সংকর ধানের চাষের পদ্ধতি।
সংকর ধানের চাষের পদ্ধতিতে আগে যে ধাপগুলি দেওয়া হয়েছিল তার পরবর্তী ধাপ গুলি এখানে দেওয়া হলো।এই চাষটি ভালভাবে জানতে হলে সম্পূর্ণ পদ্ধতি অবশ্যই জানতে হবে। তা নাহলে কিছুই জানা সম্ভবপর নয়।আসুন জেনে নেওয়া যাক।
বীজতলায় রােগ ও পােকা নিয়ন্ত্রণ :-
টুংরাে রােগ প্রবণ এলাকায় ঐ রােগের আক্রমণ প্রতিরােধ করার জন্য বীজ বােনার ১৮-২৫ দিনের মধ্যে বীজতলায় প্রতিরােধককীটনাশক প্রয়োগকরতেহবে।
অথবা
কীটনাশক ফোরেট ১০ জি (দানা) ১৫ কাঠা বীজতলার জন্য ১.৫ কেজি , ২ কাঠা বীজতলার জন্য ২০০ গ্রাম।
অথবা
কীটনাশক ফসফামিডন ৪০ ইসি, (তরল) ১৫ কাঠা বীজতলার জন্য ২ মিলি/লি. জলে, ২ কাঠা বীজ তলার জন্য ২ মিলি/লি, জলে।
অথবা
কীটনাশক মনােক্ৰটোফস ৩৬ ইসি (তরল) ১৫ কাঠা বীজতলার জন্য ২ মিলি/লি. জলে, ২ কাঠা বীজতলার জন্য ২ মিলি/লি, জলে দানাদার ওষুধ ব্যবহারের পর থেকে বীজতলাতে ৫-৬ দিন জল ধরে রাখতে হবে, বীজতলা শুকনাে থাকা চলবে না। তরল ওষুধ স্প্রে করলে, ১৫ কাঠা বা ২ কাঠা বীজতলার জন্য যথাক্রমে ৭৫ লিটার বা ১০ লিটার ওষুধ গােলা জল লাগবে। টুংরাে রােগ প্রবণ এলাকায়, মূলজমিতে প্রধানতঃ মাজরা পােকা প্রতিরােধ করার জন্য চারা তােলার ৭ দিন আগে বীজতলায় ১৫ বা ২ কাঠাতে যথাক্রমে ১.৮ কেজি বা ২৪০ গ্রাম কারটাপ ৪ জি (দানা) কীটনাশক প্রয়ােগ করতে হবে। বীজতলায় চারা তােলার ৭ দিন আগে প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম কার্বেণ্ডাজিম ৫০% মিশিয়ে স্প্রে করলে মূলজমিতে ধানগাছকে ঝলসা (ব্লাস্ট) রােগের আক্রমণ থেকে অনেকটা রক্ষা করা যায়।
রােপনের জন্য চারা গাছের বয়স :
৩৫-৪২ দিনের পাশকাঠি যুক্ত চারা যেখানে প্রতি চারাগাছের মূল কাণ্ডে ৪-৫ টি পাতা থাকবে।
* জমি কীভাবে তৈরী করবেন :-
পরিমান মতাে পচা গােবরসার প্রয়ােগ করে ৫-৭ দিন ধরে জমিতে ৫-৭ সেমি জল ধরে রাখার পর ৩-৪ টি চাষ দিয়ে অন্ততঃ একবার মই দিতে হবে। পরে আরও ৫-৭ দিন ধরে ৫-৭ সেমি. জল জমিতে ধরে রাখার পর (এই সময় জমির আগাছা ও অন্যান্য জৈব বস্তু ভালভাবে পচে যায়) ২-৩টি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল করতে হবে (এই শেষ চাষের আগে পরিমানমতাে রাসায়নিক সার প্রয়ােগ করতে হবে)। জমিতে কাদার গভীরতা ১০-১২ সেমি. হওয়া প্রয়ােজন।
জৈব সার প্রয়ােগ :-
গােবর সার কম্পােষ্ট প্রথম চাষের আগে প্রয়ােগ করতে হবে। ১ হেক্টর জমির জন্য - ১০০-১৫০ কুইন্টাল এবং ১ বিঘা জমির জন্য ১৩ -২০ কুইন্টাল।
রাসায়নিক সার প্রয়ােগ :-
খাদ্য উপাদান ১ হেক্টর জমির জন্য পরিমান নাইট্রোজেন ১২০ কেজি, ফসফরাস ৬০ কেজি, পটাশ ৬০ কেজি,
সার প্রয়ােগের সময়:-
শেষ চাষের আগে রাসায়নিক সার ইউরিয়া ১ হেক্টর জমির জন্য ৬৪ কেজি এবং ১ বিঘা জমির জন্য ৮.৭ কেজি।
সিঙ্গল সুপার ফসফেট ১ হেক্টর জমির জন্য ৩৭৫ কেজি এবং ১ বিঘা জমির জন্য ৫০ কেজি।
মিউরিয়েট অব পটাশ ১ হেক্টর জমির জন্য ১০০ কেজি এবং ১ বিঘা জমির জন্য ১৩.৩ কেজি।
মিউরিয়েট অব পটাশ ১ হেক্টর জমির জন্য ১০০ কেজি এবং ১ বিঘা জমির জন্য ১৩.৩ কেজি।
রােয়ার ১৫ দিন পর ইউরিয়া (প্রথম চাপান) ইউরিয়া ১ হেক্টর জমির জন্য ১৩০ কেজি এবং ১ বিঘা জমির জন্য ১৭.৪ কেজি।
শীষ মুকুল আসার শুরুতে (দ্বিতীয় চাপান) ইউরিয়া ১ হেক্টর জমির জন্য ৬৫ কেজি এবং ১ বিঘা জমির জন্য ৮.৭ কেজি।
শীষ মুকুল আসার শুরুতে (দ্বিতীয় চাপান) ইউরিয়া ১ হেক্টর জমির জন্য ৬৫ কেজি এবং ১ বিঘা জমির জন্য ৮.৭ কেজি।
ব্রিদ্রঃ-
প্রথম বা দ্বিতীয় চাপান হিসাবে ইউরিয়া প্রয়ােগ করার সময় জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকা চলবে না। ইউরিয়া প্রয়ােগের ৪৮ ঘন্টা পরে জমিতে জল দিতে হবে। প্রথম চাপান। দেবার পর ইউরিয়াকে মাটির কাদার সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তবে দ্বিতীয় চাপান দেবার পর জমিতে মাটি ঘেটে দেওয়ার প্রয়ােজন নেই।
মাটিতে জিঙ্ক অণুখাদ্যের অভাব থাকলে (প্রতি গ্রাম মাটিতে ০.৮৬ মাইক্রোগ্রাম জিঙ্ক থাকবে)। প্রতি হেক্টর বা প্রতি বিঘা জমিতে যথাক্রমে ২৫ কেজি বা ৩.৩৩ কেজি জিঙ্ক সালফেট মূলসারের সঙ্গে জমিতে প্রয়ােগ করতে হবে।
রােপনের সময় :-
সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জানুয়ারী মাসের মধ্যে চারাগাছ রােপন শেষ করতে হবে রােপনের সময় এমনভাবে ঠিক করতে হবে যেন ফুল আসা বা দানাপুষ্ট হবার সময় পরিবেশের উষ্ণতা ২৩-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। ঐ সময় উষ্ণতা ৩৫° সেলসিয়াসের বেশী হলে ধান চিটে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চারার বয়স :- ৩৫ -৪২ দিন (৪-৫ টি পাতাযুক্ত চারাগাছ)
*গুছি প্ৰতি চারার সংখ্যা :- ১- ২ টি
রােপনের দূরত্ব :- ১৫ সেমি. (৬ ইঞ্চি) x ১৫ সেমি (৬ ইঞ্চি)
*ফাঁক পূরণ :- রােয়ার ১০ দিনের মধ্যে ফাঁক পূরণ করতে হবে
*আগাছা নিয়ন্ত্রণ :- হাত দিয়ে ২ বার, রােয়ার ১৫ ও ৩০ দিন পর অথবা
রাসায়নিক পদ্ধতিঃ- বিউটাক্লোর (৫০ ইসি) ৩লি ৭৫০ লি জলে মিশিয়ে সেই দ্রবণ প্রতি হেক্টর জমিতে রােপনের ৫-৭ দিনের মধ্যে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার সময় জমিতে জল জমে থাকা চলবে না। ছিপছিপে জল থাকতে হবে। প্রতি বিঘা জমির জন্য ঐ আগাছানাশকের ৪০০ মিলি, ১০০ লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
জলসেচ :-
রােপনের সময় ছিপছিপে জল থাকা প্রয়ােজন।
রােপনের পর :-
রােপনের ২ দিন পর থেকে কার্যকরী পাশকাঠি বেরােনাের সময় অর্থাৎ রােয়ার ১০ থেকে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত ছিপছিপে জল থাকা প্রয়ােজন। পরে আরও ৭-১০ দিন ধরে ৪-৫ সেমি. জল ধরে রাখতে হবে। পরে ৪-৫ দিনের জন্য জল দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে অর্থাৎ এই সময় জমির মাটি ভেজা অবস্থায় রাখতে হবে, তাতে অকার্যকরী পাশকাঠির জন্মানাে অনেকটা রােধ করা যায়।
ব্রিদ্রঃ :- শীষ মুকুলের সূচনা থেকে দানা পুষ্ট হওয়া পর্যন্ত ধাপগুলি দেখতে হলে পরবর্তী পোস্ট অবশ্যই দেখুন তাহলেই সফলতা পাবেন।
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....