কলাই ডাল চাষ পদ্ধতি। Cultivation of pulses :
ডালশস্যের মধ্যে কলাই অন্যতম। খাদ্যের নিরীখে এর ডাল বেশ সুস্বাদু এবং পুষ্টিকরও বটে। ভারতের পূর্ব প্রান্তে প্রধানত ডাল ও পশুখাদ্যের প্রয়ােজনেই এর চাষ হয়ে থাকে। সবুজ সার হিসেবেও কলাই চাষ করা যায়। এই ডালে শতকরা ৫৬,৫ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ২৪ ভাগ প্রােটিন, ৪.২ ভাগ আঁশ, ৩,৫ ভাগ খনিজ পদার্থ, ১.৩ ভাগ ফ্যাট এবং ১০.৫ ভাগ জল থাকে। সম্ভবত আমাদের দেশই কলাইয়ের উৎপত্তিস্থল। ভারতের প্রায় সব কটি রাজ্যে এর চাষ হয়ে থাকে।
![]() |
কলাই ডাল চাষে উপযুক্ত মাটি ।
প্রায় সব রকম মাটিতেই এর চাষ হয়। তবে দোঁয়াশ ও বেলে দোঁয়াশ মাটি কলাই চাষের পক্ষে সবচেয়ে বেশি উপযােগী। জমা জলে কলাই শস্য চাষ ভাল হয় না। তাই জমিতে জল নিকাশের ভাল ব্যবস্থা থাকা দরকার।
কলাই ডাল চাষে জমি তৈরীর পদ্ধতি ।
দু-তিনবার লাঙল চালিয়ে ও মই দিয়ে মাটি তৈরী করলে সে মাটি কলাই শস্য বােনার পক্ষে খুবই উপযােগী হয়। জমি তৈরী করার সময় ৭-৮ গাড়ি গােবর বা আবর্জনা সার মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে।
কলাই ডাল চাষে বীজ বােনার নিয়ম।
(১) বীজ বােনার সময় :- চৈত্র ও জ্যৈষ্ঠ - আষাঢ় মাসে এর বীজ বুনতে হয়।
(২) বীজ শােধনঃ- ছােলার মতাে বীজ শােধন করে নিয়ে বীজের সঙ্গে জীবাণু সার মিশিয়ে বীজ বপন করা উচিত।
(৩) বীজের পরিমাণ :- প্রতি একরে ৭-৮ কেজি, বীজের প্রয়ােজন হয়।
(৪) বীজ বােনার পদ্ধতিঃ- বীজ সাধারণত হাতে ছিটিয়ে বােনা হয়। অবশ্য সারিতেও বীজ বােনা যায় । সারিতে বুনলে দুটি সারির মধ্যে ব্যবধান হওয়া উচিত এক ফুট (৩০ সেমি)।
কলাই ডাল চাষে সার প্রয়ােগ পদ্ধতি ।
সার ছাড়া ভাল ফলন আশা করা যায় না। তাই এর জন্যে চাই প্রতি একরে ৮ কেজি নাইট্রোজেন, ১৬ কেজি ফসফরাস, এবং ৮ কেজি পটাশিয়াম প্রয়ােগ করতে হবে। এছাড়াও ২০ কেজি অ্যামােনিয়াম বা ৯ কেজি ইউরিয়া, ১০০ কেজি সুপার ফসফেট ও ১৬ কেজি মিউরিয়েট অব পটাশ প্রয়ােগ করতে হবে।
কলাই ডাল চাষে পরিচর্যা ।
কলাই চাষের জমিতে নিড়েন দেওয়ার প্রয়ােজন হয় না। কলাই চাষের জমিতে আগাছা অর্থাৎ ঘাস জন্মালে ভালভাবে বাড়তে পারে না, কারণ কলাই গাছকে ঘাস চাপা দিয়ে রাখে। তবে গাছ ৭-৮ সেমি, বাড়লে প্রথমবার ও বীজ বােনার ৪৫ দিন পর দ্বিতীয় বার নিড়েন দিলে ভাল ফলন লাভ করা যায়।
কলাই ডাল চাষে সেচ পদ্ধতি।
কলাই ভারতের পূর্ব প্রান্তে বর্ষার মরশুমে বৃষ্টির জলেই চাষ হয়ে থাকে। সময় মতাে বৃষ্টি না হলে বা জমিতে রসের অভাব ঘটলে জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে। বীজে বােনার সময় জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ জল না থাকলে জলসেচ দিয়ে মাটি সরস করে বীজ বুনতে হবে।
কলাই ডালের বিভিন্ন প্রকার জাত ।
কলাইয়ের কয়েকটি জাতের মধ্যে অন্যতম হলাে - বি-৭৬, টি-৯, পি.এস-১, মাস-৩৬, ৪৮ গৌতম, সারদা (ডব্লিউ-বি-ইউ-১০৮), ইউ-২১৯, বি-আর- ৬৪, পি.ইউ,৩০, নবীন ইত্যাদি। এ সবের মধ্যে বি-৭৬ জাতটি খারিফ ও গ্রীষ্মকালে বােনা চলে। ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে ফসল পেকে কাটার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। টি-৯ জাতটির শুটিগুলি ছােট ছােট রােমে ঢাকা থাকে। এই বীজের রঙ কালাে। এর ফসল পাকে ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে। দানা মাঝারী আকারের এবং এর রঙ কালাে হয়।
ফসল কাটার পদ্ধতি।
বীজ বােনার ৮০-৯০ দিনের মধ্যে ফসল কাটার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। গাছের পাতা হলদে হলে এবং শুটি পেকে গেলে ফসল কেটে ফেলতে হবে। তারপর গাছগুলােকে রােদে ভালভাবে শুকিয়ে নিতে হবে এবং তখন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা গরু দিয়ে মাড়িয়ে দানা আলাদা করে নিতে হবে। আলাদা করা দানা কুলােয় নেড়ে চেড়ে পরিষ্কার করে নিয়ে রােদে দু-চার দিন শুকিয়ে গােলায় তুলতে হবে।
ফলন :- প্রতি একরে ৩-৪ কুইন্টাল ফলন হবে।
কলাই ডালের ব্যবহার।
(১) কলাইয়ের ডাল পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। কলাই সিদ্ধ করেও খাওয়া হয়, খেতে খুবই সুস্বাদু হয়।
(২) কলাই গাছ, কলাইয়ের খােসা ও ভাঙা কলাই গবাদি পশুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(৩) সবুজ সার করার জন্যেও কলাই চাষ করা হয়।
(৪) কলাই চাষ করলে জমির উর্বরতা বেড়ে যায়।
(৫) শুকনাে কলাই গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
_____________________________________________________________________________
If you have any doubts or questions, please let me know.... যদি আপনার কোনও সন্দেহ বা প্রশ্ন থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানান.....