Type Here to Get Search Results !

উন্নত জাতের গমের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানুন। Wheat Seeds.

উন্নত জাতের গম।  Wheat Seeds :

 মেক্সিকোর আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম গবেষণা কেন্দ্রের প্রখ্যাত নােবল বিজয়ী বিজ্ঞানীডঃ নরম্যান ই, বােরলনা এবং তাঁর সহযােগী বিজ্ঞানীগণ বেঁটে জাতের গম উদ্ভাবনে সক্ষম হলে ১৯৬১ সালে বেঁটে জাতের ওই সব গম মেক্সিকোতে ব্যাপক চাষের ছাড়পত্র পেয়ে যায় এবং অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। এই নিরীখে ১৯৬৩ সালে ডঃ বােরনের সৌজন্যে ভারতীয় কৃষি-গবেষণা কেন্দ্র লারসারােজা-৬৪-এ, সােনােরা-৬৩ এবং সােনােরা-৬৪, এ ধরনের তিনটি বেঁটে জাতের গম আমাদের সারা দেশে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য নিয়ে আসে।দিল্লী, পাঞ্জাব এবং পন্থনগরে প্রাথমিক পরীক্ষার পর ১৯৬৪-৬৫ সালে সারা ভারত গমােন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই জাতের গম তিনটি বিভিন্ন রাজ্যে পরীক্ষা করে দেখার জন্যে দেওয়া হয়। আর এর থেকেই দেশে গমের চাষ শুরু হয় এবং সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়।

উন্নত জাতের গমের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানুন। Wheat.
Image by $uraj tripathi from Pixabay 


➤ উন্নত জাতের গমের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানুন। 


গম চাষ করার আগে বিভিন্ন ধরণের উন্নত জাতের গম সম্পর্কে জেনে নিয়ে গম চাষ করুন। তাহলেই আপনি সঠিক ভাবে সাফল্য পাবেন। নিচে কিছু উন্নত জাতের গমের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আপনাদেরকে অবগত করছি।

১। কল্যাণসােনা (এইচ-ডি-১৫৯৩) :-  মেক্সিকো থেকে সংগ্রহ করা এস-২২৭ সংকর থেকে নির্বাচিত দুই জিনযুক্ত বেঁটে জাতের গম। এগুলি গম উৎপাদন এলাকার জন্য অনুমােদিত জাত। এই সব গম গাছের উচ্চতা ১০০ সে. মি. হয়। বােনার ৬৫-৭০ দিন পর গাছে ফুল আসে এবং ১২০-১৩০ দিনে পাকে। প্রতিটি গাছে ৭-৮টি পাশকাঠি বের হয়। এ গাছের শীষ লম্বা হয় এবং শুড়ওলা দানা থাকে। ১০০০টি দানার ওজন ৩০-৩৫ গ্রাম হয়। সেচ ও অসেচ উভয় এলাকায় এ হলাে উপযােগী জাত। ভুযােরােগ এবং পাতাঝলসানাে রােগ প্রতিরােধক্ষম জাত। প্রতি একরে ২৫-২৬ কুইন্টাল গড়ের ফলন হয়।

২। সােনালিকা (এইচ-ডি-১৫৫৩) :-   মেক্সিকোর মিশ্র নমুনা (এস-৩০৮) থেকে নির্বাচিত এক দিনযুক্ত বেঁটে জাতের গম। এটি হলাে গম উৎপাদিত এলাকার জন্য অনুমােদিত জাত। এ গাছের উচ্চতা ৯০-১২৫ সে. মি. পর্যন্ত। বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ১২০-১৩৫ দিনে পাকে। লম্বাও শুড়ওলা প্রতিটি শীষে ৩৫-৪০টি দানা থাকে এবং ১০০০টি দানার ওজন ১০৫০ গ্রাম হয়। দানা পুষ্ট, শক্ত ও হলুদ রঙের হয়। মরচে রােগের প্রতিরােধক্ষম জাত। তবে ভুযাে রােগে সামান্য আক্রান্ত হতে পারে, তাতে ফসলের খুব একটা ক্ষতি হয় না। প্রতি একরে ২৪-২৫ কুইন্টাল ফলন হয়।

(৩) সরবতী সােনারা :-  সােনারা-৬৪ জাতের গমের একটা বিশেষত্ব হলাে এই যে,  সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় রঞ্জন রশ্মি প্রয়ােগ করে এই জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি হলাে দুই জিন যুক্ত বেঁটে জাতের গম। গম উৎপাদন এলাকার জন্য অনুমােদিত জাত। ১১৫-১২০ দিনে পাকে। আর নাবি বােনার উপযুক্ত জাত গুড়ওলা শীষে ৩৫-৪০টি দানা থাকে। ১০০০টি দানার ওজন ৩৪-৩৫ গ্রাম হয়। দানা মাঝারি পুষ্ট এবং হলুদ রঙের হয়। মরচে ও ভুষাে রােগে খুব সহজেই আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রতি একরে ২৪-২৫ কুইন্টাল  ফলন হয়।

(৪) সােনারা-৬৪ :-      ১৯৬৫ সালে মেক্সিকো থেকে আমদানীকৃত এই জাতটি চাষের জন্য সুপারিশ করা হয়। দুই জিনযুক্ত বেঁটে জাতের গম। গম উৎপাদন এলাকার উপযুক্ত জাত। গাছের উচ্চতা ৭৫-৮০ সে. মি.। প্রতিটি গাছ থেকে তিন-চারটি পাশকাঠি বের হয়। বীজ বপন করার ৫৫-৬০ দিন পর গাছে ফুল আসে এবং ৯৫-১০০ দিনে পাকে। প্রতিটি শীষ ৩০-৩৫টি দানা থাকে। ১০০০টি দানার ওজন ৩০-৩৫ গ্রামে। হলদেটে মরচে রােগে এই ফসল আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতি একরে ১০-১২ কুইন্টাল ফলন হয়।

(৫) সফেদ লারমা (এস-৩০৭) :-  এটিও মেক্সিকো থেকে আমদানী করা হয়। এই জাতটি এক জিনযুক্ত বেঁটে প্রকৃতির। গাছের উচ্চতা ৮০-৯০ সে. মি. হয়। প্রতিটি গাছে  ৭-৮টি পাশকাঠি বের হয়। বােনার ৬০-৬৫ দিন পরে গাছে ফুল আসে, এবং ১১৫-১২০ দিনে পাকে। প্রতি শীষে ৩৫-৩৬টি দানা থাকে। দানা মাঝারি লম্বা, নরম ও সাদা রঙের হয়। এই গমে তৈরী বিস্কুট উৎকৃষ্ট ধরনের হয়। কিন্তু রুটি তৈরীর পক্ষে ততােটা ভাল নয়। মরচে রােগ প্রতিরােধক্ষম জাত। তবে পাতা ঝলসানাে রােগে আক্রান্ত হতে পারে। নভেম্বরের শুরুতে এই জাতটির গমের বীজ বপন করার আদর্শ সময়। এই গম সাধারণত পার্বত্য অঞ্চল, মহীশূর, অন্ধপ্রদেশ এবং বিহারে চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। প্রতি একরে ২০-২২ কুইন্টাল ফলন হয়।

(৬) ছােট লারমা (এস-৩৩১) :-   মেক্সিকো থেকে আমদানীকৃত এই জাতটিও এক জিনযুক্ত বেঁটে প্রকৃতির। গম উৎপাদন এলাকার পক্ষে উপযুক্ত জাত। গাছের উচ্চতা ৭৫-৮০ সে. মি. হয়। বীজ বপনের ৬৫০৭০ দিনের পর গাছে ফুল আসে। আর ১৩৫-১৪০ দিনে পাকে। প্রতিটি শীষে ছােট, মাঝারি, শক্ত ও বাদামী রঙের ৩৫-৪০টি দানা থাকে। এটি বিস্কুট তৈরীর পক্ষে উপযুক্ত জাত। তবে রুটি তৈরীর পক্ষে ভালাে নয়। এ জাতের গাছ মরচে রােগ প্রতিরােধ করতে সক্ষম। প্রতি একরে ২৪-২৫ কুইন্টাল ফসল হয়। এই জাতের গম নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রােপণ করলে ভাল হয়।

(৭) জনক (এই.ডি.১৯৮২) : -   এই জাতের গম উদ্ভাবিত হয় ভারতীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে। এটি দুই জিনযুক্ত বেঁটে জাতের সংকর (ই ৫৫৫৭xএইচ-ডি ৮৪৫) গম। বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিনে ফুল আসে এবং ১১৫-১২০ দিনে ফসল পাকে। অসম, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর প্রদেশের পক্ষে এ গম চাষের উপযুক্ত। দানা বেশ শক্ত, ঝকঝকে-চকচকে এবং হলুদ রঙের হয়। বাদামী মরচে প্রতিরােধ করার পক্ষে এ জাতের বেশ সক্ষম। এটি জলধি জাতের হলেও নাবিতে বােনা যায়। এ জাতের গম প্রতি একরে ২৪-২৫ কুইন্টাল হয়।

(৮) হিরা (এই. ডি-১৯৪১) :-     এটি তিন দিনযুক্ত সংকর (পিটিক্সিxসােনারা-৬৪) জাতের বেঁটে গম। এ জাতের গম চাষের জন্য অনুমদিত রাজ্যগুলি হলাে জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লী, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশ। এ জাতের গমগাছগুলি মরচে ও পাতা ঝলসানাে রােগ প্রতিরােধ করতে সক্ষম। এ জাতের বীজ নভেম্বরের মধ্যেই বপন  করা দরকার। কারণ দেরীতে বুনলে মরচে রােগে আক্রান্ত  হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

(৯) ইউ-পি -২৬২ :-   পন্থনগরে গমের এই জাতটি সংকরায়ণ (এম -৩০৯ x বোজিও) করে উদ্ভাবন করা হয়। এর দানা খুবই পুষ্ট, শক্ত এবং বেশ আকর্ষণীয়।এই জাত তিন  প্রকার মরচে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। এর শীষ লম্বা এবং  রোঁয়াযুক্ত।  ১১৫-১২০ দিনে ফসল পাকে। পশ্চিমবঙ্গে নাবি বোনার উপযুক্ত জাত। প্রতি একরে ২৫-২৬ কুইন্টাল গম ফলন হয়।

(১০) ইউ-পি- ২১৫ :-   এই জাতের গম দুই জিনযুক্ত। এই গাছের উচ্চতা  ১০৫ -১১০ সেমি । এই জাতের গম তিন রকম মরচে রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। দানা মাঝারি শক্ত ও হলুদ রঙের হয়। রুটি তৈরির পক্ষে উপযুক্ত গম।এই জাতের গম চাষের জন্য মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশ অনুমোদন  লাভ করেছে।এসব রাজ্যে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই বীজ বপন করতে হবে।  ফসল পাকতে সময় লাগে ১০৫ - ১১০ দিন।প্রতি একর ২১ -২২
 কুইন্টাল গম ফলন হয়।

(১১) ইউ-পি-৩০১ :-  এই জাতের গম আবিষ্কৃত হয় পন্থনগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটি তিন জিনযুক্ত বেঁটে জাতের গম। এর দানা শক্ত, রঙ হলুদের মতো এবং রুটি ও পাউরুটি তৈরীর উপযুক্ত জাত। সাধারণত উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চল, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, মহীশূর এবং অন্ধপ্রদেশে এ জাতের গমের ফলন ভাল হয়। নভেম্বর মাসের মধ্যেই এই গমের বীজ বপন করতে হবে। এ জাতের গমের গাছ মরচে রােগ প্রতিরােধ করতে যথেষ্ট সক্ষম। প্রতি একরে ২৪ -২৫ কুইন্টাল ফলন হয়।

(১২) গিরিজা (এইচ-এস-১০৯৭-১৭) :-  এক জিনযুক্ত বেঁটে জাতের এই গমটি ভারতীয় কৃষি প্রতিষ্ঠানে সংকরায়ণ (ই-৫১৬৫xই-৪৭১৭) করে উদ্ভাবন করা হয়। এর দানা মাঝারি আকারের। এটি শক্ত জাতের গম এবং এর রঙ হলদে। হিমাচলপ্রদেশ, জন্ম ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চল এবং পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলে চাষের উপযােগী হলাে এই জাতের গম। এ জাতের গমগাছ হলদে মরচে রােগ প্রতিরােধ করার ক্ষমতা রাখে। সেই সঙ্গে কালাে, বাদামী ও পাতা ধসা রােগও মােটামুটি প্রতিরোধ করতে পারে। ১৭৫ দিনে ফসল পাকে। প্রতি একরে ১৯-২০ কুইন্টাল ফলন হয়।

(১৩) শৈলজা (এইচ-এস-১১৩৮-৬-৪) :-  এই গম দুই দিনযুক্ত বেঁটে সংকর (ই-৪৮০xএস-৩০৮) জাতের হয়। এর দানা মাঝারি পুষ্ট ও হলুদ রঙের। পশ্চিমবঙ্গের পাহাড়ের ঢালু এলাকায় বৃষ্টিধৌত জমিতে এটি বােনার উপযােগী জাত। এই জাতের গম গাছ কালাে, বাদামী ও পাতা ধসা রােগ প্রতিরােধ করার ক্ষমতা রাখে। ১৭৫ দিনে ফসল পাকে। প্রতি একরে ১৯-২০ কুইন্টাল ফলন হয়।
 
_______________________________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.