Type Here to Get Search Results !

পাট গাছের পােকা ও রোগ প্রতিরোধের পদ্ধতি। Jute tree insects and disease prevention methods.

পাট গাছের পােকা ও রোগ প্রতিরোধের পদ্ধতি। Jute tree insects and disease prevention methods.

পাট গাছ চাষ করতে হলে তার রোগ - পোকা সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জানতে হবে। প্রতিকার কীভাবে করবেন তা অবশ্যই জানা প্রয়োজন। সেজন্য পাট গাছের বিভিন্ন রোগ - পোকা এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে আপনারা সবাই জেনেনিন। নীচে রোগ- পোকা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে দিলাম। যদি আপনারা উপকৃত হন অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন বা জানার থাকলে জেনে নেবেন। 

পাট গাছের পােকা ও রোগ প্রতিরোধের পদ্ধতি। Jute tree insects and disease prevention methods.


১। পাটের ঘােড়া পােকা :  

ঘােড়া পােকা পাটের অন্য সব পােকার মধ্যে-সৰ চেয়ে বড় শত্রু বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। আমাদের দেশের প্রায় সব পাট চাষের এলাকাই এই পােকার আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই পােকার শূককীটগুলি আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাটগাছের ওপর আক্রমণ চালিয়ে পাটের খুবই ক্ষতি করে থাকে। শূককীট গুলির রঙ সবুজ এবং গায়ে কোনাে কাটা থাকে না। পােকাগুলি খুবই স্পর্শকাতর। এরা বিরক্ত হলে তিড়িং-বিড়িং করে লাফিয়ে ওঠে এবং মাটিতে পড়ে যায়। ওদের এই স্বভাবের জন্য কোনাে কোনাে জায়গায় এদের তিড়িং পােকা বলা হয়। এরা গাছের কচি পাতা ও ডগা খেয়ে ফেলে। শুধু ডগাতেই এরা থেমে থাকে না, ডগায় নিচের দিকেও এদের আক্রমণ অব্যাহত থাকে। এর ফলে এদের আক্রমণে গাছ ঠিকমতাে বাড়তে পারে না। এবং বাড়তি শাখা-প্রশাখা বেরােয় বলে বলে পাটের আঁশ যথেষ্ট লম্বা হতে পারে না। এতে পাটের ফলন ও গুণগত মানও কমে যায়।


এই পােকা প্রতিরােধের উপায় :


এই পােকা প্রতিরােধ করার জন্য নিচে বর্ণিত যে কোনাে একটি কীটনাশক ওষুধ প্রয়ােগ করলে ফল ভালাে পাওয়া যায়।

 ওষুধের নাম :

এন্ডােসালফান ৩৫ ই-সি (যেমন থায়ােডান-৩৫ ই-সি, প্রতি লিটার জলে ওষুধের পরিমাণ ২ মিলিলিটার একরে ওষুধের পরিমাণ ৬০০ মিলিলিটার।


মিথাইন প্যারাথিয় ৫০ ই-সি. (যেমন মেটাসিড ৫০ ই-সি)প্রতি লিটার জলে ওষুধের পরিমাণ ১ মিলি লিটার একরেওষুধের পরিমাণ ৩০০ মিলিলিটার।

ফেনিট্টোথায়ন ৫০ ই-সি (যেমন সুমিথায়ন, ফলি- থায়ন-৫০ ই-সি, প্রতি লিটার জলে ওষুধের পরিমাণ ২ মিলিলিটার একরে ওষুধের পরিমাণ ৬০০ মিলিলিটার।

মনােক্রোটোফস ৩৬ এস এল।(যেমন নুভাক্রন ৩৬-ই-সি)প্রতি লিটার জলে ওষুধের পরিমা ১.৫ মিলিলিটার, একরে ওষুধের পরিমাণ ৬০০ মিলিলিটার।

কুইনালফস ২৫ ই-সি(যেমন একালাক্স ২৫ ই সি) প্রতি লিটার জলে ওষুধের পরিমাণ ১.৫ মিলি লিটার একরে ওষুধের পরিমাণ ৪৫০ মিলিলিটার

২। বিছা পােকা :

বিছা পােকা বা শুয়ােপােকা পাটের আর এক বড় শত্রু। কীড়ার রঙ হলদে এবং গায়ে অসংখ্য শুঁয়ো থাকে। ছােট অবস্থায় এরা ক সঙ্গে থাকে এবং গাছের কচি ডগা এবং পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। বড় হলে এরা পাতার পুরােটাই খেয়ে ফেলে। পাট গাছের ডগা খাওয়ার ফলে পাটের শাখা-প্রশাখা বেরােতে থাকে, এর ফলে আঁশের গুণগত মান হ্রাস পায়। শুকনাে আবহাওয়া বিশেষত আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত এই পােকার আক্রমণে পাটগাছ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রতিরােধের উপায় :- ঘােড়ার পােকার ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এক্ষেত্রেও অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩। পাটের আংকা বা গিট পােকা : 

পােকাগুলাে দেখতে অনেকটা চালের পােকার মতাে ছােট ও কালাে রঙের হয়। এই পােকার আক্রান্ত গাছের ডগাগুলাে শুকিয়ে ঢলে পড়ে। ডাঁটার কাছে আক্রান্ত জায়গাটা একটু ফুলে ওঠে আর তারই মাঝে একটা কালাে দাগ প্রকাশ পেতে দেখা যায়। এর ফলে আক্রান্ত গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। তবে সাধারণত এদের আক্রমণের লক্ষ্য হলাে তিতাপাট।

এ  পােকা প্রতি রোধের উপায় : 

পাটগাছের ৪৫ দিন বয়স থেকে ১৫ দিন অন্তর গাছে পােকা মারা ওষুধ প্রয়ােগ করতে হবে। এর জন্য প্রতি লিটার জলে দুই মিলিলিটার এন্ডােসমকন ৩৫ ই-সি, (যেমন থায়ােডান -৩৫-ই.সি প্রভৃতি) বা ফেনিট্টোথায়ন ৫০ ই-সি,(যেমন সুমিথায়ন ৫০-ই. সি, ফলিথায়ন-৫০ ই. সি. প্রভৃতি) বা দেড় মিলি লিটার কুইনালফস ২৫- ই. সি. ( যেমন একালাকস-২৫ ই. সি. প্রভৃতি) বা দু গ্রাম কারবারিল ৫০ শতাংশ গুলে স্প্রে করে নিতে হবে।

(৪) পাটের মাকড় বা রস চোষা পােকা :

 মাকড় পােকা পাটের ক্ষতিকারক পােকাগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য এবং ভারতের সব পাট উৎপাদক এলাকায় এর আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। পাটে উল্লেখ করার মতাে দু'ধরনের মাকড় পােকার উপদ্রব হয়। আর সে দুটি হলাে ...

(১) হলুদ মাকড় : এই পােকা আকারে খুবই ছােট হয় এবং এদের রঙ হলদেটে। খালি চোখে এদের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় না। এরা খুব ছোট বলে গাছের ওপর দিকে কচি পাতার নীচে দল বেঁধে থাকে এবং লুকিয়ে লুকিয়ে পাতার রস চুষে খায়। এর ফলে পাতাগুলি কুঁকড়ে যায় এবং পরে তামাটে রঙের হয়ে যায়। আক্রান্ত পাতাগুলি একসময় ঝরে পড়ে যায়। বৈশাখ জৈষ্ঠ্যে এদের উপদ্রব শুরু হয়।

এ পােকা প্রতিরোধের উপায়। 

এক লিটার জলে ২ মিলিমিটার এন্ডোসাল্কন ও ৩৫ ই. সি. (যেমন থায়ােডান-৩৫ ই. সি.) বা ১০ মিলিলিটার লাইম সালফার বা ১.৫ মিলিলিটার মিথাইল ডেমিটন ২৫ ই.সি. (যেমন মেটাসিনটক্স-২৫ ই. সি.) ১ মিলি লিটার মিথাইল প্যারাথিয়ন ৫০ ই, সি (যেমন মেটাসিড) বা ১.৫ মিলিলিটার মনােক্রোটোস ৩৬ এস এল, (যেমন নুভাক্রন-৪০ ই. সি.) গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে।

(খ) লাল মাকড় : এই পােকা আক্রমণ হানে তিতা পাটের ওপর। এরা গাছের সব অংশের পাতাতেই আক্রমণ চালায়। তবে এদের আক্রমণ নিচ থেকে উপরে, অর্থাৎ গােড়ার পাতাগুলাে থেকে শুরু করে ক্রমশ উপরের পাতার দিকে অগ্রসর হয়। এরা পাতার রস চুষে খায়। এর ফলে আক্রান্ত পাতাগুলো প্রায় রসশূন্য হয়ে হলুদ রঙের হয়ে যায় এবং আক্রান্ত পাতাগুলাে কিছু দিনের মধ্যেই অসময়ে ঝরে পড়ে যায়। আর এভাবেই আক্রান্ত ক্ষেতের সব পাটই হলুদ বর্ণের হয়ে যায়।

এ পােকা প্রতিরােধের উপায় : 

 
প্রতি লিটার জলে দু মিলিলিটার ডাইকোফল ১৮.৫ ই,সি, (যেমন কেলথেন) বা মােরোসাইড-৪০ ইসি বা দেড় মিলিলিটার মনােক্রোটোফাস ৩৬% এস, এল, (যেমন নুভাক্রন) গুলে আক্রান্ত পাট গাছে প্রয়ােগ করতে হবে।

(৫) কাতরি পােকা :

পাট বােনার একমাসের মধ্যে এই পােকা পাট গাছের ওপর আক্রমণ চালাতে শুরু করে। শূক কীটগুলাে সবুজ হলুদ বর্ণের হয় এবং আকাড়ে ঘােড়া পােকার থেকেও ছােট হয়। এই পােকা গুলাের যখন পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে তখন তার রঙ মেটে হয়ে যায়। শূককীটগুলাে কচি পাট গাছের পাতা খেয়ে অনেকটা মাকড়সার জালের মতাে করে দেয়। পূর্ণতাপ্রাপ্ত পােকা পাতা নির্মূল করে খেয়ে গাছকে একেবারে ডাটা সাফ করে দেয়। তবে সামগ্রিকভাবে এরা গাছের খুব একটা ক্ষতি করে না।

প্রতিরােধের উপায় :

এ পােকা প্রতিরােধের উপায় হলাে, প্রতি লিটার জলে দু মিলিলিটার এন্ডােসালফান ৩৫ ই-সি (যেমন থায়োডা ৩৫ ই, সি,) বা দেড় মিলিলিটার কুইনালফা ২৫ ই-সি. (যেমন একালাকস ২৫ ই, সি) গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে।
 

(৬) আংটি পােকা :

এই পােকাকে কোনাে কোনো জায়গায় বলয় কীটও বলা হয়। এই পােকা কেবল মাত্র তেতাে পাটে উপদ্রব চালায়। আর কেবল স্ত্রী পােকাই গাছের ক্ষতি করে। স্ত্রী পােকা গাছের কচি ডাটায় আংটির মতাে গােল করে ছাল ছিদ্র করে তার মধ্যে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে শূককীট বের হয়ে কাণ্ডের ভিতরে ঢােকে এবং কাণ্ডের রস পান করে বড় হতে থাকে। এভাবে কচি ডাটা কাটার জন্য এবং কাণ্ড থেকে রস শুষে নেওয়ার দরুণ আক্রান্ত গাছের ওপরের অংশ শুকিয়ে গেলে ঢলে পড়ে যায় । আর আক্রান্ত অংশের আশপাশে শাখা-প্রশাখা বের হয়। এর ফলে পাটের আঁশের ক্ষতি হয়।


প্রতিরােধের উপায়ঃ এ পােকা প্রতিরােধের উপায় হলাে, প্রতি লিটার জলে দুই মিলিলিটার এন্ডাে সালফান ৩৫ ই. সি. (যেমন থায়ােডান-৩৫ ই. সি, থায়ােনেল-৩৫ ই,সি,) বা দেড় সিলিলিটার মিথাইল ডেমিটন-২৫ ই. সি. যেমন মেটামিসকট- ২৫ ই. সি.) গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে।

পাটের রােগ ও তার প্রতিকার :

১। পাটের ধসা বা ডাটাপচা রােগ :  

পাটের এটি ছত্রাক ঘটিত রােগ। একই ছত্রাকের আক্রমণে পাটের চারা ধসা, ডাঁটাপচা ও গােড়া পচা রােগ হয়ে থাকে। এদের বাহ্য লক্ষণগুলাে বিভিন্ন ধরনের হয়। যথাঃ

(ক) চারা ধসা : চারা গাছের গােড়ার ডাঁটার যে অংশ জমির বরাবর থাকে, সেই অংশে চারদিকে ভালাে ধূসর রঙের দাগ দেখা যায়।কচি পাতাতেও এই রােগ দেখা দিতে পারে। এই রােগে প্রথমে পাতা আক্রান্ত হয়। আর সেই রােগাক্রান্ত পাতায় প্রথমে কালাে কালাে ফুটকি দেখা যায় এবং সেগুলাে প্রথম দিকে সবুজ থাকে। তবে পরে নানান রঙে, যেমন হলুদ, বাদামী বা কালাে হয়ে পচে যায়। এই পচন রােগ পাতা থেকে একটু একটু করে বোঁটার দিকের, বোঁটা থেকে গাছের ডাঁটায় ছড়িয়ে পড়ে। ডাঁটায় খয়েরী বা কালচে রঙের দাগ দেখা যায় এবং এই দাগ লাগা অংশে একটু একটু করে পচন শুরু হয়। রােগাক্রান্ত গাছগুলাে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মরে যায়। আর যদি বা গাছ গুলাে বেঁচে থাকে, তাহলে রােগাক্রান্ত গাছের পাট খুবই নিম্নমানের হয়।

* এ রােগের প্রতিরােধের উপায় :

১। রােগমুক্ত অঞ্চল থেকে সুস্থ, নীরােগ এবং পুষ্ট বীজ সংগ্রহ করে বুনতে হবে। এছাড়াও বােনার আগে বীজ শােধন করে নেওয়া উচিত।

২। রােগের প্রকোপ বেশি হলে শস্য পর্যায়ে পাট, আলু প্রভৃতি চাষ করা উচিত নয়।


৩। পাটের জমিতে চুন দিলে (প্রতি একরে ২-৬ কুইন্টাল) এ রােগ কিছুটা কম হতে পারে।

৪। এ রােগের উপদ্রব শুরু হলেই প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম হেকসাক্যলা (যেমন ক্যাপটান ৭৫ শতাংশ) বা ম্যানকোজেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি (যেমন ডাইথেন এস ৪৫) বা দেড় গ্রাম কার বেনডাজিম ৫০ শতাংশ ডব্লিউ-পি (যেমন ব্যাভিস্টিন গুলে গাছে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।)

২। পাটের শেকড় পচা রােগ :  

পাটের এই রােগটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। রােগাক্রান্ত গাছের পাতা ঝরে পড়ে এবং গাছের শেকড়ের রঙ বদলে বাদামী হয়ে যায়। এছাড়া গাছের মূল শেকড় আক্রান্ত হলে গাছটা একটু একটু করে শুকিয়ে যায়। গাছগুলাে বর্ষাকালে বড় হলে এই রােগের লক্ষণ বেশি করে দেখা যায়।

এ রােগ প্রতিরােধের উপায় : পাটের ধসা রােগ প্রতিরােধ করার উপায় এক্ষেত্রেও অনুসরণ করতে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.