Type Here to Get Search Results !

বোরো ধান চাষ করুন সঠিক নিয়ম জানুন । paddy farming.

  বোরো ধান চাষ। Boro  paddy farming :
 
 
বোরো ধান চাষ করতে হলে সঠিক নিয়ম অবশ্যই জানতে হবে, তা না হলে আপনি কখনই সফল হতে পারবেন না। এবার  বোরো ধান চাষ সম্পর্কে আপনাদেরকে অবগত করাই। বোরো ধানের ফলনের জন্য ফসল তৈরি হওয়া পর্যন্ত পরিমিত পরিমানে জলসেচ দেওয়া খুবই প্রয়োজন। 


বোরো ধান চাষ করুন সঠিক নিয়ম জানুন । paddy farming.
Image by siva nagarjuna reddy pothireddy from Pixabay 

  ধান চাষের গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট 
 
➤ আধুনিক পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ পদ্ধতির নিয়ম :

মৃত্তিকা :- বােরােধান এঁটেল, এঁটেল দোআঁশ এবং দোআঁশ মাটি বােরো চাষের পক্ষে উপযুক্ত। আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত আমন ধান ও আলুর ফসল তােলার পর সেই জমিতে বােরাে ধানের চাষ হয়।

জমি তৈরির পদ্ধতি :- 

 আলুর জমিতে দু-তিনবার এবং আমন জমিতে পাঁচ-ছ'বার কর্ষণ ও মই দিয়ে জমি তৈরী করতে হবে। এরপর ৯-১০ গাড়ি গােবর বা আবর্জনা সার দিয়ে মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর জমিতে জল দিয়ে ৫-৬ ইঞ্চি (১২.৫-১৫ সে. মি.) গভীর করে কাদা করতে হবে। জমির সর্বত্র সমানভাবে জল রাখার মধ্যে সরু সরু কাচা আল তুলে জমিটা ছােট ছােট অংশে ভাগ করে নিতে হবে। এরপর মই বা পাটাতন দিয়ে জমির মাটি সমান করে নিন। উই, কাটুই ইত্যাদি মাটির নিচের পােকার উপদ্রব রােধ করার জন্য একর প্রতি ১৪-১৫ ডার্সন ৫ শতাংশ ওষুধ শেষ চাষের আগে প্রয়ােগ করতে হবে।

বীজ শােধন পদ্ধতি  :- 
চারায় রােগ ও পােকার আক্রমণ রোধ করতে বীজের বাছাই ও শােধন করা একান্ত প্রয়ােজন। বীজ বাহিত রােগ প্রতিরােধের জন্য বীজ শােধন করে বােনাই চাষীভাইদের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এবার বীজ শােধন করার পদ্ধতি নিয়ে আলােচনা করা থাক। প্রথমেই ১০-১২ লিটার জলে আধ কেজি সাধারণ লবণ মিশিয়ে তাতে ২-৩ কে.জি করে বীজ ফেলতে হবে। জলে ভেসে ওঠা অপুষ্ট বীজ ফেলে দিয়ে পুষ্ট বীজগুলি  ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর প্রতি বীজে তিন-চার গ্রাম এগ্রোসান জি-এন মিশিয়ে বীজ শােধন করে নিতে হবে। এরপর এক লিটার জলে এক গ্রাম কারবেনডাজিম (যেমন ব্যাভিস্টান, ৫০% ডব্লু-পি প্রভৃতি) এবং এক গ্রাম এগ্রিমাইসিন মিশিয়ে এক কেজি বীজ ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে বুনতে হবে। এগ্ৰিমাইসিন ওষুধ পাতার ধসা রােগ দমন করে। শোধন করা বীজ এক রাত  ভিজিয়ে রাখার পর  ভিজে থলের মধ্যে দু 'তিন দিন ধরে অথবা যে পর্যন্ত কল না গজায়, খড়কুটো দিয়ে বা সার গাদায় গর্ত করে চাপা দিয়ে রাখতে হবে। 

সার প্রয়োগ পদ্ধতি  :-

বোরো ধান চাষের জন্য প্রতি একর এ যেসব সার প্রয়োগ করতে হবে তার বিবরণ নিচে দিলাম।

জলধি জাত  ও মাঝারি জাত  :- 

কাবেরী রত্না, বাণী এবং জয়া, জয়ন্তী, আই প্রভৃতি ধান।
জমি কাদা করার সময়  নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম ২০ কেজি করে দেবেন। 

চাপান সার প্রয়োগ করবেন পাশকাঠি ছাড়ার সময় (রোযার ২০ দিন পর ) নাইট্রোজেন ১০ কেজি। থোড় আসার সময় নাইট্রোজেন ১০ কেজি। 

দেশি উন্নত জাত  :- 

লাঠিশাল, কলম-২২২, মাসুরী প্রভৃতি। জমি কাদা করার সময় নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম ৮ কেজি, ১৬ কেজি ও ১৬ কেজি দেবেন।

চাপান সার প্রয়োগ করবেন পাশকাঠি ছাড়ার সময় (রোযার ২০ দিন পর ) নাইট্রোজেন ১৬ কেজি। থোড় আসার সময় নাইট্রোজেন৮  কেজি। 

➤ বােরাে ধানের চারা রােপণের সময়  :- 

(১) লাঠিশাল, কলমা-২২২;"আই-আর-২০ জাতের ধান—অগ্রহায়ণের মাঝামাঝিথেকে পৌষের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

(২) অন্যান্য জাতের ধান-সারা পৌষ মাস। তবে তার পরেও মাঘ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চারা বপন করা যায়। এরপর ধান রােপণ কালে কালবৈশাখী  ঝড় বৃষ্টিতে ধান কাটার অসুবিধা সৃষ্টি হতে পারে।

চারার চার-পাঁচটি পাতা গজালে সেটা বপন করা উপযুক্ত হয়। বীজ বােনার ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে চারার চার-পাঁচটি পাতা গজিয়ে যায়। কচি চারার শিকড় যাতে ছিড়ে না যায় সেজন্য চারা তােলবার সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

রােয়ার দূরত্ব :- 

 কলমা-২২২, লাঠিশাল প্রভৃতির চারা ৯x৬ ইঞ্চি ২২.৫x১৫ সে.মি.) দূরত্বের এবং অন্যান্য জাতের চারা ৮x৪ ইঞ্চি (২০x১০ সে. মি.) দূরত্বের ব্যবধান লাগাতে হয়। 

রােয়ার গভীরতা :- 

কলমা, লাঠিশাল প্রভৃতির চারা প্রতি গর্তে দু-তিনটি করে এবং অন্যান্য জাতের চারা তিন-চারটি করে রােপণ করতে হবে। চারা ২ ইঞ্চি (৫ সে. মি.) গভীরে লাগাতে হবে। এর বেশি গভীরে চারা লাগালে পাশকাঠির সংখ্যা যেমন কম হবে
তেমনি ফলনও কম হবে।

জমিতে গুহির সংখ্যা ও শীষযুক্ত পাঠকাঠির সংখ্যার ওপর ফলন নির্ভর করে। চারা পাতলা করে লাগালে ফলন অনেক কম হয়। চারা রােপণের পর নজর রাখতে হবে। রােয়ার ১০-১২ দিন পরে চারা যদি মরে যায়, সে জায়গায় নতুন চারা লাগাতে হবে। এজন্য রােয়ার পর জমির এক কোণে কিছু বাড়তি চারা সংগ্রহ করে রাখতে হবে।


জলসেচ পদ্ধতি :-  

রোপনের সময় ছিপছিপে জল থাকা প্রয়োজন।  বােরো ধানের চারা রােপণের পর ৮-১০ দিন পর্যন্ত জমিতে দুই ইঞ্চি পরিমাণ জল রাখতে হবে। পরে জমিতে সাত-আটদিন সেচ বন্ধ করে মাটি শুকিয়ে নিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, মাটি যেন ফেটে না যায়। চাপান সার প্রয়ােগ করে পুনরায় জলসেচ দিয়ে দানা পুষ্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত জমিতে দুই ইঞ্চি জল রাখা দরকার। তারপর ফসল কাটার আগে জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করে সমস্ত জল বের করে দিতে হবে।

 ➤ রােগ পােকা প্রতিরােধের কোন্ ওষুধ কখন প্রয়ােগ করবেন :-

১। ধানের বীজ রােয়ার আগে মাটি কাদা করবার সময় যে কোনাে একটি দানাদার ওষুধ প্রয়ােগ করতে হবে।
২। এরপর ধান রােপণের ২৫ দিন বাদে যে কোনাে দানাদার ওষুধ  বা যে কোনাে তরল কীটনাশক ওষুধ প্রয়ােগ করা যেতে পারে।

৩। চারা পোঁতার ৫০ দিন পর যে কোনাে কীটনাশক ওষুধ প্রয়ােগ করতে হবে।
৪। এরপর আরও দশদিন পরে অর্থাৎ চারা পোঁতবার ৬০ দিন পর যে কোনাে একটি তরল কীটনাশক ওষুধ এবং প্রতি লিটার জলে তিন থেকে সাড়ে তিন গ্রাম ক্যাপটান ৮৩ শতাংশ মিশিয়ে ধান গাছের উপর স্প্রে করতে হবে।

৫। ধানে দুধ আসবার সময় গন্ধী পােকার উপদ্রব হতে দেখা যায় ; এই সময় একর প্রতি ১০ কে, জি. হারে বি-এইচ-সি ১০ শতাংশ বা সেভিন ১০ শতাংশ গুড়া ওষুধ বিকেলের দিকে গাছের উপর ছড়াতে হবে।


৬। ধান পাকবার সময় শীষকাটা লেদাপােকার উপদ্রব দেখা দিলে, একর প্রতি ১০-১২ বি -এইজ -চি ১০ শতাংশ ওষুধ ছড়াতে হবে। 

➤ ফসল কাটা :-  বোরো ধানের ফসল কাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  তাই এই 
ধানের খড় সম্পূর্ণ হলদে হয়ে গেলে বুঝতে হবে ধান পেকে গেছে, আর তখনি ধান কেটে ফেলতে হবে। নইলে ধান ঝরে যেতে পারে। তারপর মাঠে কিছুদিন ফেলে রেখে রােদে শুকিয়ে নিয়ে খামারে এনে ধান ঝাড়াই করতে হবে। ধান ঝাড়াই যন্ত্রে ধান ঝাড়লে প্রায় সম্পূর্ণভাবে সব গাছের ধান ঝাড়া হয়ে যাবে।

ফলন :-   প্রতি একরে ২৫ থেকে ৩০ কুইন্টাল ফলন হয়।

ব্রিদ্রঃ  কোনো মন্তব্য থাকলে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। 


__________________________________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.