Type Here to Get Search Results !

গম চাষের সঠিক পদ্ধতি । Wheat cultivation process.

গম চাষের   পদ্ধতি।   Wheat farming method :

 
গম চাষ করতে হলে ও ভালো ফসল পেতে হলে মনোযোগ সহকারে গম চাষ পদ্ধতি ভালকরে জেনে নিয়ে চাষ করুন ও লাভবান হন। বিভিন্ন ধরণের গমের বীজ রয়েছে সেগুলি সম্পর্কে সঠিক ভাবে জেনে নিন এবং কোথায় কোন ফসল চাষ করলে লাভবান হতে পারবেন পূর্বের গমের বীজ সম্পর্কিত তথ্য পোস্ট করা আছে তা দেখে নিয়ে চাষ করুন।


গম চাষের সঠিক পদ্ধতি । Wheat cultivation process.
Image by Hans Braxmeier from Pixabay 

➤ গম চাষের সঠিক পদ্ধতি।  

গম চাষ করতে হলে তার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে সেগুলি নিচে আলোচনা করলাম তা দেখে নিন।গমের বিজ্ঞানসম্মত নাম- Triticum aestivum .

গম চাষের উপযোগী মাটি :- 


দোঁয়াশ, রেলে-দোঁয়াশ, পলি-দোঁয়াশ এবং এটেল দোঁয়াশ মাটিতে গম চাষ করার পক্ষে খুবই উপযুক্ত। জলসেচ এবং জল নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকা দরকার। জমিতে (আর্দ্রতা) থাকতে থাকতে ৫-৬ বার চাষ ও চাষ দেওয়ার পর মই দিয়ে জমি তৈরী করতে হবে। জমি তৈরীর সময় একর প্রতি ৮-১০ গাড়ি গােবর সার প্রয়ােগ করতে হবে। উই, কাটুই পােকা বা ঘুরঘুরে পােকার উপদ্রব থাকলে প্রতি একরে ১০-১২ কেজি, ভার্সৰ্বান ১০ শতাংশ গুঁড়াে ওষুধ শেষ চাষের আগে প্রয়ােগ করতে হবে। সেচ তাে করবেন, কিন্তু সে জল জমির সর্বত্র সমান ভাবে বন্টন হলাে কিনা তা অবশ্যই দেখতে হবে, আর যদি দেখেন অসমান, তাহলে সেজন্যে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। জলসেচ ও জল নিকাশের মধ্যে ১৫-২০ হাত ব্যবধান তৈরী করে নেওয়া প্রয়ােজন। জমিতে রসের অভাব ঘটলে বীজ বপন করার চার-পাঁচ দিন আগে সেচ দিয়ে তবেই গমের বীজ বুনতে হবে।
 
আমনের জমি, তথা এঁটেল-দোআঁশ হলে তাতে আদ্রতা আসতে বিলম্ব হয় এবং এর ফলে গম বুনতে দেরী হয়। অতএব এরকম জমির মাটি তৈরী না করেই বপন করা কি অসম্ভব? না, কোনাে কিছুই অসম্ভব নয়! জমিতে লাঙল দিয়ে ধান গাছের দুটো সারির মাঝে নালি কেটে সেই নালিতে গমের বীজ বুনে দেওয়া যায়। এতে ফলনের তেমন কোনাে তফাত দেখা যায় না। শুধু তাই নয়, এর জন্য জমি তৈরীর কোনাে খরচ লাগে না।

(ক)  গমের বীজ কখন রােপণ করতে হবে :- 

ধানের মতাে গমের জাত ও আবহাওয়ার ওপর গম রােপণের সময় অনেকটা নির্ভর করে। এই কারণে যে ফলন পাকতে সময় লাগে এমন জাতের গম আগেই বােনা উচিত। যেসব এলাকা সেচ নির্ভরশীল সেখানে বিভিন্ন জাতের গম রােপণের সময় নিচে উল্লেখ করা হলাে----
 অসেচ এলাকায় সােনালিকা, ইউ-পি-২৬২, কল্যাণসােনা ও জনক জাতের গম কার্তিকের শেষ পক্ষের মধ্যেই রােপণ করা উচিত। তবে উত্তর ভারতে সােনালিকা ও কল্যাণসােনা কার্তিকের শেষ থেকে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি রােপণ করা যেতে পারে।
 
সেচ এলাকায় সােনালিকা ও জনক জাতের গম নাবিতেও রােপণ করা যেতে পারে। পৌষ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত গম রােপণ করা যেতে পারে। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার গম রােপণ করতে যতাে দেরী হবে, ফলনও সেই হারে কম হবে। অগ্রহায়ণের শেষ পক্ষে যদি গম বােনা সম্ভব না হয়, তাহলে গমের চারা রােয়াই ভালাে।
 
ধানের মতাে কখনাে বীজতলায় চারা করে ৪০-৪৫ দিন বয়েসের চার। ৮ ইঞ্চি (২০ সে. মি.) দূরত্বের সারিতে ৪-৬ ইঞ্চির (১০-১৫ সে. মি.) ব্যবধানে রােপণ করতে হবে। গমের চারা রােপণের জন্য জমি কাদা করে নিতে হবে। তারপর প্রয়ােজন মতাে ১৪-১৫ দিনের ব্যবধান সেচ দিলেই চলবে। সাধারণত ভালােভাবে তৈরী বীজতলায় হাল্কা করে (১০-১৫ সে. মি.-এর ব্যবধানে) বীজ রােপণ করে চারা তৈরী করে নিতে হবে। গবেষণা করে দেখা গেছে, পৌষ মাসের শেষ পর্যন্ত চারা রােপণ করে কল্যাণসােনা জাতের গমে সরাসরি বীজ বপন করা অপেক্ষা ৮০ শতাংশ বেশি ফসল তােলা সম্ভব হয়েছে।

(খ) বীজ শােধন পদ্ধতি :- 

শতকরা ৮০ শতাংশ অঙ্কুরােদগম ক্ষমতাসম্পন্ন বীজ রােপণের জন্য ঠিক মতাে নির্ধারণ করতে হবে। তাই এখানে বলে রাখা ভালাে, সার্টিফায়েড বীজ বপন করাই ভালাে। বীজবাহিত গােড়া পচা ও চারা ধসা রােগ দমনের জন্য বীজ শােধন করে রােয়া দরকার। আর বীজ শােধন করার জন্য প্রতি কেজি বীজে তিনগ্রাম হিসাবে থাইরাম বা ম্যানকোজেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি (ডাইথেন-এম-৪৫) মিশিয়ে বীজ শােধন করে নিতে হবে। আলগা ভূযাে রােগ দমনের জন্য প্রতি কেজি বীজে তিন গ্রাম ভিটাভ্যাক্স বা দেড় থেকে দু গ্রাম ব্যভিস্টিন বা বেনলেট মিশিয়ে বীজ শােধন করে নিতে হবে। ব্যাভিস্টিন বা বেনলেট বীজ শােধনের শেষ কথা, এর যে কোনাে একটা ব্যবহার করলে বীজ শােধনের জন্য আর কোনাে ওষুধ লাগাবে না।

(গ) বীজের পরিমাণ  :- 

 প্রতি একর জমিতে ৪০-৪৫ কেজি বীজের প্রয়ােজন হয়। এখানে মনে রাখতে হবে। বীজ রােপণ করতে দেরী হলে বীজের পরিমাণ সেই অনুপাতে বাড়তে থাকে। আমাদের দেশের চাষীভাইরা সাবেকী-প্রথা অনুসারে সাধারণত কাঠা পিছু এক কেজি করে বীজ বুনে থাকেন।

(ঘ) বীজ রােপণের পদ্ধতি :- 

 বীজ হাতে ছিটিয়ে এবং বােনা যন্ত্রের সাহায্যেও সারিবদ্ধভাবে বােনা যায়। লাঙলের পিছনে নালি দিয়ে গম বুনলে বীজ বপনের পরে সারি রাবর হাল্কাভাবে মই দেওয়ার পর বীজগুলির ওপর মাটি ফেলে ঢেকে দিতে হবে। ৮-১০ ইঞ্চি (২০-২৫ সে. মি.) ব্যবধানের সারিতে দেড় থেকে দু ইঞ্চি (৩,৭–৫ সেমি) গভীরে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের সময় জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ রস থাকা দরকার।
অতএব জমিতে যদি যথেষ্ট রস না থাকে তাহলে শুকনাে জমি জল দিয়ে ভিজিয়ে রস আনলে গম বুনতে দেরী হয়ে যাবে। তাই শুকনাে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরী করার পর সেই শুকনাে জমিতেই গমের বীজ বপন করে হাল্কা ভাবে সেচ দিতে হবে। এতে গমের ফুল বেশ ভালভাবেই বেরুবে এবং ফলনও ভালাে হবে। গম ছিটিয়ে বােনা হলে দু'একদিনের মধ্যেই 'কল’ বের হওয়ার আগেই প্রধান সেচনালার আড়াতাড়ি সরু সৰ কঁাচা আল তুলে গম চাষের জমি ৫/৬ থেকে ৮/১০ হাত চওড়া এমন ছােট ছোট ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এই সব কাচা আলেও গমের গাছ অবশ্যই থাকবে, আর্থাৎ আল করার জন্য জমির কোনাে অংশই নষ্ট হবে না। আর বীজ বােনার যন্ত্র দিয়ে বীজ বুনলে আগে থেকেই এভাবে আল তুলে আলাদা আলাদা প্লটে ভাগ করে নিতে হবে জমিটাকে। সেচ দেওয়ার সময় একটা কথা মনে রাখতে হবে, সেচ নালার জল যেদিক থেকে বইছে সেদিকের প্লটে আগে সেচ দিতে হবে। এর ফলে জলের অপচয় বন্ধ হয়ে বরং সাশ্রয় হবে।

(ঙ) সার প্রয়ােগের পদ্ধতিঃ- 

 জমিতে কতাে পরিমাণ সার দিতে হবে তা নির্ণয় করার জন্য আগে জমির মাটি পরীক্ষা করতে হবে, তারপর সেই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতেই জানা যাবে সারের পরিমাণ কতাে হবে। তবে সাধারণত সেচ সেবিত এলাকায় প্রতি একর জমিতে ৪০ কে. জি. নাইট্রোজেন, ২০ কে. জি. ফসফরাস এবং ২০ কে, জি, পটাশিয়াম প্রয়ােগ করা হয়। আর জমি তৈরী করার সময় উপরে উল্লেখিত সমস্ত ফসফরাস ও পটাশিয়াম এবং অর্ধেক নাইট্রোজেন দিতে হবে। অবশিষ্ট অর্ধেক নাইট্রোজেন চাপান সার হিসেবে প্রয়ােগ করা হয়। সাধারণত প্রথম সেচ দেওয়ার সময় প্রতি একরে ১০ কে. জি. নাইট্রোজেন এবং দ্বিতীয় সেচ দেওয়ার সময় ১০ কে. জি. নাইট্রোজেন চাপান সার হিসেবে দেওয়া। হয়। তবে সার প্রয়ােগের উপযুক্ত সময় হলাে বেলা দশটা। গমের পাশকাঠি আসার সময়ে ২.৫-৩ শতাংশ ইউরিয়া প্রতি সপ্তাহে একবার করে দু-তিনবার স্প্রে করলে গাছের বৃদ্ধিলাভ বেশ ভালােই হয়।
 
অসেচ এলাকায় প্রতি একরে ২৪ কে. জি. নাইট্রোজেন, ১২ কে. জি, ফসফরাস এবং ১২ কে. জি. পটাশিয়াম প্রয়ােগ করতে হবে। আগাছা দমন গমের বীজ বপন করার পর প্রথমবার সেচ দেওয়ার পর সারিবদ্ধভাবে বােনা ফসলে চাকাবিদার সাহায্যে আগাছা দমন করতে হবে। তবে চাকাবিদা যদি না থাকে তাহলে খুরপি বা নিড়ানী দিয়ে আগাছা তুলে ফেলতে হবে। ইদানীং গম চাষের জমিতে ক্যালাঘাস (ক্যালারিস মাইনর) এবং বুনাে জই এভেনা লুডুভিসিয়ানা নামে দু'টি মারাত্মক আগাছ দেখা যাচ্ছে। ফ্যালাঘাস দেখতে প্রায় গম গাছের মতােই। তবে এর শীষ গম গাছের মতাে নয়। এর শীৰ আঙুলের মতাে মােটা এবং এক থেকে দেড় ইঞ্চি লম্বা হয়। তাই এসব আগাছা চিহ্নিত করা মাত্র তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এছাড়াও বীজ বােনার একদিন পরে ২৫০ লিটার জলে ৬০০ মিলি ট্রাইবুনিল নামের আগাছা মারার ওষুধ মিশিয়ে এক একর জমিতে ছিটিয়ে দিলেই এরকম আগাছা খতম হয়ে যাবে। তবে কেবলমাত্র ফ্যালাঘাস থাকলে ২৫০ লিটার জলে ২ লিটার টক-ই-২৫ গুলে আগাছা দেখা দেওয়ার আগেই স্প্রে করতে হবে। আবার ফ্যালাঘাস ও বুনােজই-এর সম্ভাবনা না থাকলে গম বােনার এক মাস পর অর্থাৎ চারটি পাতা গজালে ৩০০ লিটার জলে ২৫০ গ্রাম সােডিয়াম, ২.৪ ডি (কারনকসন) বা ৩০০ মিলি এমাইন ২.৪ ডি (উইডার ১৬) গুলে এক একর জমিতে স্প্রে  কথা মনে রাখতে হবে, ওষুধ দেওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে কোনাে সেচ দেওয়া চলবে। আবার গমের সঙ্গে সর্ষে বা অন্য কোনাে ফসলের বীজ বােনা হলে ২-৪ ডি প্রয়ােগ করা চলবে না। জলসেচ ও গমের আশানুরূপ ফলন পাওয়ার জন্য ঠিক সময়মতাে এবং সঠিক পরিমাণ মতাে জলসেচের ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়ােজন। বীজ বােনার অন্তত এক সপ্তাহ আগে একবার সেচ দিতে হবে। তারপর ‘জো এলে জমি চষে বীজ বপন করতে হবে। 
 
 তারপর বীজ বােনার ২১ দিনের মাথায় অবশ্যই আবার সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। এ সময়েই শীর্ষ-মূলের গাঁট ফুলতে শুরু করে। এ গাট মাটির ওপর থেকে মাত্র এক সে. মি. নিচে থাকে এবং সাধারণত ২০ দিনে এখানকার মাটির রস শুকিয়ে যায়। এ সময় মাটিতে রস থাকলে গাঁট থেকে শীর্ষমূল ছাড়তে পারে না। শীমূল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিয়ান বের হয়। অতএব সেচ দিতে যতাে দেরী হবে বিয়ানও বের হতে দেরী হবে, আর সেই বিয়ানের শীষও ছােট হবে, দানা শুধু কমই হবে না অপুষ্টও হবে, তাই স্বভাবতই ফসলও কম হবে। সেজন্য যদি বা কোনাে কারণে প্রথম সেচ দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে পরে বেশি সেচ দিয়েও তার ঘাটতি পূরণ করা যায় না। তাই ভালাে ফলন পেতে হলে গমের জমিতে চারটি সেচ দিতে হবে। আর সেগুলি কখন দিতে হবে তার হিসেব নিচে দেওয়া হলাে :
 
(১) মুকুট শিকড় বের হবার সময়, অর্থাৎ বীজ বােনার ২০-২২ দিনের মাথায়।
(২) পাশকাঠি সব বের হওয়ার সময় অর্থাৎ বীজ বপন করার ৪০-৪৫ দিনের মাথায়।
(৩) অধিকাংশ গাছে শীষ বের হলে, অর্থাৎ বীজ বপনের ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে। তবে জলের সরবরাহ কম থাকলে নিচে বর্ণিত পদ্ধতিতে সেচ দিতে হবে। যেমনঃ
(১) একটি সেচ দেওয়ার মতাে জল থাকলে সেই সেচটি মুকুট শিকড় বের হওয়ার সময় দিতে হবে।
(২) দুটি সেচ দেওয়ার মতাে জল থাকলে যে মুকুট শিকড় বের হওয়ার সময় প্রথমবার এবং ফুল আসার সময় দ্বিতীয়বার সেচ দিতে হবে।
(৩) আর যদি তিনটি সেচ দেওয়ার মতাে জল থাকে, তাহলে মুকুট শিকড় বের হওয়ার সময় প্রথমবার, পাশকাঠি বের হওয়ার সময় দ্বিতীয়বার এবং কাঁচা থােড় বা ফুল আসার সময় তৃতীয় বার সেচ দিতে হবে। যাইহােক, জলের যােগান অনুযায়ী নিচের তালিকা অনুসারে যে কোনাে একটি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারলে আকাঙ্ক্ষিত ফসল পাওয়া যেতে পারে।
তালিকা :- 
(1) নং জলের যােগান  মতাে সেচের সংখ্যা  ৫    বীজ বপনের কতােদিন পর পর সেচ দেওয়া দরকার - ২৫, ৪৫, ৬৫, ৮৫, এবং ১০৫ দিন পর পর।
 (2) নং জলের যােগান  মতাে সেচের সংখ্যা  ৪   বীজ বপনের কতােদিন পর পর সেচ দেওয়া দরকার - ২৫, ৪৫, ৮৫, ১০৫ বা ২৫, ৬৫, ৮৫, ১০৫।
(3) নং জলের যােগান  মতাে সেচের সংখ্যা 3  বীজ বপনের কতােদিন পর পর সেচ দেওয়া দরকার -  ২৫, ৬৫ ও ১০৫ দিন পর।
(4)  নং জলের যােগান  মতাে সেচের সংখ্যা  2  বীজ বপনের কতােদিন পর পর সেচ দেওয়া দরকার -  ২৫ ও ৬৫দিন পর।
(5) নং জলের যােগান  মতাে সেচের সংখ্যা 1  বীজ বপনের -  ২৫ দিন পর পর সেচ দেওয়া দরকার। 

জলের ব্যাপারে গম ও ধানের মধ্যে অনেক তফাত। ধানের জমিতে জল জমে থাকা একান্ত প্রয়ােজন। কিন্তু গমের ক্ষেত্রে চাষের জমিতে জল জমে থাকা একেবারেই সহ্য করতে পারে না (তাই এমন ভাবে সেচ দিতে হবে যাতে করে জমিতে জল যেন না দাঁড়ায়। জলের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে গম গাছ হলদে হয়ে যাবে। এর জন্য জমিতে জল জমে থাকলে আল কেটে জল বের করে দিতে হবে। আর বাতাস যদি জোরে বয়, তাহলে তখন গমের জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

(চ) শস্য রক্ষা :-   

গমের সবচেয়ে ক্ষতিকারক রােগ হলাে, মরচে ও আলগা ভুযযারােগ। ভুযােরােগের লক্ষণ হলাে গাছে কালাে শীষ বেরনাে। ভাল শীষ বেরনাের কয়েকদিন আগেই এ ধরনের কালাে শীষ বেরােয়। এই ভুযযা রােগাক্রান্ত শীষ বেরনাে মাত্রই ভিজে কাপড়, ভিজে বস্তা বা কাগজের থলিতে ভরে আলতাে ভাবে কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে যাতে করে সেই শরীরের কোনাে গুড়া অন্য গম গাছে না ছড়ায়, তাহলে সংক্রামক রােগের মতাে ভালাে শীষগুলিও নষ্ট হয়ে যাবে। ভুযযা রােগাক্রান্ত জমির ফসল থেকে কখনাে বীজ সংগ্রহ করবেন না।

গম গাছকে রােগ ও পােকার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিচে কয়েকটি ওষুধ কিভাবে প্রয়ােগ করতে হবে তা দেওয়া হলাে -------Corn crop protection process :

১। বীজ বপনের একমাস পর :-  প্রতি লিটার জলে ২ মিলিমিটার থায়ােডান ৩৫ ই. সি. বা ১/২ মিলিলিটার ডিমেক্রন ৮৫ এস. এল. বা ১ মিলিলিটার ২৫ ই. সি. বা রােগর ৩০ ই. সি. বা মিথাইল প্যারাথিয়ন ৫০ ই. সি. বা ৫ গ্রাম বি-এইচ-সি ৫০ শতাংশ গুলে গমের জমিতে ছিটাতে হবে।
২। বীজ বােনার দুমাস পর  :- উপরােক্ত যে কোনাে একটি কীটনাশক ওষুধ এবং চিটা, ভুষো  ও মরচে রােগ প্রতিরােধের জন্য প্রতি লিটার জলে তিন গ্রাম ডাইথেন জেড-৭৮ বা জিনেব বা ইউনিজেব বা ক্যাপটান ৮৩ শতাংশ বা ডাইথেন এস-৪৫ গুলে গমের জমিতে স্প্রে করতে হবে। প্রতি একরে ৩০০ লিটার জল লাগবে।
৩। ফুল আসার সময় মরচে বা ধসা রােগ দেখা দিলে প্রতি লিটার জলে ২.৫ গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি (ডাইথেন এম-৪৫) বা জিনেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি (ডাইথেন জেড-৭৮) গুলে রােগাক্রান্ত গাছে ছিটাতে হবে। প্রয়ােজনে আরও একবার ওষুধ প্রয়ােগ করা যেতে পারে।
গম গাছে ধান গাছের তুলনায় পােকার উপদ্রব কম হয়। তবে কোনাে কোনাে সময়ে মাজরা পােকা, লেদা পােকা, কাটুই পােকা, ফড়িং ও জাব পােকার আক্রমণ দেখা যায়। শীষ আসার আগে চারটি বা তার বেশি পাশকাঠি মাজ পােকায় আক্রান্ত হতে দেখা গেলে নিচের যে কোনাে একটি ওষুধ দিলে এই সব পােকার বিনাশ ঘটানাে যায় :-

ওষুধের নাম ফসফোমিড়ন ৪০ এস এল।  প্রতি লিটার জলে ওষুধের পরিমাণ ১.৫ মিলিলিটার। প্রতি একর জমির জন্য ওযুধের পরিমাণ (মিলিলিটার) ৪৫০।
ওষুধের নাম  কুইনালফাস ২৫-ই-সি (যেমন - একালান্স ২৫ ইসি, প্রভৃতি)।  প্রতি লিটার জলে ওষুধের পরিমাণ ১.৫ মিলিলিটার।   প্রতি একর জমির জন্য ওযুধের পরিমাণ (মিলিলিটার) ৪৫০।

 ওষুধের নাম এনডাে সালফান ৩৫ ই-সি (যেমন - থায়ােডান ৩৫ই-সি, থায়ােনেক্স ৩৫ ই-সি প্রভৃতি) প্রতি লিটার জলে ওষুধের পরিমাণ ১.৫ (মিলিলিটার)।  প্রতি একর জমির জন্য ওযুধের পরিমাণ (মিলিলিটার)  ৬০০।

(ছ) ফসল কাটা :- 
গমের ফসল কাটার সময় হলাে চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি। গমের শীষগুলি নিচের দিকে হেলে পড়লে বুঝতে হবে গম কাটার উপযােগী হয়ে উঠেছে।দানা পেকে গেলে এবং গমের খড় হলুদ হয়ে গেলে কাস্তে দিয়ে গাছের গােড়ার একটু ওপর থেকে কেটে ফেলতে হবে। তারপর আঁটি বেঁধে মাড়াই-এর জন্য খামারে আনতে হবে। গাছগুলাে কয়েকদিন রােদে শুকিয়ে নিয়ে বলদ দিয়ে মাড়িয়ে বা কাঠের পাটাতনের ওপর পিটিয়ে গমের দানা ছড়ানাে হয়। তবে আজকাল ফসল কাটার যন্ত্র, যথা ‘ওল পাড থ্রেসার’ যন্ত্রের সাহায্যে গম কাটা ও গম ঝাড়াই-এর কাজ খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে যেমন পরিশ্রম কম হয়, তেমনি আবার খরচও কম হয়। গম ঝাড়াই করার পর পরিষ্কার। করে রােদে শুকিয়ে বস্তায় ভরে গােলায় তুলতে হবে। উচ্চফলনশীল গম প্রতি একরে ২০-২৫ কুইন্টাল পর্যন্ত হয়।
 
______________________________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.