয়া :
২৫-৩০ কুইন্টাল আবর্জনা সার বা কম করে ৫০ কেজি খােল এবং ২ কেজি অ্যাজোস বিঘা (৩৩ শতক) প্রতি মাদাতে দেওয়া হয়। বিঘা প্রতি রাসায়নিক সারের মাত্রা হবে নীচের মতাে।
উন্নত জাতের ক্ষেত্রে জমি তৈরির সময় নীচের যে কোনাে একটি সেটের সার বিঘা প্রতি দিন।
সেট-১ ইউরিয়া ২১ কেজি, সি.সু.ফসফেট ৫৮.৫ কেজি, মিউ. পটাশ ৬ কেজি
সেট-২ ইউরিয়া ৮ কেজি, ডি এ.পি. ২১ কেজি, মিউ. পটাশ ৬ কেজি
সেট-৩ ইউরিয়া ১৬.৫ কেজি এনপিকে ১৮ কেজি (১০:২৬:২৬) সি.সুফসফেট ২৯ কেজি
চাপান সার—
(বীজ বসানাের ২১ ও ৪০ দিনের পর প্রতিবারে নীচের মতাে সার)
ইউরিয়া—১০.৫ কেজি,মিউরেট অব পটাশ—৩ কেজি।
হাইব্রিড জাত
জমি তৈরির সময় নীচের যে কোনাে একটি সেটের সার বিঘা প্রতি দিন।
সেট-১ ইউরিয়া ২৯.৫ কেজি, সি.সু.ফসফেট ৮৩.৫ কেজি। মিউ, পটাশ ৯ কেজি।
সেট-২ ১২ কেজি ইউরিয়া, ডি এ.পি. ২৯.৫ কেজি এবং মিউ. পটাশ ৯ কেজি।
সেট-৩ ২৩.৫ কেজি ইউরিয়া, এনপিকে-২৬ কেজি, সি.সুফসফেট ৪১.৫ কেজি। (১০:২৬:২৬)
চাপান সার—(বীজ বসানাের ২১ ও ৪০ দিনের পর প্রতিবারে নীচের মতাে সার)
ইউরিয়া- —১৫ কেজি, মিউরেট অব পটাশ—৪.৫ কেজি।
ঐ সার মাদাতে দিলে মাদা পিছু সারের পরিমাণ নিম্নরূপ-
উন্নত জাতের জন্য মাদা ৪০ গ্রাম খােল।সি.সু.ফস./ডি.এ.পি ৩৫/১২ গ্রাম। মিউরেট অব পটাশ ৩.৫ গ্রাম
হাইব্রিড জাতের জন্য মাদা।খােল ৫০ গ্রাম, সি.সু.ফস./ডি.এ.পি ৪৫/১৭ গ্রাম, মিউরেট অব পটাশ ৫ গ্রাম।
উন্নত জাতের জন্য
চাপান—(বীজ বসানাের ২১ ও ৪০ দিন পর প্রতিবারে নীচের মতাে সার)
ইউরিয়া ৭ গ্রাম ,মিউরেট অব পটাশ ২ গ্রাম।
হাইব্রিড জাতের জন্য মাদা। ইউরিয়া ১০ গ্রাম, মিউরেট অব পটাশ ২.৫ গ্রাম।
অণুখাদ্যের অভাব মেটানাের জন্য বিঘা প্রতি ৩.৫ কেজি জিঙ্ক সালফেট, ১.৫ কেজি বােরাক্স ও ৭৫ গ্রাম অ্যামােনিয়াম মলিবডেট বীজ বসানাের সময় মাটিতে প্রয়ােগ করা যায়।
গাছের যত্ন নেওয়া : গাছের ৩ সপ্তাহ বয়সের মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করে চাপান সার দিয়ে গাছের গােড়া বেঁধে দেওয়া হয়। বােরনের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে গাছের কাণ্ড বা লতা ফেটে যায়। প্রতি লিটার জলে ১.৫ গ্রাম অক্টাবােরেট বা ২.৫ গ্রাম বােরাক্স গুলে স্প্রে করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পাতায় স্প্রে করার অণুখাদ্য মিশ্রণ প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম/মিলি গুলে স্প্রে করা হয়। উচ্ছে গাছে বেশি সালফার প্রয়ােগের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
ফসল তােলা ও ফলন : বীজ বসানাের ২ মাস পর থেকে ফলন তােলা সম্ভব। বিঘা প্রতি উন্নত জাতের ফলন ১০-১৫ কুইন্টাল এবং হাইব্রিড জাতের ফলন ৪০-৫০ কুইন্টাল পাওয়া সম্ভব ।
শস্য রক্ষার করণীয় পদ্ধতি :
কুমড়াের লাল পােকা : লাল, কালচে লাল বর্ণের পূর্ণাঙ্গ পােকা কচি পাতা ও ফুল খেয়ে ফেলে। এই পােকার বাচ্চা মাটির ভিতরের শিকড় ও কাণ্ড খেয়ে ফেলে।এছাড়া প্রতি লিটার জলে ২.৫ গ্রাম সেভিন বা ২ মিলি মার্শাল গুলে স্প্রে করা যায়।
ফলের মাছিঃ
কচি ফলের ওপর ছিদ্র করে ডিম পাড়ে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বার হয়। বাচ্চা ফলের নরম অংশ খেতে শুরু করে। ২ লিটার জলে ৫০০ গ্রাম গুড়, ২০ গ্রাম কার্বারিল ও ২০ গ্রাম ইস্ট গােলা হয়। ঐ জল অল্প অল্প করে অনেকগুলি পাত্রে নিয়ে ক্ষেতে বসালে মাছি ঐ পাত্রের বিষাক্ত টোপে আকৃষ্ট হয়ে মারা যায়। এছাড়া প্রতি লিটার জলে ০.৭৫ মিলি নুভান গুলে স্প্রে করা যায়।
বাঘা পােকা বা এপিল্যাকনা বিটল :
কালাে টিপযুক্ত লাল বর্ণের পূর্ণাঙ্গ পােকা ও ঐ পােকার কাঁটাযুক্ত বাচ্চা পাতার ক্লোরােফিল খেয়ে ঝাঝরা করে দেয়। প্রতি লিটার জলে ২ মিলি একালান্স বা ২ মিলি মার্শাল গুলে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায়।
নেমাটোড : নেমাটোড বা মাটির কৃমি শিকড়ে বাসা বাঁধে। শিকড়ে ফোলা ফোলা গাঁট তৈরি হয়। গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। বীজ বসানাের সময় মাদা পিছু ৫ গ্রাম ফুরাডন দানা দেওয়া হয়। এছাড়া জমি তৈরির সময় বিঘা প্রতি ১৩০ কেজি সদ্য প্রস্তুত নিম বা করঞ্জা প্রয়ােগ করলে উপকার পাওয়া যায়।
সাদা পাউডার রােগ :
পাতায় ধূসর দাগ হয়। ঐ দাগের ওপর সাদা পাউডার জমে। আঙুল ছোঁয়ালে পাউডার লেগে যায়। পরে পাতা ঝরে যায়। প্রতি লিটার জলে ০.৭৫ মিলি টিল্ট বা ১ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা ০.৫ গ্রাম ক্যালিক্সিন গুলে স্প্রে করা হয়।
আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি, ফসল চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।
______________________________________________________________________________
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....