ভােজ্য মাসরুম অন্যান্য সবজির মতই একটি খাদ্যবস্তু। এটি একটি সুপ্রাচীন, অমূল্য খাদ্যবস্তু যার উল্লেখ ইতিহাসের প্রাচীনতম বদ্যিগুলিতেও পাওয়া যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে এর গ্রহণযােগ্যতা হারালেও বর্তমানে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এর খাদ্য ও ঔষধিগুণ অনুসন্ধানের পর এটি পুনরায় সারা বিশ্বে তার হৃত মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। তাই মাসরুম এখন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে একটি আকর্ষণীয় খাদ্যবস্তু বলে গণ্য হয়েছে। তবে যেদিন তা সকলস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযােগ্য হবে সেদিন আমাদের দেশের খাদ্য ও স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের অনেকটাই সাফল্য অর্জন করা যাবে।
![]() |
Image by Elenza Photography from Pixabay |
➤ মাশরুম কী ?
উদ্ভিদবিজ্ঞানে মাশরুম : - বেশিরভাগ ছত্রাক এতােই ছােট যে, খালি চোখে দেখা যায় না। আর সবচেয়ে বড়াে আকারের ছত্রাক, যা চোখে দেখা যায়, সেটা হলাে মাশরুম। সমস্ত ছত্রাককুলকে দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যেমন (১) উপকারী ছত্রাক এবং (২) অপকারী ছত্রাক। একটি উপকারী। ছত্রাকের বহু পরিচিত নাম হলাে পেনিসিলিয়াম যা থেকে আন্টিবায়ােটিক “পেনিসিলিন” তৈরি হয়। আর ঈস্টও আর এক উপকারী ছত্রাক ; সল্ট, পাউরুটি ও সুরা (মদ) তৈরিকরার জন্য এই ঈস্টের ব্যবহার করা হয়। চিনি ও জলের মিশ্রণে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রচুর ঈস্ট জন্মে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও সুরা তৈরি করে। তবে অক্সিজেনের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে সুরার পরিমাণ কমে যায়। বর্ষাকালে গুড়ে যে মদের গন্ধ হয়ে যায় তা ওই ঈস্টের জন্যেই। আবার মিষ্টি ফল কেটে রাখলে তাতেও ঈস্টের জন্ম হয়। এ তাে গেলাে উপকারী ছত্রাক, তবে অপকারী ছত্রাকের সংখ্যা অগুন্তি। উদ্ভিদের বহু রােগ ছত্রাক থেকে সৃষ্টি হয়। যেমন আলুর নাবি ধ্বসা ফাইটপােরা নামক এক প্রকার ছত্রাক ঘটায়। পাকসিনিয়া থেকে গমের রাস্ট রােগ হয়। গাছের সাধারণ রােগ মিলউড, সেটাও ছত্রাক ঘটিত।
কোনাে মাশরুম ছত্রাকের সবুজকণা থাকে না, ফলও হয় না, বংশবিস্তার ঘটে প্রধানত স্পাের বা রেণুর সাহায্যে। সবুজকণা না থাকার দরুন তারা সাধারণ উদ্ভিদের মতাে নিজের খাদ্য তৈরি করতে পারে না। তাই সরাসরি সূর্যের আলোেক তাদের কাছে অপরিহার্য নয়। উদ্ভিজ্জ বস্তু পচতে শুরু করলে ছত্রাক তার উপর জন্মে খাদ্য সংগ্রহ করে এবং বংশবিস্তার ঘটায়, ছত্রাকের কোনাে শিকড় গজায় না। ওদের যে যে অংশটি শিকড়ের কাজ করে তাকে মাইসিলিয়াম’ বলা হয়। স্পাের তথা রেণু অঙ্কুরিত হয়ে অনুসূত্র বা হাইফা তৈরি হয়। হাইফা বেড়ে জালিকার মতাে হলে তাকে বলা হয় মাইসিলিয়াম’। মাশরুমের ক্ষেত্রে এই মাইসিলিয়াম থেকে ফুটবডি বা পিন হেড তৈরি হয়।
আকারে বড়াে যেসব মাশরুম ছত্রাক, তাদের মধ্যে অধিকাংশই অ্যাগারিকাস গণের। যেমন বােতামছাতু। এটি একটি ভােজ্য ছত্রাক, অন্য সব গণের কিছু কিছু ছত্রাকও ভােজ্য ছত্রাক হিসাবে পরিচিত এবং তাদের সবজির মতাে চাষ করা হয়।
![]() |
Image by silviarita from Pixabay |
➤ মাশরুম কেন আমরা খাবো ?
মাশরুম খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসুন জেনে নিন কেন আমরা মাশরুম খাবো। বর্তমানে মাসরুম একটি উচ্চমূল্যসম্পন্ন (৮০-১০০ টাকা/কেজি) সজী হিসাবে শহরের বাজারে পাওয়া যায়। যদিও এটি অন্যান্য সবজির চেয়ে অতি অল্প শ্রম ও অর্থ ব্যায়ে চাষ করা সম্ভব। উন্নত দেশগুলিতে এই ‘সাদাসবজী’ টি বড় শিল্প হিসাবে গণ্য হলেও আমাদের দেশে এর চাষের তেমন চল এখনও আসেনি। তাই এই চাষের বা অনুষঙ্গী শিল্পের ব্যবসায়িক ভবিষ্যতও খুব ভাল। শুধু তাই নয়, বাড়িতে একটি মূল্যবান (খাদ্য ও ঔষধি বিচারে) খাবার সকলের মুখে তুলে দিয়ে স্বাস্থ্যসুরক্ষার জন্য স্বল্পপৱিমানে প্রতি বাড়িতেই এটা চাষ করা সম্ভব। এটি একটি সহজপাচ্য সুন্দর খাবার। বাড়িতে স্বাভাবিক শিশু-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে অসুস্থ রােগী এমন কি জটিল সমস্যাজনিত রােগীকেও এটি জীবনদায়ী পথ্য হিসাবে দেওয়া হয়ে থাকে। নিয়মিত সজীর মত রান্না করে খেলে দেহের প্রােটিন চাহিদা মেটে, রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য সজীর মতই এটি একটি নিরামিষ খাবার। এতে কার্বোহাইড্রেট ৪৬-৪৮%, প্রােটিন ৭.৫-৩৬.৩%, ফ্যাট ৪% ছাড়াও ভিটামিন B ও C এবং পটাশিয়াম, ফসফরাস, সােডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি প্রয়োজনীয় মিনারেলস থাকে। শরীরের সুস্থতা বৃদ্ধির জন্য যা অত্যাবশকীয়। এতে প্রচুর পরিমানে ক্রুড ফাইবার থাকার দরুণ এটি পেট পরিষ্কার রাখে। ডায়াবেটিক রােগীদের গুকোজ শােষণ ধীরে করে তাদের সুস্থ রাখে। এ খাদ্যের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুন থাকায় ক্যানসার, বার্ধক্যজনিত রোগ সহ বিভিন্ন জটিল রােগের রােগীদের আদর্শ খাদ্য ও পথ্য হিসাবে দেওয়া হয়ে থাকে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের শিশু ও মহিলারা অপুষ্টিজনিত রােগের শিকার। সেক্ষেত্রে এই সাদা সজীটি নিয়মিত খেলে অতি স্বল্প খরচায় রােগ নিরাময় করার সুযােগ থাকে। মাশরুম বা ছাতু রান্নার সুবিধা হল এই যে এর খুব বেশী উগ্রবর্ণ বা গন্ধ না থাকায় যে কোনরান্নায় অন্য সবার সঙ্গে তা দেওয়া চলে। তাতে রান্নার বিশেষ স্বাদ বদল হয় না।
তাছাড়া , সিদ্ধ, ভাজা, বড়া থেকে শুরু করে কষা, দলমা , ডালনা, ঝাল, ঝোল, পােস্ত , চচ্চরি, স্ট্যু , স্যুপ, কারী যে যেমন খুশী রান্না করে খেতে পারে। তবে খাদ্যটি বেশীদিন রাখা চলে না। টাটকা খেতে হয়। স্যালাডে খেলে ভাল করে সিদ্ধ করে নিলেই চলবে। সুতরাং আমরা মাশরুম খাবো কারণ -------
১। আমরা নিজেদের সুস্থ রাখতে চাই।
২। রােগীদের নীরােগ করতে চাই।
৩। শিশুদের সঠিক পুষ্টি দিতে চাই।
৪। বৃদ্ধ ও মহিলাদের সঠিক পুষ্টি দিতে চাই।
৫। সুস্থ মানুষের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাই যাতে সহজে রােগ আক্রমন করতে না পারে।
৬। বার্ধক্যজনিত অসুখ, ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মত দুরারােগ্য অসুখের সঙ্গে লড়াই করতে চাই।
এইসব মাশরুম ছত্রাক আমরা খাদ্যরূপে গ্রহণ করি এবং বর্তমানে এর পরিমাণ বাড়ানাের জন্য ব্যাপক হারে চাষ করা হচ্ছে।
ব্রিদ্রঃ মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পরবর্তী পোস্ট মাশরুম চাষ ক্লিক করুন।
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....