Type Here to Get Search Results !

শ্রী পদ্ধতি চাষ কী এবং এর সুবিধা গুলি কীকী ? Sri Method Farming

শ্রী পদ্ধতিতে চাষ :


শ্ৰী (SRI) নামক ধান চাষের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন হওয়ায় এটা প্রমানিত হয়েছে যে ধানের জমিতে সব সময় জল ধরে রাখার কোন প্রয়ােজন নেই, কেবল জমি ভেজা ভেজা থাকলেই যথেষ্ট। এই পদ্ধতিতে ৩০-৫০% পর্যন্ত সেচের জলের সাশ্রয় সম্ভব। এছাড়া এই পদ্ধতিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈবসারের ব্যবহারে বেশি গুরুত্ব দিতে হয় এবং এর ফলে মাটির স্বাস্থ্য যেমন রক্ষা করা যায়, পরিবেশও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়।

শ্রী পদ্ধতি চাষ কী এবং এর সুবিধা গুলি কীকী ? Sri Method Farming


➤ শ্রী পদ্ধতি চাষ কী এবং এর সুবিধা গুলি কীকী তা জানুন।


‘শ্রী’ বা এস. আর. আই. (System of Rice Intensification) ধান চাষ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন হেনরী ডি লাওলানি নামক একজন ফরাসী ধর্মযাজক। তিনি ফ্রান্স থেকে ১৯৬১ সালে মাদাগাসকারে (আফ্রিকা মহাদেশের পাশে ভারত মহাসাগরের উপকূলে একটি ছােট্ট দ্বীপ) আসেন এবং একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ভাত যেহেতু মাদাগাসকারের বাসিন্দাদের প্রধান খাদ্য তাই তিনি ধানের ফলন কিভাবে বাড়ানাে যায় সে বিষয়ে দীর্ঘ পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে ১৯৮৩ সালে তিনি এস. আর. আই. পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন। তবে ১৯৯০ সালের আগে পর্যন্ত প্রচারের অভাবে মাদাগাসকারের চাষীদের মধ্যে এই চাষ পদ্ধতি ততটা গ্রহণযােগ্যতা পায়নি। ১৯৯৭ সালে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এই চাষ পদ্ধতি প্রকাশিত হওয়ায় বিশ্বের মানুষ এই চাষ পদ্ধতি সম্বন্ধে অবগত হয়।

শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষ নিয়ে চিন, ইন্দোনেশিয়া, কম্বােডিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে এবং স্বল্প খরচে ধানের অধিক ফলন পাওয়া যাচ্ছে। ভারতবর্ষে অন্ধ্রেপ্রদেশই একমাত্র রাজ্য যেখানে ২০০৩ সালের খরিফ মরসুমে রাজ্যের ২২টি জেলাতেই পরীক্ষামূলকভাবে এস.আর.আই. পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হয় এবং চাষীরা সেচের জল প্রায় অর্ধেক ব্যবহার করেও যথেষ্ট লাভজনক ফলন লাভ করেন। বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, ঝাড়খন্ড, গুজরাট, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে এই পদ্ধতিতে ধান চাষের দ্রুত প্রসার ঘটছে।

এস.আর.আই. (
শ্রী) পদ্ধতিতে ধান চাষের সুবিধা গুলি।

  • এই চাষ পরিবেশবান্ধব। এই পদ্ধতিতে অধিক জৈব সার যেমন ব্যবহৃত হয়, জমিতে জল ধরে রাখা হয় না। তাই মাটির স্বাস্থ্য যেমন ঠিক থাকে পাশাপাশি মাটিতে অক্সিজেনের অভাব ঘটে না। এর ফলে উপকারী জীবাণুদের বংশবৃদ্ধি ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।                                                                                                          
  • এই পদ্ধতি তে  একর প্রতি ২-২.৫ কেজি বীজ লাগে, অপর দিকে প্রচলিত পদ্ধতিতে একর প্রতি ২৫-৩০ কেজি বীজ ব্যবহৃত হয়। কম বীজ ব্যবহার করেও এস.আর.আই.পদ্ধতিত সঠিকভাবে প্রয়ােগ করা গেলে প্রচলিত পদ্ধতির চাইতে অনায়াসে ৩০-৫০ শতাংশ অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব।                                                                 
  • চাষীভাইরা যে পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করে থাকেন সেই তুলনায় অন্ততঃ ১/৪ অংশ সার কম প্রয়ােজন হয়। তবে এক্ষেত্রে জৈবসার বেশি ব্যবহার করে রাসায়নিক সারের পরিমাণ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমানাে যায়।                                                                                                                                                          
  • প্রচলিত পদ্ধতির চাইতে সেচের জল এই পদ্ধতিতে ৩০-৫০ শতাংশ কম প্রয়ােজন হয়। তাই যে সব এলাকায় সেচের জলের অভাব আছে সেখানে এই পদ্ধতি বিশেষ কার্যকরী।                                                                            
  • প্রচলিত পদ্ধতিতে ধান চাষে জমিতে সব সময় জল ধরে রাখা হয়, এর ফলে ক্ষতিকারক মিথেন গ্যাস ধানের জমি থেকে নির্গত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। এই মিথেন গ্যাস বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রায় বৃদ্ধি ঘটায়। অপরদিকে এস.আর.আই. পদ্ধতিতে জমিতে যেহেতু জল ধরে রাখা হয় না তাই এই সমস্যা এক্ষেত্রে নেই বললেই চলে।


  • প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষ করতে গিয়ে ভূগর্ভস্থ জল অধিক মাত্রায় তুলে নেওয়া হয়, আর এর ফলস্বরূপ আর্সেনিকের প্রকোপ বাড়ছে। এস.আর.আই. পদ্ধতিতে যেহেতু সেচের জল অনেক কম প্রয়ােজন হয় তাই এই সমস্যা অনেক কম।


  • এস.আর.আই. পদ্ধতিতে ধানগাছের শিকড় জল ও খাদ্য উপাদান গ্রহণ করতে অনেক গভীরেই শুধু প্রবেশ করে তাই নয়, গুচ্ছাকারে অনেক বেশী আয়তনে বিস্তৃতি লাভ করে। এই শিকড় অনেক বেশীদিন সজীব থাকে এবং ধান গাছ সহজেই মুখ্য, গৌন ও অণুখাদ্য গ্রহণ করে সঠিকভাবে বৃদ্ধি লাভ করে ও অধিক ফলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে গাছ ঝড় বৃষ্টিতেও সহজে পড়ে যায় না।


  • এই পদ্ধতিতে রােয়া ধান প্রচলিত পদ্ধতির চাইতে বেশী ঠান্ডা সহ্য করতে পারে।
  • যেহেতু এস.আর.আই. পদ্ধতিতে ধানের চারা অধিক দূরত্বে রােপণ করা হয় তাই প্রতিটি। ধানগাছ অধিক পরিমাণে আলাে ও বাতাস পেয়ে সুস্থ ও সবলভাবে বেড়ে ওঠে এবং এর ফলে রােগ-পােকার আক্রমণ কম হয়। আর রােগ পােকার উপদ্রব কম হওয়ায় রােগনাশক বা কীটনাশকের জন্য খরচ নেই বললেই চলে।


  • এস.আর.আই. পদ্ধতিতে ধানগাছের শিকড় শ্বসনের জন্য প্রয়ােজনীয় অক্সিজেন সহজেই লাভ করে যা যথেষ্ট সংখ্যক পাশকাঠি ও শিকড়ের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। অপরদিকে প্রচলিত পদ্ধতিতে যেহেতু জমিতে সবসময় জল ধরে রাখা হয় তাই শ্বসনের জন্য প্রয়ােজনীয় অক্সিজেনের ঘাটতি হয় এবং এর ফলে শিকড় ও পাশকাঠির বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় না।


  • এস.আর.আই পদ্ধতিতে আগাছা তুলে বাইরে ফেলে না দিয়ে কোনাে প্যাডি উইডার’ এর মাধ্যমে আগাছা ধানের জমিতেই মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে উল্লেখযােগ্য পরিমাণে জৈব পদার্থ মাটিতে যুক্ত হয়, যা পরবর্তীকালে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হয়। 


  • এস.আর.আই. পদ্ধতিতে ফসল প্রচলিত পদ্ধতির ৭-১০ দিন আগে পরিপক্কতা লাভ করে। এর ফলে পরবর্তী ফসল সঠিক সময়ে বপন বা রােপণ করা সম্ভব হয়।
  • এক্ষেত্রে প্রতি বর্গ মিটারে শীষ যুক্ত পাশকাঠির সংখ্যা, প্রতি শীষে পুষ্ট দানার সংখ্যা ও দানার ওজন বেশী হওয়ায় প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় বাড়তি ফলন পাওয়া যায়।


  • এক্ষেত্রে দানার ফলন বৃদ্ধি ছাড়াও খড়ের ফলন বেশী হয়।
  • এই পদ্ধতিতে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় উন্নত মানের বীজ তৈরী করা যায়।

 

_____________________________________________________________________________


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.