Type Here to Get Search Results !

যব চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় ও চাষ পদ্ধতি । Barley cultivation, in Bengali.

যব চাষ। Barley cultivation :

যব আমাদের দেশের দানাজাতীয় শস্যগুলির মধ্যে অন্যতম। খাদ্যশস্য হিসেবে প্রধানত পূর্ব ভারতেই এর বেশি চাষ হয়। এই যৰ চাষ সেই কোন্ আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে। বরে দানার সারির সংখ্যা এবং দানার অবস্থান অনুযায়ী কৃবি-বিজ্ঞানীরা একে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন :
১। হরডিয়াম ভালগেরি :-  এটি ছয় সারির যব, আমাদের দেশে সব জায়গাতেই চাষ হয়।
২। হরডিয়ামডিস্টিংসান :-  এটি দু'সারি দানার যব, আমাদের দেশে এ ধরনের বই বেশ পরিমাণ চাষ হয়।
৩। হরডিয়াম ইরেগুলারি :-  এটিও দুসারি দানার যৰ।


যব চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় ও চাষ পদ্ধতি ।  Barley cultivation, in Bengali.
Image by Bob McEvoy from Pixabay 
এছাড়াও শুড়ের প্রকারভেদে যবকে দুভাগে ভাগ ব্রা হয়। যেমন শুড়যুক্ত যব এবং শুড়বিহীন যব । আমাদের দেশের মােট উৎপাদনের শতকরা সত্তর ভাগ যব উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চল, রাজস্থান ও পাঞ্জাবে জন্মায়।

➤ যব চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় ও চাষ পদ্ধতি।  

Barley cultivation process :

যব চাষের জন্য প্রয়োজনীয়  জলবায়ু :

গমের মতাে যবও শীতকালীন ফসল। তাই শীতের হিমেল আবহাওয়ায় যব চাবের লন ভালাে হয়। যেসব জায়গায় বৃষ্টিপাত কম হয় এবং জলসেচ ব্যবস্থার সুযােগ তেমন না থাকলেও যৰ চাষ আর তেমন ব্যাঘাত কিন্তু বড় একটা হয় না। গমের তুলনায় যব চাষে জলের প্রয়ােজন কম হয়। খরা অঞ্চল হলেও সহ্য করার ক্ষমতা আছে যবের।  তাই ফসল তােলার সময় অসময়ে বৃষ্টি হলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে।

 

যব চাষের জন্য কেমন মাটি প্রয়োজন ?

যবের মাটি হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের হয়। তাই গমের চাষ হয় যে জমিতে, তাতে যবও চাষ করা  যায়। যব চাব করার পক্ষে দোআঁশ মাটির উপযুক্ত। যব চাষের মাটি কম উর্বর হলেও চলবে এবং নােনা ও ক্ষারযুক্ত মাটিতেও যব চাষ করলে বেশ ভালাে ফলনই পাওয়া যায়। তাই যৰ লৰণ সহনশীল শস্য। আমাদের দেশের বেশির ভাগ যবই সিন্ধু ও গঙ্গার পলি মাটি বাহিত অঞ্চলে জন্মায়।

যব চাষের জন্য  জমি তৈরীর উপায় :

জমিতে তিন-চারবার লাঙল দেওয়ার পর মই দিয়ে জমি তৈরী করতে  হবে। মাটি বেশ ঝুরঝুরে করে তৈরী করে নিতে হবে। শেষ চাষের আগে প্রতি একর জমিতে ৮-১০ কেজি ডার্সৰ্বান ১০ শতাংশ গুঁড়াে ওষুধ দিয়ে মাটির সঙ্গে খুব ভালােভাবে মিশিয়ে নিতে হবে, তবেই যব চাষের পক্ষে মাটি উপযুক্ত হবে।

যব চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় ও চাষ পদ্ধতি ।  Barley cultivation, in Bengali.
Image by Christian Bueltemann from Pixabay 

যবের বিভিন্ন জাত :

যবের জাত একটা নয়, অনেক। এর মধ্যে আমাদের পশ্চিমবঙ্গে চাষ করা যায় এমন জাতগুলির নাম হলাে এই রকম ?
বিজয়া, জ্যোতি, রত্ন, আজাদ (কে-১২৫), ডি-এল ৩৬ প্রভৃতি। যব চাষ নিয়ে আমাদের কৃষি-বিজ্ঞানীদের গবেষণার যেন শেষ নেই, তাদের গবেষণার নিরলস প্রচেষ্টায় অধুনা যবের নতুন ধরনের বেশ কয়েকটি ভালাে জাতের যব আবিষ্কার করেছেন। সেগুলি হলাে, করন-২০১, করন-২৩১ এবং করন-২৪৪। এসব জাতের যবে খােসা বড় একটা বাড়ে এবং আড়াই মাস সময়ের মধ্যে এই সব জাতের যব ভালাে সেচ ও সার প্রয়ােগ করে বেশি মাত্রায় ফসল উৎপন্ন করা যাবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। এসব জাতের যব চাষ করতে খুব একটা পরিশ্রম লাগে না, আর সব রকম মাটিতেই চাষ করা যায়। এ শস্য চাষের আর একটা সুবিধে হলাে এই যে, আমন ধান কাটার পর সেই জমিতে এ জাতীয় যবের চাষ খুবই লাভজনক।এ জাতের চারাগুলি শীষের ভারে কখনই নুইয়ে পড়ে না। এর আর একটা বাড়তি সুবিধে হলাে, রােগ পােকার আক্রমণে শস্য কখনাে নষ্ট হয় না। এ সব জাতের যবের দানা বেঁটে ও খুব চকচকে হয়। এসব দানায় প্রােটিন এবং লাইসিনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। আর এই কারণেই খাদ্য হিসেবে এসব জাতের যব খুবই পুষ্টিকর হয়।

যব চাষে বীজ বপনের পদ্ধতিঃ 

১। বীজ বােনা ।
(ক) সেচ এলাকায় : কার্তিক মাসের শেষ পক্ষে ; (খ) অসেচ এলাকায় : কার্তিক মাসের প্রথম পক্ষে।
২। বীজ তৈরী :
বীজ তৈরী করার  জন্য বােনার আগে বীজ একবার জলে ভিজিয়ে নিতে হবে। নােনা ও সেচ এলাকায় বােনার জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়ােজীয়। কারণ ভিজে বীজের অঙ্কুর বেরােতে সুবিধে হয়।

৩। বীজের পরিমাণ নির্ধারণ :
(ক) সেচ এলাকায় প্রতি একরে ৩০ কেজি বীজের প্রয়ােজন। (খ) অসেচ এলাকায় প্রতি একরে ৩৫-৪০ কেজি বীজের প্রয়ােজন। (গ) লবণাক্ত এলাকায় প্রতি একরে ৪০-৪৫ কেজি বীজ দরকার।

৪। কি ভাবে বীজ বুনতে হয় ?
 
আমাদের দেশে অনেক জায়গায় সর্ষে, তিসি, ছােলা, মটর ইত্যাদির রবি শস্যের সঙ্গে যব মিশ্র শস্য হিসেবে চাষ করা হয়। পূর্ব ভারতে যব সাধারণত হাতে ছিটিয়ে বপন করা হয়। বীজ বপনের পর মই দিয়ে বীজগুলিকে ঢেকে দেওয়া হয়। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চল, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে লাঙলের নালিতে বীজ বােনা হয়। আবার বীজ বােনা যন্ত্রের সাহায্যের সারিতে বীজ বােনা যায়। বীজ বােনার একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব আছে, যা বজায় রাখা দরকার। যেমন :-
সেচ এলাকায় বীজের দূরত্ব অনুযায়ী সারির দূরত্ব ২৩ সেমি এবং অসেচ এলাকায় ২৪- ২৫ সেমি।
সেচ এলাকায় বীজের দূরত্ব  বীজের গভীরতা অনুযায়ী ৩.৫ সেমি এবং অসেচ এলাকায় ৫-৬ সেমি।


৫। সার প্রয়ােগ কখন কীভাবে করবেন ?
 
যব অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে জন্মালেও উপযুক্ত পরিমাণে সার প্রয়ােগ করে চাষ করলে যে ফলন পাওয়া যায় তা বেশ লাভজনক হতে পারে।নিচে এলাকা অনুযায়ী কি ধরনের এবং কত পরিমাণ সার দিতে হবে তার একটা তালিকা দেওয়া হলাে :

সেচ এলাকায় একর প্রতি উদ্ভিদ খাদ্যের পরিমান নাইট্রোজেন ১৫ কেজি, ফসফরাস ৯ কেজি এবং পটাশিয়াম  ৯ কেজি। অসেচ  এলাকায় একর প্রতি উদ্ভিদ খাদ্যের পরিমান নাইট্রোজেন ৯ কেজি, ফসফরাস ৯ কেজি এবং পটাশিয়াম  ৯ কেজি।
সেচ এলাকায় শেষ চাষের আগে সমস্ত ফসফরাস ও পটাশিয়াম এবং অর্ধেক নাইট্রোজেন ; আর অসেচ এলাকায় সমস্ত নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম দিতে হবে। সেচ এলাকায় অবশিষ্ট অর্ধেক নাইট্রোজেন প্রথম সেচ দেওয়ার সময় চাপান সার হিসেবে দিতে হবে।

যব চাষের জমিতে  পরিচর্যা :

যব চাষের জমিতে সাধারণত কোনাে নিড়েন দেওয়া হয় না। তবে যে জমিতে আগাছা বেশি জন্মায় সেক্ষেত্রে নিড়েন দিয়ে সেই সব আগাছা তুলে ফেলতে হবে। সেচ এলাকায় বেশি আগাছার উপদ্রব দেখা যায়। বীজ বােনার ৪০-৪৫ দিন পরে  আগাছা নাশক ওষুধ (যেমন ২.৪ ডি, পরিমাণ ও প্রতি একরে ৩০০ গ্রাম) প্রয়ােগ করে সাফল্যের সঙ্গে আগাছা সাফ করা যায়।

জলসেচ পদ্ধতি :

আগেই বলা হয়েছে, সেচ ছাড়াও যব চাষ করা যায়। জমির রস গম চাষের পক্ষে অপর্যাপ্ত হলে সেই জমিতে যব চাষ করা যেতে পারে। তবে সেচ দিয়ে যব চাষ করলে ফসল ভালাে ভােলা যায়। মাটির প্রকার অনুসারে জলসেচের সংখ্যা নির্ভর করে।যব চাষের মাঠে তিন-চারটে সেচ দিতে পারলে ফসল ভালাে ফলানাে যেতে পারে। এর মধ্যে বিয়ান ছাড়ার সময় একটি (বীজ বােনার ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে) সেচ অবশ্যই দিতে হবে।

শস্যরক্ষার করণীয় উপায় :

যব চাষের প্রধান শত্রু হলাে জাব পােকা, মাজরা পােকা, ভুষোরােগ ও মরচে রােগ (হলদে ও বাদামী রঙের হয়ে থাকে)।ভুষোরােগের লক্ষণ হলাে গাছে কালাে শীষ বেরনাে। ভাল শীষ বেরনাের কয়েকদিন আগেই এ ধরনের কালাে শীষ বেরােয়। এই ভুষো  রােগাক্রান্ত শীষ বেরনাে মাত্রই ভিজে কাপড়, ভিজে বস্তা বা কাগজের থলিতে ভরে আলতাে ভাবে কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে যাতে করে সেই শরীরের কোনাে গুড়া অন্য যব গাছে না ছড়ায়, তাহলে সংক্রামক রােগের মতাে ভালাে শীষগুলিও নষ্ট হয়ে যাবে। ভুষো রােগাক্রান্ত জমির ফসল থেকে কখনাে বীজ সংগ্রহ করবেন না।   গাছকে রােগ ও পােকার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিচে কয়েকটি ওষুধ কিভাবে প্রয়ােগ করতে হবে তা দেওয়া হলাে -----

১। বীজ বপনের একমাস পর :-  প্রতি লিটার জলে ২ মিলিমিটার থায়ােডান ৩৫ ই. সি. বা ১/২ মিলিলিটার ডিমেক্রন ৮৫ এস. এল. বা ১ মিলিলিটার ২৫ ই. সি. বা রােগর ৩০ ই. সি. বা মিথাইল প্যারাথিয়ন ৫০ ই. সি. বা ৫ গ্রাম বি-এইচ-সি ৫০ শতাংশ গুলে যবের জমিতে ছিটাতে হবে।
 
২। বীজ বােনার দুমাস পর :- উপরােক্ত যে কোনাে একটি কীটনাশক ওষুধ এবং চিটা, ভুষো  ও মরচে রােগ প্রতিরােধের জন্য প্রতি লিটার জলে তিন গ্রাম ডাইথেন জেড-৭৮ বা জিনেব বা ইউনিজেব বা ক্যাপটান ৮৩ শতাংশ বা ডাইথেন এস-৪৫ গুলে গমের জমিতে স্প্রে করতে হবে। প্রতি একরে ৩০০ লিটার জল লাগবে।

৩। ফুল আসার সময় মরচে বা ধসা রােগ দেখা দিলে প্রতি লিটার জলে ২.৫ গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি (ডাইথেন এম-৪৫) বা জিনেব ৭৫ শতাংশ ডব্লিউ-পি (ডাইথেন জেড-৭৮) গুলে রােগাক্রান্ত গাছে ছিটতে হবে। প্রয়ােজনে আরও একবার ওষুধ প্রয়ােগ করা যেতে পারে। 
 
তবে কোনাে কোনাে সময়ে মাজরা পােকা, লেদা পােকা, কাটুই পােকা, ফড়িং ও জাব পােকার আক্রমণ দেখা যায়। শীষ আসার আগে চারটি বা তার বেশি পাশকাঠি মাজ পােকায় আক্রান্ত হতে দেখা গেলে নিচের যে কোনাে একটি ওষুধ দিলে এই সব পােকার বিনাশ ঘটানাে যায় :- 

ওষুধের নাম - ফসফোমিড়ন ৪০ এস এল (যেমন - সুমডন প্রভৃতি) ।  প্রতি লিটার জলে ওষুধের  পরিমাণ  ১.৫  মিলিলিটার। প্রতি একর জমির জন্য ওষুধের পরিমাণ ৪৫০ মিলিলিটার। 
 
ওষুধের নাম - কুইনালফাস ২৫-ই-সি (যেমন - একালান্স ২৫ ইসি, প্রভৃতি )। প্রতি লিটার জলে ওযুধের পরিমাণ  ১.৫  মিলিলিটার।   প্রতি একর জমির জন্য ওষুধের পরিমাণ ৪৫০ মিলিলিটার। 
 
ওষুধের নাম - এনডাে সালফান ৩৫ ই-সি (যেমন - থায়ােডান ৩৫ই-সি, থায়ােনেক্স ৩৫ ই-সি প্রভৃতি )। প্রতি লিটার জলে ওযুধের পরিমাণ ২  মিলিলিটার। প্রতি একর জমির জন্য ওষুধের পরিমাণ ৬০০  মিলিলিটার। 
 

ফসল তোলার পদ্ধতিঃ 

গমের চেয়ে যব ১৫-২০ দিন আগেতোলার উপযােগী হয়। আমাদের দেশে ফাল্গুন মাসের গােড়াতেই যবের ফসল কাটার উপযুক্ত সময়। গমের মতােই ফসল কেটে রােদের তাপে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর ঝাড়াই করে গােলায় রাখতে হবে।

ফলন  :

প্রতি একর যব ফলন হয় তিন-চার কুইন্টাল। তবে এখানে বলে রাখা দরকার, সেচ ও সার দিয়ে চাষ করলে প্রতি একরে ৮ থেকে ১০ কুইন্টাল পর্যন্ত ফসল ফলানাে যায়। শুধু শস্য ফসল নয়, একর প্রতি ১৫-২০ কুইন্টাল খড়ও পাওয়া যায়, যা ফসল ব্যতিরেকে উপরি পাওনা বলা যায়।

আমাদের এই website-এ প্রবেশ করার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আমরা এই ওয়েবসাইট -এর মাধ্যমে সমস্ত শাক-সবজি, ফসল চাষ এবং চাষবাস এর সবরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা ও পোস্ট করে থাকি। আমাদের এই পোষ্টটি ভালোলাগলে আমাদের ওয়েবসাইট (চাষবাস-বারোমাস)-টিকে Follow করতে পারেন।পারলে আপনারা LIKE ও SHARE করবেন। আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। ধ্যন্যবাদ।

 
___________________________________________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.