Type Here to Get Search Results !

আমন ধানের জল সেচ ও শস্য সু -রক্ষার উপায় । Paddy Protection.

আমন ধান চাষে  জলসেচ ও শস্য সুরক্ষার উপায়।


আমন ধান চাষের সময় জলসেচ ও শস্য রক্ষার উপর ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ফসল বেশি পরিমানে উৎপাদন করা যায়। সেজন্য জমির উপর  সবসময়  তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। জলসেচ ও শস্য  সুরক্ষার বিষয় গুলি নিম্নে আলোচনা করছি তা ভালকরে জেনে নিন।
 

জলসেচ পদ্ধতি  :-

ধানের চারা রােপণ করবার সময় জমিতে অল্পবিস্তর কাদা থাকলেই চলবে। আমন ধান রােপণের ৪০-৪৫ দিন পর্যন্ত পাশকাঠি যতদিন না বের হয় ততদিন পর্যন্ত সামান্য জল থাকলে ঘাস জন্মাবে না, অথচ পাশকাঠি বেশ ভালভাবেই বেরােবে। মনে রাখতে হবে চাষের জমিতে বৃষ্টির জল বেশি জমে গেলে তা বের করে দিতে হবে অচিরেই। জমি কাদাকাদাভাবের,কিন্তু জমিতে জল জমেনি,সেক্ষেত্রে অবশ্যই চাপান সারপ্রয়ােগ করতে হবে। আবার জমিতে বেশি জল জমে থাকলে এবং জল বের করে দেওয়া সম্ভব না হলে চাপান সার প্রয়ােগ করার আগে ইউরিয়া সার আট-দশগুণ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ছােট ছােট বল তৈরী করে চারটি গােছের মাঝে একটি করে বল প্রয়ােগ করতে হবে। আর একটা কথা মনে করিয়ে দিই চাষীভাইদের, ধান কাটাবার ২৫-৩০ দিন আগে পর্যন্ত জমিতে এক ইঞ্চি পরিমাণ জল জমিয়ে রাখতে হবে এবং তারপর জমি থেকে সমস্ত জল হাত দিয়ে ছেচে কিংবা পাম্প দিয়ে বের করে মাটি শুকিয়ে নিতে হবে।  পরে জমিতে সাত-আটদিন সেচ বন্ধ করে মাটি শুকিয়ে নিতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, মাটি যেন ফেটে না যায়। চাপান সার প্রয়ােগ করে পুনরায় জলসেচ দিয়ে দানা পুষ্ট হওয়ার আগে পর্যন্ত জমিতে দুই ইঞ্চি জল রাখা দরকার। তারপর ফসল কাটার আগে জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করে সমস্ত জল বের করে দিতে হবে।


শস্য সুরক্ষার উপায়।  Crop protection process :

শস্য সুরক্ষার জন্য দুটি উপায় যত্নসহকারে  মেনে চলুন।  

১। রােগ দমন : ধসা ও চিটে রােগ দমনের জন্য বৃষ্টির পরেই জমির জল বেশি থাকলে কমিয়ে এনে অল্প রাখতে হবে এবং প্রতি একরে এক কে. জি. সেভল বা ক্যাপটান ৮৩ শতাংশ বা দস্তাঘটিত ওষুধ যেমন ডাইথেনজেড ৭৮, ডাইথেন এম-৪৫, ইউনিজেক ইত্যাদি ৩৫০ লিটার জলে গুলে ধানগাছের ওপর ছিটতে হবে। এছাড়া ঝলসা (ব্লাস্ট) রােগ প্রতিরােধের জন্য একর প্রতি ১০০-২০০ গ্রাম ব্যাভিস্টিন বা ৩০০ মিলিলিটার হিনােসান ৫০ শতাংশ ই.সি. বা ৭৫০ মিলি কুমান এল ৩০০ লিটার জলে গুলে গাছের পাতায় ও ধানের শীষে ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। আবার যদি দরকার হয় এর ২-৩ সপ্তাহ পরে আর একবার স্প্রে করতে হবে।
.
২। পােকার আক্রমণ প্রতিরােধ :-  পােকার আক্রমণ প্রতিরােধের জন্য বীজতলা থেকে কীটনাশক ওষুধ প্রয়ােগ করা উচিত। চারা রােপণের জমির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে ধান গাছে রোগ বা পোকা লাগছে কিনা। পােকা আক্রমণের লক্ষণ দেখা গেলেই ওষুধ  প্রয়ােগ করতে হবে।তবে উপদ্রুত এলাকার আক্রমণের  জন্য অপেক্ষা না করেই ধান রোপনের ২৫ -২০ দিনের মধ্যেই কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।  ভেঁপু পােকা, শ্যামা পােকা, মাজরা পােকা প্রতিরােধের জন্য যদি জমি উঁচু হয় এবং জলের চাপ কম থাকে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কৃষি বিভাগের সুপারিশ অনুসারে একর প্রতি ৫ কে. জি. থাইমেট ১০ জি, বা ৭ কে. জি. ফিউরাগন ৩ জি, বা ৮ কে. জি. একালাক্স ৫ জি. বা ১০ কে. জি.সেভিডল ৪ : ৪ বা ১০ কে. জি. ডায়াজিনন ৫ জি,  ৪.৫-৯কে.জি. ফোরেট ১০জি. ওষুধ ছিটাতে হবে। 
 
মনে রাখবেন, দানাদার ওষুধ ছিটবার সময় জমিতে ১-২ ইঞ্চি জল থাকা চাই, আর সেই জল জমিতে কম করেও ৫-৭ দিন ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্যামা পােকা, মাজরা পােকা ও গন্ধী। পােকা বেশি দেখা দিলে আলাের ফাঁদ পেতে বা পােড়া মােবিলে ছেড়া কাপড় বা চট ভিজিয়ে রাতে জমিতে আগুন জ্বালিয়ে এসব পােকা-মাকড় মারবার ব্যবস্থা করা যেতেপারে।
 
গাছের বয়স ৩০-৩৫ দিনের বেশি হলেএবং জমিতে প্রয়ােজনের বেশি জল থাকলে দানাদার ওষুধের বদলে নিম্নলিখিত ওষুধের যেকোনাে একটি প্রয়ােগ করা যেতে পারে। 

প্রতি লিটার জলে:-

(১) আধ মিলিমিটার ডিমেক্রন ৮৫ এস. এল. বা
(২) এক মিলিলিটার মেটাসিড ৫০ ই. সি. বা

(৩) দেড় মিলিলিটার একালিক্স ২৫ ই. সি. বা লিনডেন, অথবা
(৪) দুই মিলিলিটার থায়ােডন ৩৫ ই. সি.

(৫) তিন মিলিলিটার জোলােন বা
(৬) এক মিলিলিটার লেবাসিড ১০০ ই. সি. বা

(৭) আড়াই গ্রাম সেভিন ৫০ শতাংশ বা
(৮) চার গ্রাম বি. এইচ-সি ৫০ শতাংশ বা
(৯) এক মিলিলিটার ডর্সৰ্বান ২০ ই. সি.

 ইত্যাদি জলে গুলে ধান গাছে স্প্রে করতে হবে। প্রতি একরে হাতে চালিত স্পেয়ারে ৬০০ লিটার ওষুধ গােলা জল লাগবে। গাছের বৃদ্ধি অনুসারে জল ওযুধ কম-বেশি লাগবে।। পামরী পােকা, চুঙ্গী, পাতামােড়া পােকা, লেদা পােকা, শীষকাটা লেদাপােকার আক্রমণ দেখা দিলে একর প্রতি ১০-১২ কে, জি, বি-এইচ সি  ১০ শতাংশ বা সেভিন ১০ শতাংশ গুড়াে ওষুধ প্রতি লিটার জলে ৫ গ্রাম বি-এইচ-সি ৫০ শতাংশ জলে গুলে জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
 
পামারি পােকার আক্রমণ সাধারণত শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত গরম আদ্র আবহাওয়ায় দেখা যায়। লেদাপােকার আক্রমণ শ্রাবণের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেখা যায়, গেদাপােকা ও শীষকাটা গেদাপােকা দমনের জন্য প্রতি একর জমিতে ১০-১২ কে. জি বি-এইচ-সি ১০ শতাংশ ছাড়াও প্রতি লিটার জলে এক মিলিলিটার ম্যালাথিন ৫০ ই. সি. বা দুই গ্রাম সেভিন ৫০ শতাংশ বা আধ মিলিলিটার সুভান ১০০ ই. সি. বা পাঁচ গ্রাম বি-এইচ-সি ৫০ শতাংশ ওষুধ জলের সঙ্গে গুলে ধান গাছে ছিটাতে হবে। মনে রাখবেন, বিকেলের দিকে এসব ওষুধ প্রয়ােগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

বাদামী শােষকপােকার আক্রমণ যেসব অঞ্চলে দেখা যায় সেখানে এদের দমনের জন্য প্রতি লিটার জলে আধ মিলিলিটার ডিমেক্রন বা দুই মিলিলিটার ম্যালাথিয়ন ৫০ ই.সি. বা এক মিলিলিটার নুভাক্রন ৪০ ই.সি. বা আড়াই গ্রাম সেভিন ৫০ শতাংশ জলে গুলে মাঝে মাঝে ধানগাছে ছিটতে হবে।

➤রােগ পােকা প্রতিরােধের কোন্ ওষুধ কখন প্রয়ােগ করবেন। 


১। ধানের বীজ রােয়ার আগে মাটি কাদা করবার সময় যে কোনাে একটি দানাদার ওষুধ প্রয়ােগ করতে হবে।
২। এরপর ধান রােপণের ২৫ দিন বাদে যে কোনাে দানাদার ওষুধ বা উপরে বর্ণিত যে কোনাে তরল কীটনাশক ওষুধ প্রয়ােগ করা যেতে পারে।
৩। চারা পোঁতার ৫০ দিন পর যে কোনাে কীটনাশক ওষুধ প্রয়ােগ করতে হবে।
৪। এরপর আরও দশদিন পরে অর্থাৎ চারা পোঁতবার ৬০ দিন পর যে কোনাে একটি তরল কীটনাশক ওষুধ এবং প্রতি লিটার জলে তিন থেকে সাড়ে তিন গ্রাম ক্যাপটান ৮৩ শতাংশ মিশিয়ে ধান গাছের উপর স্প্রে করতে হবে।
৫। ধানে দুধ আসবার সময় গন্ধী পােকার উপদ্রব হতে দেখা যায় ; এই সময় একর প্রতি ১০ কে, জি. হারে বি-এইচ-সি ১০ শতাংশ বা সেভিন ১০ শতাংশ গুড়া ওষুধ বিকেলের দিকে গাছের উপর ছড়াতে হবে।
৬। ধান পাকবার সময় শীষকাটা লেদাপােকার উপদ্রব দেখা দিলে, একর প্রতি ১০-১২ বি-এইজ-চি ১০ শতাংশ ওষুধ ছড়াতে হবে।


____________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.