লাউ চাষ পদ্ধতি। Lau farming method:
আমরা ভারতবাসীরা সবাই লাউ ব্যবহার করে থাকি। গরমের সময় লাউ-এর তরকারি খুবই ঠাণ্ডা, দ্রুত হজম হয়। তাই আমাদের দেশে এর ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। আদ্র জলবায়ুতে লাউ- এর চাষ ভাল হয়। এজন্য পুকুর, খাল-বিল ও নালার ধারে রােয়া গাছ জলা জায়গায় উপরের মাচায় বেশি ও আকারে বেশ বড় বড় লাউয়ের ফলন হয়। তবে জমা জলের জমিতে এর চাষ একেবারেই নিষিদ্ধ।
আধুনিক পদ্ধতিতে পটল চাষ করুন। সর্বাধিক লাভ বা অর্থ উপার্জন করুন। Pointed Gourd Farming in Bengali.
লাউয়ের বিভিন্ন জাত :
জাত
ভেদে লাউ গােল, লম্বা,বােতলাকৃতি, অর্থাৎ নানান আকারের লাউ হয়। আর সেই
জাত গুলাে হলাে, পুসা সামার প্রলিফিড বাউণ্ড, পুসা সামার কাবুলি, প্রলিফিড
লং, সিঙ্গাপুরি, গুটকা, প্রিয়া, কাবুলী লম্বা, জে-আর-১, পুসা মঞ্জুরী
(গােল), পুসা, মেঘদূত, জীবন (লম্বা) ইত্যাদি জাত। ভারতীয় কৃষি গবেষণা
পরিষদে উদ্ভাবিত পাঞ্জাব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পাঞ্জাব চাপান কদু’ (গােল)
উন্নত জলদি জাতটি বাজারে চালু করেছে। এটি যে কোনাে রােগ ও কেড়ি পােকার
আক্রমণ প্রতিরােধী জাত। ২ মাসে ফলন দেয়। প্রতি একরে গড় ফলন ৩৫
কুইন্টাল।হাইব্রিড জাতগুলাে হলাে, এস. জি. এইচ-১০, (বাবাদ) পুসা, মেঘদূত,
এন, বি. জি, এইচ-২২।
লাউ চাষে মাটি তৈরীর পদ্ধতি:
সার ও জমি তৈরী সময় প্রতি একরে ১৫-১৮ গাড়ি গােবর সার কম্পােষ্ট সারের সঙ্গে ৬০ কেজি, সিঙ্গল সুপার ফসফেট, ৪৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়ােগ করতে হবে, এছাড়া গাছ ১৮৭ লাগানাের সময় ও ফুল ধরলে দু'বার ইউরিয়া চাপান দিতে হবে।
লাউ
গাছ খুবই সার প্রিয়। এই কারণে রাসায়নিক সার ছাড়াও গােয়ালের আবর্জনা
সার ছাগলের নাদি, খােল ভেজা জল, মাছ ধোয়া জল, চাল ধােয়া জল, ভাতের বাসি
মাড়, ফিসমিল, ব্লাডমিলের খুব ভাল সার হয়।
লাউ বীজ বপনের পদ্ধতি :
শীতের
মাস পৌষ-মাঘে ফলন পেতে হলে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বীজ বােনা উচিত। পুসা সামার
প্রলিফিক (লম্বা ও গােল) ফাল্গুন ও আষাঢ় মাসে, পুসৗ মনুয়ী ও মেঘদূত
ফাল্বন মাসে এবং দেশী বর্ষাতি লম্বা জাত আষাঢ় মাসে বােনা উচিত। লাউ চাষের
জন্য প্রতি একরে বীজ লাগবে ৭৫০ গ্রাম। ৩ মিটারের ব্যবধানে তৈরী নালীর
দু'পাশে ৬০-৯০ সেমি ব্যবধানের প্রতি খেপে ৩-৪টি করে বীজ বুনতে হবে। ২টি ভাল
বাড়ন্ত গাছ রেখে বাকিগুলাে তুলে ফেলতে হবে।
লাউ গাছে রােগ পােকা প্রতিরােধ করবেন কীভাবে ?
পটলের রােগ-পােকা দমনেরই অনুরূপ।সেজন্য পটল চাষে রোগ - পোকা সন্মন্ধে জানতে পটল চাষ ক্লিক করুন।এছাড়া কোনো কিছু জানার থাকলে আমাকে কমেন্ট করতে পারেন।
বীজশূণ্য বড় আকারের লাউ :
লাউয়ের উপরের দিকের বীজ থেকে হওয়া সতেজ চারা দেড়-দু-ফুট লম্বা হলে এর নিচের গাঁটের উপরে ধারালাে ছুরি দিয়ে কেটে দিতে হবে। এভাবে ৭-৮ বার ডগা ছেটে দেওয়ার পর নতুন ডগা বের হলে তা মাচায় তুলে দিয়ে ভালভাবে পরিচর্যা করলে এই গাছেই বড় আকারের বীজশূন্য লাউয়ের ফলন পাওয়া যাবে।
পরাগ
মিলন অনেক সময় লাউ ছােট অবস্থায় শুকিয়ে গিয়ে ঝরে পড়ে। প্রজাপতি
মৌমাছির মাধ্যমে পরাগ মিলন না হলে এর ফল বড় হয় না। পুরুষ ফুলের অভাবেও
এরকম হয়।একটি পাখির পালক বা তুলার সাহায্যে ফুলযুক্ত সদ্য ফোটা স্ত্রী
ফুলের মধ্যে সদ্য ফোটা পুরুষ-ফুলের পরাগ রেণু তুলে খুব সতর্কতার সঙ্গে
স্ত্রী-ফুলের গর্ভকেশর মিশিয়ে দিতে হবে। এর ফলে ছােট ফল কম ঝরে যাবে। সকাল
সাতটার মধ্যে এই পরাগ মিলন ঘটাতে হবে। একটি পুরুষ ফুলের পরাগ ৪-৫টি
স্ত্রী-ফুলের কাজ করবে।
চাষী ভাইয়ের জন্য সুখবর :
মাটিতে কার্বোহাইড্রেট বাড়িয়ে স্ত্রী-ফুলের সংখ্যা বাড়ানাে যায়। গাছে ফুল ধরার ১০-১৫ দিন আগে জমিতে শুকনাে খড়-কুটো জঞ্জাল পােড়ালে মাটিতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এর ফলে ফলন বাড়বে। শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পর্যন্ত।
বেশি ফলন পাওয়ার উপায় :
প্রকৃতির নিয়মে মানুষের মতাে সবজি গাছেও স্ত্রী ও পুরুষের ফুল ফোটে। স্ত্রী-ফুলের সংখ্যার উপর লাউয়ের ফলন নির্ভর করে।পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে গাছের ২ পাতা ও ৪ পাতা অবস্থায় প্রতিবার ৫০ পি.পি.এর (১ পিপি এম প্রতি লিটার জলে ১ মিলি গ্রাম) হারে মালিক হাইড্রাইড বা (এম.এইচ) ২,৪-৫. টাই আইয়ােডাে বেজেয়িক এসিড (টিবা) স্প্রে করলে স্ত্রী-ফুলের সংখ্যা, ফলধরা ও মােট ফলন অনেক বেশি হয়। এছাড়া ৩ পি. পি, এম হারে বােরণ (সােহাগ) এবং ২০ পিপিএম হারে ক্যালসিয়াম স্প্রে করেও ফলন বেশি পাওয়া যায়।
_____________________________________________________________________
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....