Type Here to Get Search Results !

আধুনিক পদ্ধতিতে তুলো চাষ করুন । Cultivate cotton in a modern way.

আধুনিক পদ্ধতিতে তুলো চাষ করুন । Cultivate cotton :

তন্তু জাতীয় ফসলের মধ্যে তুলাে অন্যতম।পৃথিবীর সব দেশের সভ্য মানুষের খাদ্যের পরেই বস্ত্র ব্যবহারে প্রয়ােজন অপরিহার্য এবং তার বেশিরভাগই তৈরী হয় এই তুলাে থেকে।পৃথিবীর মােট তন্তুর চাহিদার শত -করা আটষট্টি ভাগই তুলাে পূরণ করে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন বস্ত্রশিল্পে ব্যবহার্য আঁশগুলাের শতকরা প্রায় সত্তর ভাগ তুলাে থেকে এবং অবশিষ্ট তিরিশ ভাগ পাট, শন, পশম, সিল্ক ও কৃত্রিম আঁশ থেকে উৎপন্ন হয়। তুলাে প্রধানত আঁশ উৎপাদনের জন্য চাষ করা হয়। তুলাের আঁশ থেকে সূতাে এবং তা থেকে নানান ধরনের বস্ত্র তৈরী করা হয়। আবার এই তুলাের বীজ থেকে তেলও তৈরী করা হয়। তুলাে বীজের খােল পশুখাদ্য ও সার হিসাবে ব্যবহার করা হয়। শুকনাে গাছ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশেই প্রথম তুলাের উৎপত্তি হয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে।

 

আধুনিক পদ্ধতিতে তুলো চাষ করুন । Cultivate cotton in a modern way.
  Image by Bishnu Sarangi from Pixabay

জন্মের উৎপত্তিস্থল, ক্রোমােজম সংখ্যা এবং মূলাধারের গুণগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তুলােকে নিচে বর্ণিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।


১। প্রাচীন পৃথিবীর তুলাে :   2n-25 : গােসিপিয়াম আরবােরিয়াম, গােসিপিয়াম হারবােসিয়াম। 

২। নতুন পৃথিবীর তুলো :  2n-52: গােসিপিয়াম হিরসুটাম, গােসিপিয়াম বারবাডেন্স।

তুলোর বিভিন্ন প্রকার জাত :

পশ্চিমবঙ্গে চাষের উপযােগী জাত হলাে পি-২১৬- এফ, কৃষ্ণা ১৫০,পি-আর- এস  -৭২। এস সী ইউ -৫, এস -এইচ-১৩১ ইত্যাদি। 


ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তুলাে চাষের উপযােগী জাত হলাে : ৩২০ এফ, এইচ-৪, দিগ্বিজয়, কোহিত,শ্যামেলী, নর্মদা, কল্যাণ, এইচ-৫, লক্ষী, কৃষ্ণা, বিজয়, বরলক্ষী, সুজাতা, জি-৫০, ২৩১ আর, এল-আর এ৫১৬৬,এইচ- ৭৭৭, জি-৫, জি-৭৯৭, জি-৩৯৪৩,ভারতী, রেবা, এম. সি-ইউ-৪, ৫ ও ৭, জি-২৭, শি.এস-৯, শি:এস-১০, এ- ২১৮, সি-গুজরাট-৬৭, জি-২২, একে-২৩৫, বাইচুং-৫১, ভাগ্য (জি-এস-২৩), হাইব্রীড-৪ ও এল-১৪৭, সে-ই, মালজারি, বি-১, বিক্রম, সুজয়, শ্যামলী, মহালক্ষ্মী, অবাধিতা, সুমন, সন্জয় ইত্যাদি।

তুলো চাষের উপযোগী জলবায়ু :

 তুলাে হচ্ছে উপক্ৰান্তীয় ফসল। ৮৫-৯০° ফারেনহাইট (২৮°-৩২° সেলসিয়াস) তাপমাত্রা তুলা চাষের পক্ষে খুবই অনুকূল। ৭০-৭৫ সে. মি. বৃষ্টিপাত হলে সেচ ছাড়াই তুলো চাষ করা যায়। তবে অধিক মাত্রায় বৃষ্টিপাত এবং অধিক তাপমাত্রা তুলাে চাষের আদর্শ জলবায়ু এবং মাটির গুণগত বিচারে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিল -নাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড়, কর্ণাটক, পাঞ্জাব ও হরিয়ানাই উপযুক্ত। এই কারণে এই আটটি রাজ্যে তুলাে চাষের পক্ষে অনুকূল নয়। আর সমতল অঞ্চলেই তুলাের চাষ বেশি হয়।

তুলাের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। অবশ্য অন্য কয়েকটি রাজ্যেও কিছু কিছু তুলাে চাষ হয়। যাইহােক, তুলাে উৎপাদনে গুজরাটের স্থান সবার আগে প্রথম, মহারাষ্ট্র দ্বিতীয়, পাঞ্জাব তৃতীয় এবং হরিয়ানা চতুর্থ স্থান অধিকার করে আছে।


তুলো চাষের উপযোগী মাটি :

দক্ষিণ ভারতের কালাে মাটি ও কাদাযুক্ত দোআঁশ এবং পলি দোআঁশ মাটি তুলাে চাষের পক্ষে বিশেষ উপ -যােগী। উপকূলবর্তী লবণাক্ত মাটিতেও তুলাে চাষ করা যায়। তবে তুলাের জমিতে জল নিকাশের ভাল ব্যবস্থা থাকা দরকার। মাটির পি. এইচ ৫.৫-৮.৫-এর মধ্যে থাকলে তুলাের ফসল ভাল হয়।


তুলো চাষের উপযোগী জমি তৈরীর পদ্ধতি :


তুলাে চাষের জমিতে চার-পাঁচবার লাঙল ও মই দিয়ে জমি তৈরী করতে হবে। জমি তৈরীর সময় প্রতি একরে ৮-১০ গাড়ি গােবর বা আবর্জনা সার দিয়ে মাটির সঙ্গে খুব ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

তুলো চাষে বীজ বপনের নিয়মাবলী :

১। বীজ বপনের সময় : সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে  অগ্রহায়ণ থেকে পৌষের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অন্যান্য অঞ্চলে জৈষ্ট্যের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আষাঢ়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত।


২। বীজ শােধন : প্রতি লিটার জলে তিন গ্রাম থাইরাম বা ম্যানকোজেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি যেমন ডাইফেন এম-৪৫ গুলে তাতে বীজগুলাে ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে শােধন করে নিতে হবে।


৩। বীজের পরিমাণ : একর প্রতি দেশীজাত ৩-৪ কে. জি. এবং আমেরিকান জাত ৮-১০ কেজি, তুলাে মুক্ত বীজের প্রয়ােজন হয়।


৪। বীজ বপনের পদ্ধতি : তুলাে বীজ সারিতে বােনাই উপযুক্ত। দেশী লাঙল দিয়ে তৈরী নালায় বীজ বপন করা যায়। এছাড়া নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধান খুশি করে হাত দিয়ে পুঁতে বীজ বপন করা যায় যায়। নিয়ম মতাে আড়াই ফুট (৭৫ সে. মি.) দূরত্বের ব্যবধানে। সারি করে সারিতে এক ফুটের (৩০ সে. মি.) ব্যবধানে বীজ লাগাতে হবে।


তুলো চাষে সার প্রয়ােগ পদ্ধতি :

একর প্রতি ১৫ কে. জি. নাইট্রোজেন, ১৫ কে. জি. ফসফরাস এবং ১৫ কে. জি. পটাশিয়াম প্রয়ােগ করতে হবে। জমি তৈরীর সময় সম্পূর্ণ ফসফরাস ও পটাশিয়াম এবং অর্ধেক নাইট্রোজেন প্রয়ােগ করতে হবে। বাকী অর্ধেক নাইট্রোজেন দুভাগ করে বীজ বপনের ৫-৬ সপ্তাহ এবং ৮-১০ সপ্তাহ পরে চাপান সার হিসাবে প্রয়ােগ করতে হবে। তবে ওই চাপান সারের অর্ধেক, অর্থাৎ ৫ কে. জি. নাইট্রো -জেন ইউরিয়া আকারে জলে গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে।

তুলো চাষের পরিচর্যা :

বীজ বপন করার ৩-৪ সপ্তাহ পরে একবার নিড়েন দিয়ে আগাছা তুলে ফেলতে হবে। নিড়েন ও মাটি আল্গা করার জন্য খুরপি, কোদাল, চাকাবিদা ব্যবহার করা যেতে পারে। গাছগুলাের ঘনত্ব বেশি হলে নিড়েন দেওয়ার সময় সেগুলাের দূরত্ব বাড়িয়ে পাতলা করে দিতে হবে। যেমন প্রতিটি গর্তে একটি বা দুটি সতেজ চারা রেখে বাকী গুলােকে তুলে ফেলতে হবে।প্রথম সেচ দেওয়ার আগে চারা পাতলা করার কাজ শেষ করা দরকার। কোনো কারণে গাছ না জন্মালে বীজ বপনের ১৫-২০ দিনের মধ্যে সেই গর্তে আবার চারা লাগিয়ে দিতে হবে। আগাছা দমন করার জন্য আগাছানাশক ওষুধও প্রয়োেগ করা যেতে পারে। যেমন পি আর. এস -৭২, এন, নি. ইউ-৫, এস-এইচ-১৩১ ইত্যাদি।

তুলা জমিতে পর্যায়ক্রমে ফসল হিসাবে মুগ, সয়াবিন ইত্যাদি চাষ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাড়তি সার হিসাবে প্রতি একরে ১৫-১৬-কে. জি. ফসফরাস প্রয়োগ করতে হবে।অসেচ এলাকায় পৰ্যায়ক্রমে ফসল ঢাকা শস্য হিসাবে মাটির আদ্রতা রক্ষা করা যায়।এছাড়াও এসব ফসল চাষ করলে মাটিতে নাইট্রোজেন যোগ হয়।

তুলা চাষের প্রয়োজনীয় জলসেচ : 

পশ্চিমবঙ্গে সেচ ছাড়াই তুলাে চাষ করা হয়। তবে যদি প্রয়ােজন হয় জলসেচ নিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া সময় মতাে বৃষ্টি না হলে জলসেচ দেওয়া খুবই প্রয়ােজন। ফুল ফোটা ও ফল ধরার সময় জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ রস থাকা দরকার। এই কারণে যে, এ সময়ে জলের অভাব ঘটলে ফুলের কুঁড়ি ঝরে যায়। এর ফলে ফলন অনেক কমে যায়। জমিতে জল জমে থাকলে তুলাে একেবারেই সহ্য করতে পারে না। এই কারণে তুলোর জমিতে বেশি পরিমাণ জলসেচ করা উচিত নয়।

তুলো চাষে শস্য রক্ষার করনীয় পদ্ধতি।

____________________________________


পােকা সংক্রমণে কী করবেন ?

তুলাের ফুলের পোকা প্রথমে গাছের ডগা ফুটো করে এবং এরপর ফল ফুটো করে ভেতরে প্রবেশ করে। ফলে আক্রান্ত অংশ নষ্ট হয়ে যায়। পাতা মােড়া তুলো পোকা তুলাে গাছের পাতা গুটিয়ে বাসা বাঁধে এবং পাতা খেয়ে ক্ষতি করে। এই পােকা দমন করার জন্য প্রতি লিটার জলে দেড় মিলিলিটার ফসফোমিত্তন ৪০ এস এল (যথা সুমিডন প্রভৃতি) গুলে স্প্রে করাতে হবে। আবার শােষক পোকাও থ্রীপস গাছের পাতার রস চুষে খায়। এর ফলে পাতা হলদে হয়ে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। লাল পােকা কুঁড়ি, ফুল ও ফলের রস চুষে খায়। সাদা মাছি উপদ্রব হলাে, তারা পাতা খেয়ে ফসল ক্ষতি করে। এছাড়াও এরা ভাইরাস ঘটিত রােগ ছড়ায়। এদের উপদ্ৰব প্রতিরোধ করার জন্য প্রতি লিটার জলে এক মিলিমিটার মিথাইল ডেমিটন ২৫ ই.সি. (যথা : মেটাসিসটকম)বা কুইলালফস ২৫ ই, সি, (যথা একালাকস ২৫ ই, সি.) গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে।

রোগাক্রান্ত হলে কী করবেন :

তুলাে নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এসবের মধ্যে মূল পচা,অ্যানথ্রাকনােজ, মিলডিউ রােগ অন্যতম। এদের প্রতিরােধ করার জন্য প্রতি লিটার জলে আড়াই গ্রাম ম্যানকোজের ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ. পি. (যথা ডাইথেন এম-৪৫) বা জিনেব (যথা ডাইথেন জেড-৭৮) বা একমিলি জাইরাস (যথা কুমানএল) গুলে তুলা গাছে স্প্রে করতে হবে। এসবই তুলা রোগনাশক ওষুধ, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ঢলে পড়া রােগে তুলাের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। এদের প্রতিরােধ করার জন্য প্রতি লিটার জলে দেড় গ্রাম এগ্রিমাইসিন বা পৌষসামিন গুলে রােদ ঝলমলে দিনে গাছে স্প্রে করতে হবে।

ফসল তােলার পদ্ধতি :

ফল ফেটে গেলেই বুঝতে হবে, তুলাে তােলার সময় হয়ে গেছে।তবে গাছের সব ফল একসঙ্গে পাকে না। তাই দু-তিন সপ্তাহ ধরে দফায় দফায় ফল ফাটলে পর তুলাে তুলতে হয়। তুলাের ফল অর্থাৎ বীজগুলাে ছাড়িয়ে নিয়ে তুলাে সংগ্রহ করতে হবে।


ফলন :

প্রতি একরে ৫-৬ কুইন্টাল বীজসহ তুলাে পাওয়া যায়। তবে উন্নত প্রথায় চাষ করলে একর প্রতি ৮-১০ কুইন্টাল বীজসহ তুলাে পাওয়া যেতে পারে।

আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধ্যন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি, ফসল চাষ এবং চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।


_______________________________________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.