Type Here to Get Search Results !

ডালশস্য চাষ এবং তার ব্যবহার। Cultivation of pulses and its uses.

 ডালশস্য চাষ এবং তার ব্যবহার। Cultivation of pulses and its uses :


ডালশস্য উদ্ভিদ প্রোটিনজাতীয় পুষ্টিকর খাবার। তাপন মূল্যের (ক্যালরির) হিসাবে ১০০ গ্রাম ডালশস্য প্রায় ২৫০ গ্রাম মাংসের সমান। ডালশস্যে শতকরা ১৮-২৬ ভাগ প্রােটিন থাকে। এছাড়াও এতে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, খনিজ লবণ ও যথেষ্ট খাদ্যপ্রাণ আছে। মানব দেহের মাংসের গঠন ও দেহের বৃদ্ধির জন্য প্রােটিন একান্ত দরকার, যা আমরা পেয়ে থাকি মাছ, মাংস ও ডাল থেকে। আবার নিরামিশাষী লোকেদের প্রােটিনের প্রয়ােজন মেটানাের জন্য প্রচুর ডালশস্য খাওয়া দরকার। ডালশস্য থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পাওয়া যায় যা মানবদেহের হাড়ের পুষ্টি ও গঠনের জন্য প্রয়ােজন। এছাড়াও ডালশস্যের উপজাতগুলাে, যেমন খােসা, চুনি প্রভৃতি পশুদের পুষ্টিকর খাদ্য। ডালশস্য চাষ করলে জমির উর্বরতা বেড়ে যায়। ডালশস্যের মূলে নাইট্রোজেন বন্ধনকারী (যথা রাইবােজিয়াম) জীবাণু বাস করে এবং গুটি তৈরী করে। এসব জীবাণু বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে গাছের মূলের গুটিতে জমা করে। এসব গাছ চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে দিলে মাটির উর্বরতা বেড়ে যায়। এছাড়াও ডালশস্য, বিশেষ করে বরবটি চাষ করলে ভূমিক্ষয় কম হয়। ডালশস্য চাষ করতে খরচ কম লাগে এবং অল্পদিনে ফসল তােলা যায়। সাথী ফসল (যেমন আখের সঙ্গে ছােলা) এবং মিশ্ৰশস্য (যেমন সর্ষে ও ছােলা) হিসাবে ডালশস্য চাষ করা যায়।  তাই ডালশস্য চাষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ডালশস্য চাষ এবং তার ব্যবহার। Cultivation of pulses and its uses.

চাষবাস বারোমাস। Bengali Agriculture

 ডালের ব্যবহার। Uses of pulses :

ডালশস্য বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। যেমন - মুগডাল, ছোলার ডাল, মুসুর ডাল, মটর ডাল, কলাই ডাল, এবং অরহর ডাল প্রভৃতি। প্রত্যেকের ব্যবহার সম্পর্কে নীচে আলোচনা করলাম।

মুগ ডালের ব্যবহার। Uses of Moog Dal : 

কাঁচা ও সবুজ মুগ সবজি হিসেবে খাওয়া যায়, মুগডাল গুঁড়াে করে ভিজিয়ে পাঁপড় ও বড়ি তৈরী করা হয়। এছাড়াও মুগ থেকে ডালমুট, চানাচুর, মুগের বর্কি, মুগের নাড়ু তৈরী হয়। মুগ কলাই ভেজেও খাওয়া হয়। সর্বকারি মুগ চাষ করলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

মুগডালের খাদ্যগুণ ......
১। প্রােটিন সমৃদ্ধ একটি খাওয়ার হল মুগডাল। মুগডাল ভেজানাে জল খেলে জ্বর কমে।

২।মুগডালকে প্রায় ১২-১৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখলে ডালে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি তৈরি হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরােধ করে।

৩। এছাড়া ডিটারজেন্ট ভ্যালু থাকায় মুগডাল বাটা মাখলে ত্বক পরিষ্কার ও মসৃন হয়।
৪। এই মুগডালে অলিগােস্যাকারাইড থাকায়, এই ডাল সহজ পাচ্য নয়, বেশি খেলে গ্যাস হতে পারে।

ছােলার ডালের ব্যবহার :

ভারতে ডালশস্যের মধ্যে ছােলা সবচেয়ে বেশি প্রয়ােজনীয় ও প্রাচীন ভালশস্য। ছােলার ডাল বেশ পুষ্টিকর খাদ্য। এতে শতকরা ৫০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ২২.৫ ভাগ প্রোটিন,৫.২ ভাগ ফ্যাট, ২.২ ভাগ খনিজপদার্থ এবং ১১.২ ভাগ জল থাকে। এটি ডাল, বেসন,ভিজে, ভাজা ও সিদ্ধ সব রকম ভাবেই খাওয়া যায়। চিকিৎসকরা স্কার্ভি রােগাক্রান্ত রােগীকে অঙ্কুরিত ছােলা খাওয়ার পরামর্শ দেন। পেটের অসুখ নিরাময়ে ছােলাপাতা থেকে পাওয়া ম্যালিক ও অকসালিক অ্যাসিড খুব ভাল কাজ দেয়। ছােলার ছাতু খাওয়া খুবই স্বাস্থ্য। ছােলা গুঁড়াে পশুদের প্রিয় খাদ্য। আর ঘােড়ার খাবার হিসেবে ভিজে ছােলার ব্যবহার বেশি। ভিজে ছােলা টিয়াপাখির প্রিয় খাদ্য।

 মসুর ডালের ব্যবহার : (Lentil)

বিজ্ঞানসম্মত নাম—Lens culinares 

মুসুর ডালের খাদ্যগুণ----

১. প্রচুর খাদ্যগুণ রয়েছে মসুর ডালে। এতে রয়েছে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, নিয়াসিন ও ভিটামিন-কে।
২. মসুর ডালে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যালস আর ফেনলস।

৩. মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় প্রােটিন, ডায়েটারি ফাইবার, ফোলেট ও আয়রন। প্রায় ৩৫% প্রােটিন পাওয়া যায় এই ডাল থেকে। এতে ক্যালরির পরিমাণ ও কম।

৪. শরীরকে ঠিকভাবে চালনা করতে ও মাসল জেনারেশনের জন্য মসুর ডাল অত্যন্ত উপকারী। এর কারণ এতে প্রচুর মাত্রায় প্রােটিন রয়েছে।

৫. এই ডালে প্রায় কোনও ফ্যাট নেই বললেই চলে, তাই এই ডাল খেলে হার্ট ভালাে থাকে। কারণ প্রােটিন খেলেও তা প্রায় ফ্যাট বর্জিত।

৬. মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফলিক অ্যাসিড যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৭. প্রচুর আয়রণ থাকার দরুণ শরীরে এনার্জি লেভেলও বাড়ে এই মসুরডাল খেলে।

৮. যেহেতু এতে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার, তাই রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে এবং হজম প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে এই ডাল।

৯. মসুর ডালে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিনস ও মিনারেলস যা প্রপার ব্রেন ফাংশনিং এর জন্য উপকারী।

১০. এই ডালে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রণ, হিমােগ্লোবিন যা শরীর ঠিক রাখতে কার্যকরী।

 অড়হর ডালের ব্যবহার :

(১) অড়হর ডাল সিদ্ধ করে খাওয়া হয়। এটি খুবই পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু।
(২) অড়হর গাছের সবুজ পাতা ও কচি ডগা সবুজ সার বা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(৩) অড়হর গাছের পাতার রস জডিস রােগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(৪) অড়হর গাছ ঝুড়ি তৈরী, ঘরের বা জমির বেড়া দেওয়ার কাজ ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ওর শুকনাে গাছ জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হয়।

(৫) অড়হর গাছ চাষ করলে জমির উর্বরতা বেড়ে যায়।

 মটর ডালের ব্যবহার :

সারা পৃথীবিতে মটর একটি অতি জনপ্রিয় ডাল শস্য। 

(১)মটরগাছের সবুজ ফলকেই বলা হয় মটরশুঁটি।মটরশুঁটি কাঁচা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। কচি মটরশুটি উপাদেয় খাবার।

(2) পাকা মটরের ঘুঘনি, মটরের ডালনা, মটর- পনির তৈরী করতে এর ব্যবহার হয়।

(৩) কচি মটর গাছ শাক হিসেবে যাওয়া যায়।

(s) মটর বীজ ডাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

(৫)মটর ডাল পেষাই করে ব্যাসন তৈরী করা হয় এবং তা দিয়ে নানান রকমের মুখরোচক খাবার তৈরী করা হয়। মটর ডাল ভেজে ডালমুট তৈরী করা হয়।

(৬) মটর গাছ গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
(৭) মটরের চাষ করলে জমির উর্বরতা বেড়ে যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.