আধুনিক পদ্ধতিতে জিরা চাষ করুন ও অধিক লাভ করুন।
![]() |
চাষবাস বারোমাস। Bengali Agriculture |
জিরা একটি নিত্যপ্রয়ােজনীয় মশলা। জিরা দুরকমের, যেমন কালাে জিরা এবং সাদা জিরা। কালাে জিরা তরকারিতে ফোড়ন (পাঁচফোড়নের সঙ্গে) দেওয়া হয়,আর সাদা জিরা তরকারির প্রধান মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও জিরা দিয়ে নানান ধরনের ভেষজ ওষুধ তৈরী হয়। জিরা থেকে তেল পাওয়া যায়। সেই তেল নানা রকম প্রসাধন সামগ্রী সুগন্ধী করার কাজে ব্যবহার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও কেরল ছাড়া ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই জিরার চাষ হয়। তাই গুজরাট, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশ থেকে জিরা আমদানী করে আনা হয় পশ্চিমবঙ্গে, কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই পশ্চিমবঙ্গে জিরা চাষ করে নিজেদের প্রয়ােজন মেটানাে যায়।
প্রয়োজনীয় জলবায়ু :
জিরা শীতকালীন ফসল। ঠাণ্ডা ও শুকনাে আবহাওয়া জিরা চাষের পক্ষে উপযােগী। বৃষ্টিতে জিরা গাছের ক্ষতি হয়।
উপযোগী মাটি :
পশ্চিমবঙ্গে এঁটেল মাটি ছাড়া প্রায় সবরকম মাটিতেই জিরার চাষ হয়। তবে জিরা চাষের উপযোগী দোঁয়াশ মাটি সবচেয়ে ভাল। জমিতে জমা জল নিশকাশনের ব্যবস্থা থাকা দরকার, কারণ জমিতে জমা জল সহ্য করতে পারে না জিরা।
জমি তৈরীর পদ্ধতি :
জমিতে ৪-৫ বার লাঙল ও মই দিয়ে ভালভাবে মাটি তৈরী করে নিতে হবে। এ সময়ে প্রতি একরে ৮-১০ গাড়ি গােবর বা আবর্জনা সার দিতে হবে।
বীজ বােনার নিয়ম :
১। বীজ বােনার সময় :
পশ্চিমবঙ্গে কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের মধ্যে জিরার বীজ বােনা হয়। তবে কার্তিক মাসেই বীজ বােনার সঠিক সময়।
২। বীজের পরিমাণ : প্রতি একরে ২-৩ কেজি বীজের প্রয়ােজন।
৩। বীজ বােনার পদ্ধতি :
বীজ সাধারণত হাতে ছিটিয়ে বােনা হয়। বােনার পর বিদা চালিয়ে বীজগুলােকে মাটির নিচে ঢেকে দিতে হয়। আবার সারিতেও বীজ বােনা যায় এবং এভাবে বুনলে সারির ব্যবধান হতে ১ ফুট (৩০ সেমি.)। সারিতে ৮ ইঞ্চি (২০ সেমি.)দূরে দূরে বীজ বুনতে হবে।
সার প্রয়ােগ পদ্ধতি:
ভাল ফলন পেতে হলে প্রতি একরে ১০ কেজি নাইট্রোজেন, ১০ কেজি ফসফরাস এবং ১০ কেজি পটাশিয়াম মিশিয়ে দিতে হবে মাটির সঙ্গে।
পরিচর্যা পদ্ধতি:
বীজ বােনার ৮-৯ দিনের মধ্যে চারা বের হয়। চারা বের হবার তিন সপ্তাহ পর মাটিতে নিড়েন দিয়ে আগাছা তুলে ফেলতে হবে। এছাড়া চারা ঘন হলে, কিছু চারা তুলে ফেলে পাতলা করে দিতে হবে।
জলসেচ পদ্ধতি :
বীজ বােনার সময় জমিতে প্রয়ােজনীয় রস না থাকলে সেচ দিয়ে বীজ বুনতে হবে বা বীজ বােনার পর সেচ দিতে হবে। জমির ও ফসলের অবস্থা বুঝে ৬-৭ দিনের ব্যবধানে সেচ এমনভাবে দিতে হবে যাতে জমিতে কোনােভাবেই জল না জমে যায়, কারণ জমিতে জল থাকলে ফসলের ক্ষতি হয়।
জিরা শস্য রক্ষা করার উপায় :
রােগঃ জিরা গাছ প্রধানত ঝলসা ও পাউডারি মিলডিউ রােগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ঝলসা রােগের লক্ষণ হলাে, পাতায় বাদামী দাগ দেখা যায়। এ রােগ দমনের জন্য প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম জিনেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি (যেমন ডাইথেন জেড-৭৮ বা ম্যানকোজেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি (যেমন ডাইথেন এস-৪৫) গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে। পাউডারি মিলডিউ রােগের ক্ষতির প্রকৃতি এবং দমন পদ্ধতি ধনে গাছের রােগেরি অনুরূপ।
পােকা : জিরা গাছে পাতা খাওয়া পােকার আক্রমণ বেশি দেখা যায়। এরা পাতা থেকে গাছ একেবারে নষ্ট করে ফেলে। এর প্রতিকারের জন্য প্রতি লিটার জলে দেড় মিলিলিটার মিথাইল ফসফোসিডন ৪০ এসএল (যেমন সুমিডন-৮৫ এস-এল) বা দেড় মিলিলিটার মিথাইল কেমিটন ২৫ ই.সি. (যেমন মেটাসিসটকস-২৫ ই.সি.) গুলে গাছে স্প্রে করবেন।
জাত : কালােজিরার কয়েকটি জাত আছে। যেমন ডব্লিউ-বি-কন-৩, ৩৫, ৩৭, ৪৭,১২৫ এবং ১২৮ কৃষ্ণ নগর ইত্যাদি।
ফসল তোলার পদ্ধতি :
জিরা বীজ সাধারণত ৮০ - ৯০ দিনে পাকে। শুটিগুলাে বাদামী রঙের হয়ে উঠলে, ফসল হাত দিয়ে উপড়ে বা কাস্তে দিয়ে কেটে ফেলতে হবে। শুটিগুলাে একেবারে শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ফসল তুলে নিতে হবে, নইলে ফসল ঝরে নষ্ট হয়ে যাবে। গাছগুলােকে দুদিন খামারে গাদা করে রাখতে হবে। এরপর লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা প্রয়াে জনে গরু দিয়ে মাড়াই করে নিতে হবে। জিরা পরিষ্কার করে আবার রােদে শুকিয়ে নিয়ে পরের বছর বােনার জন্য সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
ফলন : প্রতি একরে ২-৩ কুইন্টাল ফলন হয়।
আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি, ফসল চাষ এবং চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....