Type Here to Get Search Results !

আধুনিক পদ্ধতিতে মেস্তা চাষ করুন।Mesta cultivation process.

 আধুনিক পদ্ধতিতে মেস্তা চাষ করুন। Mesta cultivation process :

মেস্তাও একটি তন্তু জাতীয় ফসল। বয়নযােগ্য আঁশ জাতীয় ফসলগুলাের মধ্যে মেস্তা বেশ কষ্টসহিষ্ণু ফসল। অনুর্বর ফেলা জমিতেও এর চাষ করা যায় খুব সহজেই এবং খরচও খুব কম। এছাড়াও পাটের প্রায় সমান আঁশ পাওয়া যায় বলে পূর্ব -ভারতে এ ফসলের চাষ ক্রমশই বাড়ছে। এর উৎপত্তিস্থল অনুমান করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর চাষ হচ্ছে।

আধুনিক পদ্ধতিতে মেস্তা চাষ করুন।Mesta cultivation process.
চাষবাস বারোমাস। Bengali Agriculture

মেস্তা চাষে জলবায়ু :

মেস্তা খরিফ শস্য। এর জন্য গরম ভিজে আবহাওয়ার প্রয়ােজন। ভাল ফসল পেতে হলে ভাল বৃষ্টিপাতেরও প্রয়ােজন। কম করেও ৫০-৭৫ সে. মি. বৃষ্টিপাত যদি চার-পাঁচ মাস ধরে চলে তাহলে আশানুরূপ ফসল পাওয়া যেতে পারে। তবে এ কথাও আবার ঠিক যে, অধিক বৃষ্টিপাত, প্রবল বায়ুপ্রবাহ ও তুষারপাত এই ফসলের ক্ষতি করে। বৃষ্টির জলেই এর চাষ হয়, তবে তার পরিমাণ পরিমিত এবং একান্ত প্রয়ােজনীয় হওয়া চাই। আবার কোনাে কোনাে জায়গায় যদি প্রয়ােজন মতাে বৃষ্টি না হয়, তখন সেক্ষেত্রে দু’একটা সেচ দিয়ে মেস্তা চাষ করা যায়।

মেস্তা চাষে উপযুক্ত মাটি :

সব রকম মাটিতেই মেস্তা চাষ করা যায়। ভারতে সাধারণত অনুর্বর বেলেমাটিতে এর চাষ করা হয়। অন্য কোনাে ফসল চাষ করা যায় না এমন মাটিতেই মেস্তা চাষ করা যায়। তবে যে জমি নিচু এবং তার জন্য সেখানে জল জমে থাকে, এমন জমি মেস্তা চাষের পক্ষে একেবারেই উপযুক্ত নয়। দোআঁশ মাটি মেস্তা চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। মাটির পি-এইচ ৬.২-৬.৪-এর মধ্যে থাকলে মেস্তার ফলন ভাল হয়।

মেস্তা চাষে জমি তৈরীর পদ্ধতি :

চার-পাঁচবার তাড়াতাড়ি এবং লম্বালম্বি লাঙল ও মই দিয়ে মাটি ভালােভাবে তৈরী করতে হবে। জমি তৈরী করার সময় প্রতি একরে ৮-১০ গাড়ি গােবর বা আবর্জনা সার মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে। জমি তৈরীর এটাই প্রধান কাজ।

বীজ বপন পদ্ধতি  :

বীজ বপনের কয়েকটি পদ্ধতি আছে, আর, সেগুলি হলাে এই রকম ------
(১) বীজ বপনের সময় : ভারতে খারিফ মরশুমের সময় মেস্তার চাষ হয়। বৈশাখ-জ্যেষ্ট থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়।
(২) বীজের পরিমাণ :  প্রতি একরে ১০-১২ কে, জি, বীজ লাগবে বপন করার জন্য।

 মেস্তা চাষে বীজ বপনের পদ্ধতি : 

মেস্তার বীজ হাতে ছিটিয়ে বােনার পদ্ধতি অনেক দিন থেকেই চলে আসছে। বীজ বুনে মই দিয়ে বীজগুলােকে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। কোনো কোনাে সময়ে আখ, বেগুন প্রভৃতি চাষের জমির চারদিকে আলের ধারে মেস্তার বীজ বপন করা যায়। আবার সারিতেও বীজ বােনা যায়। ৩০ সে. মি. দূরত্বের ব্যবধানের সারিতে বীজ বুনতে হবে।

মেস্তা চাষে সার প্রয়োেগ পদ্ধতি :

মেস্তার জমিতে সাধারণত সার প্রয়ােগ করার প্রয়ােজন হয় না। তবে উচ্চমানের ফলন পাওয়ার জন্য প্রতি একর জমিতে চাষ করার জনন্য ১৫ কে, জি, নাইট্রোজেন, ৮ কে, জি, ফসফরাস এবং ৮ কে, জি, পটাশিয়াম দেওয়া প্রয়ােজন। জমি তৈরীর সময় পুরাে ফসফরাস এবং পটাশিয়াম প্রয়ােগ করতে হবে। বীজ বােনার ৩০-৪০ দিন এবং ৭০-৮০ দিন পর প্রতিবারে ৮ কে, জি, হারে নাইট্রোজেন চাপান সার হিসেবে প্রয়ােগ করতে হবে। ইউরিয়া জলে গুলে পাতায় স্প্রে করতে হবে। গাছের বয়স ৪০-৭৫ দিন হলে ও ইউরিয়া জলে গুলে পাতায় স্প্রে করতে হবে। মেস্তা জমি থেকে প্রচুর খাদ্যের উপাদান গ্রহণ করে। আর এই কারণেই মেস্তার চাষের পর অন্য ফসল চাষ করতে হলে প্রচুর পরিমাণে জৈব ও রাসায়নিক সার দেওয়া দরকার, তবেই পরবর্তী ফসল তােলা যায়।

মেস্তা চাষে পরিচর্যা :  

ভারতে মেস্তা চাষের জমিতে সাধারণত নিড়েন দেওয়া হয় না। এর জন্যে আগাছা জন্মায় প্রচুর। তাই দু-একবার নিড়েন  চালিয়ে আগাছা তুলে দিলে এবং গাছ পাতলা করে দিলে ফসল বেশ ভালােই তােলা যায়। তবে হ্যা, দু'টি গাছের মধ্যে ১৪- ১৫ সে,মি, দূরত্বের ব্যবধান রাখা উচিত।

মেস্তা চাষে জলসেচ পদ্ধতি:

মেস্তা সাধারণত বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল ফসল। তবে এটি খুব কষ্ট সহ্য করতে পারে। এমন কি মেস্তা বৃষ্টি না হলেও জন্মাতে পারে। তাই এর জন্যে এ ফসলে সেচ দেওয়ার খুব একটা প্রয়ােজন হয় না। 

মেস্তার বিভিন্ন প্রকার জাতঃ

মেস্তার বেশ কিছু জাত আছে। এই যেমন, আয়ালুর, এ এস সি-১০৮, সায়দরিফা-৫, আর- টি-১, আর-টি-২, এইচ-এস- ৪২৮৮, ৭৯১০, এ. এস. ভি-১, এইচ-সি-২৬৯, ৫৮৩ ও ৮৬৭, এন-পি- ৩, এন-পি-৬, সি-৬১৩, সি-৬১৫ ইত্যাদি। এর মধ্যে এন-পি এবং সারদারি-ফা-৫ জাতগুলির মােস্তা পশ্চিমবঙ্গে ভাল ফলন হয়।

মেস্তা চাষে শস্য রক্ষার করনীয় পদ্ধতি :

মেস্তার ফসলে ক্ষতিকারক পােকার উপদ্রব বড় একটা দেখা যায় না। তবে এ ফসলে ‘গুচ্ছমাথা’ দেখা যায়। দৈয়ে পােকার উপদ্রব দেখা যায় এই ফসলে। এই পােকা প্রতিরােধ করার জন্য প্রতি লিটার জলে দুই মি. লি, ডাইমেথয়েড ৩০ ই. সি., যেমন পােকার ৩০ ই, সি.গুলে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায় অর্থাৎ পােকা দমন করা যায়। মেস্তার আবার কাণ্ড পচা রােগ দেখা যায়। এ রােগ প্রতিরােধ করার জন্য প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম ম্যানকোজের ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি, যেমন ডাইথেন এম-৪৫, ইউথেন এম-৪৫ বা ক্যাপটান গুলে স্প্রে করতে হবে, তাহলেই এ রােগের প্রকোপ হ্রাস পেয়ে যাবে।


ফসল কাটার পদ্ধতি :  

মেস্তা গাছে ফুল ফুটতে শুরু করলেই ফসল কেটে ফেলতে হয়। গাছগুলােকে কেটে জমিতে কয়েক দিন ফেলে রাখতে হয়। এতে গাছের পাতা ঝরে যায়। তারপর পাটের মতাে আঁটি বেঁধে জলাধারে চুবিয়ে পচাতে হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ে পাটের মতাে আঁশ ছাড়িয়ে নেবার ব্যবস্থা করতে হবে।

ফলন : প্রতি একরে ৮-১০ কুইন্টাল।

আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি, ফসল চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।

 

 

_____________________________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.