আধুনিক পদ্ধতিতে রজনীগন্ধা ফুলগাছ চাষ করুন।
ফুল সুন্দর ও পবিত্র। ফুল মানুষের ঘর ও বাগানকে সাজায়। ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা ও ভালোবাসার শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান করা হয়। ফুল দ্বারা দেব দেবীর পূজা অর্চনা করা হয়।ফুলের প্রয়োজনীয়তা চিরকালীন।জন্ম ,মৃত্যু ও বিবাহ তে ফুলের গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য ফুলের ব্যবহার ও চাহিদা সবসময়ের জন্য রয়েছে। তাই ফুল চাষ করা লাভজনক। ফুল চাষ সঠিক নিয়ম মেনে করুন আর সর্বাধিক লাভ ঘরে তুলুন। আপনারা ফুলচাষের সমস্ত নিয়ম কানুন এখানে পাবেন। আসুন এবার জেনে নিন কিভাবে কি করবেন।
উপযোগী মাটি :
অবাধ সূর্যালােকপ্রাপ্ত, উত্তম জলধারণ ও জল নিষ্কাশন ক্ষমতাযুক্ত পলি- দোআঁশ থেকে কাদা-দোআঁশ মাটি রজনীগন্ধা চাষের পক্ষে উপযােগী। বেলে-দোআঁশ মাটিতে চাষ করলে ঘন ঘন সেচ দিতে হয় এবং কৃমি শত্রু বা নিমাটোড আক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সামান্য অম্ল থেকে নিরপেক্ষ (pH ৫.৫-৭.০) মাটি রজনী-গন্ধার পক্ষে আদর্শ।
আবহাওয়া :
রজনীগন্ধা আর্দ্র ও উষ্ণ জলবায়ু পছন্দ করে। শীতের সময় গাছের পাতা শুকিয়ে আসে এবং মাটির নীচে কন্দ বাড়ে না। রজনীগন্ধা চাষের জন্য ৩০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা, ৯০-৯৫ শতাংশ বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রর্তা, ১৫০- ২৫০ সেমি বৃষ্টিপাত এবং বড়াে দিনের (long day) প্রয়ােজন।
জাত : রজনীগন্ধার প্রধানত দুটি প্রকার আছে, যথা— একস্তর দলবিশিষ্ট (single stick) এবং বহুস্তর দলবিশিষ্ট (double or multiple stick)।
একস্তর দলবিশিষ্ট প্রকার — শৃদ্দার, কলিকাতা সিঙ্গল, মেক্সিকান সিঙ্গল।
দ্বিস্তর দলবিশিষ্ট প্রকার পার্ল, সুবাসিনী,কলিকাতা ডাবল, ডােয়াফ পার্ল এক্সেলসিয়ার।
বংশ বিস্তার :
রজনীগন্ধার ভূ-নিম্নস্থ কাণ্ড বা কন্দ থেকে সহজে চারা প্রস্তুত করা যায়। আবার উর্বর মাটিতে একটি পরিণত গাছ অল্পদিনের মধ্যেই অসংখ্য বিয়ান (seedling) বা চারা গাছ তৈরি করতে পারে, যেগুলি পরিণত অবস্থায় ফুলমঞ্জরী উৎপন্ন করতে পারে।
জমি তৈরি ও মূল সার প্রয়ােগ :
রজনীগন্ধার কন্দ বসানাের জন্য মাটি বেশ নরম ও গভীর হওয়া প্রয়োজন। তিন-চারবার গভীর ভাবে চাষ দিয়ে ও মাঝে মাঝে মই দিয়ে মাটিকে প্রথমে বেশ ভালাে ভাবে ভেঙে নিতে হবে। জমি মসৃণ করে নেওয়ার পর জলসেচ ও জলনিকাশের নালিগুলি তৈরি করতে হবে। জলসেচ নালির সঙ্গে আড়াআড়ি ভাবে কন্দ বা বীচন বসানাের নালি তৈরি করতে হবে।
জমি তৈরির সময় হেক্টর প্রতি ১৫-২০ টন পচানাে খামারের সার বা কম্পােস্ট, ৫ টন কেঁচো সার জমিতে ছড়িয়ে দিয়ে মাটির সঙ্গে ভালাে ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এর পর শেষ চাষের সময় রাসায়নিক সার কন্দ বসানাের নালিতে প্রয়ােগ করে মাটির সঙ্গে ভালাে করে মিশিয়ে দিতে হবে। চারার গােড়া পচা রােগ প্রতিরােধের জন্য এই সময় কন্দ বসানাের নালিতে ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়ােগ করা উচিত।
রজনীগন্ধার কন্দ লাগানাের সময়সীমা :
মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত, আবার মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত জমিতে কন্দ লাগানাে যায়।বীজ ও কন্দ থেকেই এর চারা তৈরি করা হয়। কন্দ লাগানাের আগে ১০ লিটার জলে ৪০ গ্রাম ব্লাইটক্স মিশিয়ে ১০-১৫ কেজি কন্দ ৫ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে শােধন করে নেওয়ার পর তা ছায়াতে শুকিয়ে নিতে হবে। কন্দগুলি যুগ্ম বা দ্বি-সারি পদ্ধতিতে লাগানাে হয়।এর জন্য ২০সেমি দূরত্বে ২টি সারি তৈরি করে পরবর্তী ২টি সারি ৪০ সেমি ব্যবধানে তৈরি করা হয়।
প্রতি সারিতে ১০ সেমি চওড়া ও ৪ সেমি গভীর নালা তৈরি করে এতে পরিমাণ মত রাসায়নিক সার মিশিয়ে জমি তৈরি করে রাখা হয়। মাটিতে ভাল রস না থাকলে হালকা সেচ দেওয়া হয় এবং দু-একদিন পরে প্রতি সারিতে ২০ সেমি দূরত্বে কন্দগুলি মাটির ৫-৬ সেমি গভীরে বসানাে হয়।বসানোর সময় ১/২ টি খুঁটি গাছের খুব কাছে গভীরভাবে পুঁতে দিয়ে ঠ্যাকনার ব্যবস্থা করতে দেবেন। এক হেক্টর জমির জন্য ২৫ হাজার পুষ্ট ও সুস্থ কন্দের দরকার।
রজনীগন্ধার চাষে সার প্রয়ােগ পদ্ধতি :
রজনীগন্ধার জন্য হেক্টর প্রতি ২০০ কেজি নাইট্রোজেন, ১৫০-২০০ কেজি ফসফেট এবং ১৫০-২০০ কেজি পটাশের প্রয়ােজন। এই পরিমাণ সারকে তিন ভাগে ভাগ করে প্রথম বছর বীজ বসানাের নালিতে এক ভাগ, বীজ বসানাের ৪৫ দিন পরে এবং ৯০ দিন পরে বাকি দুই ভাগ সার দু’বারে প্রয়ােগ করা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে মার্চ-এপ্রিল, আগষ্ট-সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে তিন দফায় ওই সার প্রয়ােগ করা হয়। গাছের সারির দুধারে সার প্রয়ােগ করে মাটির সঙ্গে ভালাে করে মিশিয়ে গাছের গােড়াতে সেই মাটি ধরিয়ে দিতে হয়। জমিতে কম রাসায়নিক সার প্রয়ােগ করে এর সাথে বছরে তিন দফায়, প্রতিবারে হেক্টর প্রতি ৫০০ কেজি হিসাবে গুঁড়াে সরিষার খােল বা নিমখোল প্রয়োগ করতে পারেন।
জলসেচ :
জমিতে সঠিক মাত্রায় সেচ প্রয়ােগের মাধ্যমে সারা বছর ধরে। প্রচুর পরিমাণে ফুল পাওয়া যায়। কন্দ বসানাের আগে হালকা সেচ দিয়ে ‘জো আসার পর কন্দ লাগানাে হয়। এরপর যতদিন পর্যন্ত ভালাে ভাবে পাতা উৎপন্ন হয়, ততদিন পর্যন্ত জমিতে হালকা সেচ দিতে হয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে ১০-১২ দিন অন্তর এবং শীতকালে ১৫ দিন অন্তর মাটি বেশ ভিজিয়ে জলসেচ দিতে হবে। তবে বর্ষাকালে জমিতে উপযুক্ত জল নিকাশের বন্দোবস্ত রাখতে হবে।
অন্তর্বর্তী পরিচর্যা :
জমিতে কন্দ বসানাের দু সপ্তাহ মধ্যে সরস মাটি ঠেলে অঙ্কুর বেরােয় ও গাছ পাতা ছাড়ে। এই সময় জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে।এজন্য ২-৩ সপ্তাহ অন্তর আগাছা দমন ও গাছের গােড়ার মাটি আলগা করে দেওয়া দরকার।
ফসল তােলা ও পরবর্তী পরিচর্যা :
জমিতে পরিণত কন্দ বসালে (২.৫ সেমি ব্যাস বিশিষ্ট) ৮০-৯০ দিনের মাথায় গাছে ফুল আসে। বেশি শীত পড়লে গাছে ফুলের উৎপাদন কমে যায়। প্রতি বছর মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বেশি পরিমাণ ফুল পাওয়া যায়। সাধারণত সন্ধ্যেবেলায় বেশি ফুল ফোটে।
মঞ্জরিতে ফুল ফোটার একদিন আগে যখন কুঁড়ি গুলি সবুজাভ সাদা রঙের হয় এবং বেশির ভাগ ফুল কুঁড়ি অবস্থায় থাকে, সেই সময় সকালে বা বিকালে ধারালাে অস্ত্রের সাহায্যে মঞ্জরীদণ্ডটি কেটে নিতে হয়। এর পরে ঠাণ্ডা জলে গােড়াগুলি কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখার পর জল থেকে তুলে ১২টি, ১০০টি বা ১০০০টির গােছ বেঁধে বাজারে পাঠানাে হয়। গােছাগুলি ০.১ শতাংশ তুঁতের দ্রবণে ডুবানাে কলাপাতা দিয়ে হালকা ভাবে বেঁধে ঝুড়িতে সাজিয়ে বাজারে পাঠানাে হয়।
ফলন : প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩৫০০-৪০০০টি রজনীগন্ধার ডাঁটি পাওয়া যায় এক হেক্টর জমি থেকে। একটি ভালাে আকারের মঞ্জরীতে ৯০-১০০টি ফুল থাকে। ওজন হিসাবে হেক্টর প্রতি বছরে ১০,০০০-১২,০০০ কেজি ডাঁটিপাওয়া যায়।
ফুল সংরক্ষণ :
ফুলগুলি ম্লান হয়ে শুকিয়ে এলে অল্প সময়ের জন্য পাতলা তুঁতের শীতল দ্রবণে ডুবিয়ে নিলে মছজরীর উজ্জ্বলতা ও সতেজতা ফিরে আসে। ফুলদানিতে সংরক্ষণের জন্য প্রতি লিটার জলে এক চা চামচ লবণ বা তিন চামচ চিনি বা একটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়া দৈনিক ফুলদানির জল পাল্টে এবং ডাঁটির জলে ডােবা অংশ কিছুটা কেটে দিতে হবে।তবে জলে অল্প পুঁতে বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা কপূর মিশিয়ে নিলে নিয়মিত জল পাল্টাতে হবে না।
রজনীগন্ধার রােগ-পােকার আক্রমণ ও তার প্রতিকার :
রােগ : রজনীগন্ধা পাতার ধ্বসা রােগ, ডাঁটির গােড়া পচা, গাছের গােড়া বা কন্দ পচা, পাতায় কালাে দাগ, পাতার ডগা শুকিয়ে আসা প্রভৃতি ছত্রাকজনিত রােগে আক্রান্ত হয়। এর জন্য উপযুক্ত জল নিষ্কাশন, কন্দ শােধন ইত্যাদি ছাড়াও রােগ দেখা মাত্র ০.২৫ শতাংশ ইন্দোফিল এম-৪৫ বা ডাইথেন এম-৪৫ এর দ্রবণ দিয়ে (হেক্টর প্রতি ৭৫০ লিটার) গাছের গােড়া পর্যন্ত ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। প্রায় ১৫ দিন পরে আর একবার স্প্রে করা উচিত।
পােকা : লেদা পােকা, ফুলের কুঁড়ি খাওয়া পােকা, সবুজ ফড়িং, শােষক পােকা ইত্যাদি হল রজনী গন্ধার প্রধান কীটশত্রু। এই পােকাগুলির উপদ্রব দেখা দিলে নুভাক্রন ৩৬ ইসি বা মেটাসিড ৫০ ইসি এর ০.১ শতাংশ মিশ্রণ ১৫ দিন ছাড়া ছাড়া আক্রান্ত গাছে স্প্রে করতে হবে।
আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি, ফসল চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।
____________________________________________________________________________________
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....