Type Here to Get Search Results !

উন্নত পদ্ধতিতে চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছের চাষ করুন এবং অধিক অর্থ উপার্জন করুন। Chrysanthemum flowers Cultivation.

উন্নত পদ্ধতিতে চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছের চাষ পদ্ধতি।Chrysanthemum flowers Cultivation :

উন্নত পদ্ধতিতে চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছের চাষ করুন এবং অধিক অর্থ উপার্জন করুন।  Chrysanthemum flowers Cultivation.
চাষবাস বারোমাস। Bengali Agriculture

আন্তর্জাতিক ফুলের বাজারে গােলাপ ও কার্নেশনের পরই চন্দ্রমল্লিকা স্থান। চন্দ্রমল্লিকার কাটা ফুল দীর্ঘদিন তাজা থাকে বলে ফুলদানি সাজাতে, মালা ও ফুলের গয়না তৈরিতে এর চাহিদা জুরি মেলা ভার।এই ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাজারে। তাই চন্দ্রমল্লিকা ফুল গাছ চাষ করে অধিক অর্থ উপার্জন করা যায়। তাই এই চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিয়ে চাষ করুন সফল হবেন। এখান থেকে আপনারা সব কিছু জানতে পারবেন। তাই মনোযোগ সহকারে দেখুন এবং পড়ুন।

 প্রয়োজনীয় মাটি :

অল্প অম্লতা (pH ৬.০-৬.৫) যুক্ত হাল্কা দোঁয়াশ বা বেলে-দোঁয়াশ মাটি চন্দ্রমল্লিকা চাষের পক্ষে উপযুক্ত। মাটিতে প্রচুর জৈব সার থাকা দরকার।

 প্রয়োজনীয় আবহাওয়া : 

বছরে একবার ফুল ফুটলেও সারা বছরই চন্দ্রমল্লিকা গাছ বেঁচে থাকে। গ্রীষ্মের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে না গেলে এবং চন্দ্রমল্লিকা শীতে বরফ না পড়লে সেই জায়গাতে চন্দ্রমল্লিকার চাষ করা সম্ভব। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০০ মিলিমিটারের নীচে হলেই ভাল। তবে, জলনিকাশের সুবন্দোবস্ত থাকলে বেশি বৃষ্টিতেও ছােট জাতের চন্দ্রমল্লিকার বিশেষ ক্ষতি হয় না।


উপযুক্ত জাত :

ডিগনিটি, নীরা, স্নােবল, যুবরাণী, টেম্পটেশন, টোকিও, পিটার মে, গােল্ডেন গ্লিন, ইত্যাদি।

বংশবিস্তার :

চন্দ্রমল্লিকার বংশবিস্তার হয় সাধারণত ডগা কলম করে বা তেউড় দিয়ে। তেউড় থেকে চারা তৈরি করার পদ্ধতি খুব সহজ এবং এর বৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা সহ্য করার ক্ষমতা বেশি। কিন্তু উচ্চমানের বেশি ফলন পেতে গেলে কলমের চারাই ব্যবহার করা উচিত।


জমি তৈরি ও মূলসার প্রয়ােগ :

জুলাই মাসের প্রথম দিকে চার-পাঁচবার গভীর ভাবে চাষ দিয়ে চন্দ্রমল্লিকা জমি তৈরি করতে হবে। প্রথম চাষের সময় বিঘা প্রতি ৪-৫ টন গােবর সার আর্বজনা সার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়।মাটি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর জমিকে ৪ মি x ৩ মি মাপের ছােট ছােট কেয়ারিতে ভাগ করে নিয়ে দু সারি কেয়ারির মাঝ বরাবর একটি ৬০ সেমি চওড়া নালা তৈরি করে দিতে হবে। নালাগুলি কেয়ারির চেয়ে কিছুটা নিচুতে তৈরি হলে প্রয়োজনে জল নিকাশের কাজ ও করতে পারে।


 জমির মাটি শোধনের জন্য ২ শতাংশ ফর্মালিন বা প্রতি বর্গমিটারে ১০০ গ্রাম হারে মিথাইল ব্রোমইড মাটিতে মিশিয়ে দুদিন পলিথিন চাদর চাপা দিয়ে রাখার পর পলিথিন চাদর সরিয়ে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। চারা বসানাের আগে বিঘা প্রতি ২০ কেজি নাইট্রেজেন, ৩০ কেজি পটাশ কেয়ারিতে ছড়িয়ে দিয়ে কোদাল দিয়ে মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে।


চারা লাগানাের পদ্ধতি :

পশ্চিমবঙ্গের সমতলভূমির জন্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসই কাটিং বা চারা গাছ লাগানাের পক্ষে আদর্শ সময়, যা থেকে শীতকালে ফুল পাওয়া যায়। অনেক সময় এর আগে থেকেই চারা লাগানাে শুরু হয়। বড়াে ফুলের চারাগুলি অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি এবং ৪৫ সেমি দূরে দূরে সারি করে লাগানাে হয়। অন্যদিকে ছােটো ফুলের চারাগুলি কিছুটা দেরিতে এবং ৩০ সেমি দূরত্বের সারিতে লাগানাে হয়। দুটি গাছের মধ্যে দূরত্ব থাকে ২০-৩০ সেমি এবং প্রতি বর্গমিটারে ১২- ১৫টি চারা লাগানাে হয়।


চাপান সার প্রয়ােগ পদ্ধতি :

চারা লাগানাের প্রায় এক মাস পরে বিঘা প্রতি ১০০ কেজি নিম খােল এবং ১০ কেজি ইউরিয়া চাপান সার হিসাবে দিতে হবে। এই পরিমাণ সার আরাে এক মাস পরে আর একবার দিলে ভালাে ফলন পাওয়া যায়। তরল সার হিসাবে ১০ লিটার জলে ১০ গ্রাম পটাশিয়াম নাইট্রেট, ৩০ গ্রাম অ্যামােনিয়াম সালফেট এবং ৩০ গ্রাম সুপার ফসফেট গুলে সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ দিন অন্তর দুবার প্রতিটি গাছে আধ লিটার করে দিলে ফুলের উৎপাদন ভাল হয়।


সেচ প্রয়ােগের নিয়ম :

চারা লাগানাে পর জল দিয়ে গাছের গােড়া ভালাে করে ভিজিয়ে দিতে হবে। সেচের সামান্য ঘাটতি অসুবিধাজনক নয়, কিন্তু অতিরিক্ত সেচ খুবই ক্ষতিকারক। গাছের বৃদ্ধি এবং নতুন পাতা ছাড়ার সময় সঠিক পরিমাণে জলের জোগান খুবই জরুরি। কুঁড়ি আসার পরে জলের প্রয়ােজনীয়তা কম হয়। আবহাওয়া ও মাটির প্রকৃতি বুঝে ৩-১০ দিন অন্তর করে সেচ দিতে হবে।


পরবর্তী পরিচর্যা :

ঘন ঘন নিড়ানি দিয়ে সবসময় জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। আগাছা বা ঘাস না থাকলেও মাঝে মাঝে মাটিতে নিড়ানি দিলে গাছ স্বাস্থ্যবান হয়। লাগানাের ১০ দিনের মধ্যে মরে যাওয়া চারাগুলি বদলে দিতে হয়। এছাড়া মূল কাণ্ডের অগ্রভাগ ঘেঁটে দিয়ে কাক্ষিক মুকুলের সংখ্যা বাড়ানাে যেতে পারে। চারাগুলি যখন ২০ সেমি লম্বা হয়, তখন ছাঁটাই করতে হয়। ছােটো ফুলের ক্ষেত্রে আরাে একবার ডগা ভেঙে দিতে হয়। বড়াে ফুলের গাছগুলি উঁচু হয় এবং এদের শক্ত কাঠি দিয়ে বেঁধে খাড়া করে রাখতে হয়। অবাঞ্ছিত ও অপরিণত কুঁড়ি ভেঙে কম সংখ্যক বড় আকারের বা বেশি সংখ্যক ছােটো ফুল উৎপাদন করা সম্ভব।


ফুল তােলার পদ্ধতি:

চন্দ্রমল্লিকার কুঁড়িতে রং এলেই ফুল তােলা যায়। পুষ্পদণ্ডের নীচের ১০ সেমি থেকে পাতা ছেটে ফেলতে হয়। ফুল তােলার সঙ্গে সঙ্গে তা সংরক্ষক ও ব্যাকটেরিয়ানাশক ওষুধ মেশানাে জলে কিছু- ক্ষণ রাখতে হয়। গাছে ২৮-৩৫ দিন পর্যন্ত ফুল তাজা থাকে। স্পর্শজনিত কীটনাশকের দ্রবণে কাটা ফুল আধ ঘন্টা ডুবিয়ে রেখে তারপর তা শুকিয়ে রাখা উচিত। প্লাস্টিকে মুড়ে ০.৫-০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চন্দ্রমল্লিকাকে প্রায় দেড় থেকে দু-মাস পর্যন্ত হিমঘরে রাখা যায়।


ফলন :

ফসল ভালাে হলে বিঘা প্রতি প্রায় তিন লাখ ছােট ফুল পাওয়া যায়, যার ওজন প্রায় দু টনের মতাে, এবং বড়াে ফুল পাওয়া যায় প্রায় ৭৫ হাজার।

রােগ-পােকার আক্রমণ ও তার প্রতিকার :

রােগ : পাতায় দাগ অথবা সাদা গুড়াে রােগ (powdery mildew) ইত্যাদির প্রতিকারের জন্য ক্যাপ্টান, ব্যাভিস্টিন অথবা বেনলেট ১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভালাে ফল পাওয়া যায়। এছাড়াও পরিমিত সেচ দিয়ে বা আক্রান্ত পাতা তুলে ফেলে এইসব রােগের তীব্রতা কিছুটা কমানাে যায়। শুকিয়ে যাওয়া রােগের ক্ষেত্রে আবর্তন চাষ, মাটি শােধন, রােগমুক্ত
বীজের ব্যবহার ইত্যাদি পথ অবলম্বন করা উচিত।


পােকা :

শুয়ােপােকা ও সাদা গ্রাবের জন্য এণ্ডোসালফান ৩৫ ইসি স্প্রে করা যায়। জাব পােকা দমন করতে মনােক্রোটোফস (০.০৪ শতাংশ) বা থিসেটন (০.০৪ শতাংশ) ভালাে ওষুধ। লাল মাকড় দমন করার জন্য ডাইকোফল বা ইথিয়ন স্প্রে করা উচিত।

আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি, ফসল চাষ এবং চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.